নিয়মিত শারীরচর্চা নানা রোগের হাত থেকে শরীরকে মুক্তি দেয়। —প্রতীকী চিত্র।
‘এক দুই তিন, চনমনে দিন...’
নিয়মিত শারীরচর্চা নানা রোগের হাত থেকে শরীরকে মুক্তি দেয়। পেশায় চিকিৎসক ডা. ঈশান সেই পরামর্শই রোগীদের দিয়ে থাকেন। তবে দৈনন্দিন ব্যস্ত রুটিনে নিজের জন্য খুব বেশি সময় বার করতে পারেন না ডাক্তারবাবু নিজেই। এই সমস্যা অবশ্য ঈশানের একার নয়। আজকের ব্যস্ত জীবনযাপনে সময়ের সমস্যা অনেকেরই। অন্য দিকে অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনে বাড়তি ওজন আর ফিটনেসের সমস্যাও রয়েছে। সমাধানের সহজ উপায় দিলেন ফিটনেস বিশেষজ্ঞ গুরুপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়।
সময় বাঁচাতে টাবাটা এক্সারসাইজ়় সবচেয়ে ভাল উপায়। এটি এক ধরনের হাই ইনটেনসিটি ইন্টারভ্যাল ট্রেনিং। ১৯৯৬ সালে টোকিয়োর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ফিটনেস অ্যান্ড স্পোর্টসের গবেষক ডা. ইজ়ুমি টাবাটা এবং তাঁর সহকারীরা এই বিশেষ এক্সারসাইজ়় পদ্ধতি আবিষ্কার করেছিলেন। তাঁর নাম থেকেই এই শারীরচর্চার নামকরণ করা হয় টাবাটা। হাই-ইনটেনসিটি এই ট্রেনিং এরোবিক এবং নন এরোবিক দুই পদ্ধতিতেই কার্যকর।
টাবাটার নিয়মকানুন
হাই ইনটেনসিটি ইন্টারভ্যাল শারীরচর্চার প্রথম ধাপ হল টাবাটা এক্সারসাইজ়়। এটা খুব কঠিন না হলেও, এর কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। ২০ সেকেন্ড হাই ইনটেনসিটি শারীরচর্চার পর ১০ সেকেন্ডে বিশ্রাম খুবই জরুরি। তবে খেয়াল রাখতে হবে, শারীরচর্চা ২০ সেকেন্ডের বেশি এবং বিশ্রামের সময় ১০ সেকেন্ডের কম যেন একেবারেই না হয়। ২০ সেকেন্ড করে এ ক্ষেত্রে মোট আটটি হাই ইনটেনসিটি ব্যায়াম করা হয়। শরীরের উপরের অংশ, নিম্নাংশ অর্থাৎ হাত, পা এবং পেটের ব্যায়ামের দিকেই মূলত নজর দেওয়া হয়। প্রাথমিক ভাবে ২০ সেকেন্ড শারীরচর্চা এবং ১০ সেকেন্ড বিশ্রাম পদ্ধতি অনুসরণ করে আটটি ব্যায়াম সারতে সময় লাগে মোট চার থেকে পাঁচ মিনিট। চাইলে অবশ্য এই আট সেটের ব্যায়ামটি রিপিটেশনেও করা যায়। পরের দিকে অবশ্য ব্যক্তির ক্ষমতাবিশেষে সময় বাড়ানো যেতে পারে।
কী করবেন?
সাধারণত এই ২০ সেকেন্ডের ওয়ার্কআউটে কী কী ধরনের ব্যায়াম করতে হবে, তার কোনও নির্দিষ্ট নিয়ম নেই। স্কোয়াট, পুশ-আপ, বার্পি, প্ল্যাঙ্ক, বাইসাইকেল টুইস্ট, জাম্পিং জ্যাক, সিট-আপ ইত্যাদি কার্ডিয়োভাসকুলার ফিটনেস এবং পেশির শক্তি বৃদ্ধি করতে পারে এমন পছন্দসই যে কোনও ব্যায়ামই করতে পারেন।
গোড়ার দিকে প্রথমে স্কোয়াট দিয়ে শুরু করুন। একে একে পুশ-আপ, বার্পি, সিট-আপ সেরে আবারও ২০ সেকেন্ড করে করুন স্কোয়াট এবং পুশ-আপ। তার পর বাইসাইকেল টুইস্ট। শেষ করতে পারেন প্ল্যাঙ্ক কিংবা হাই প্ল্যাঙ্ক দিয়ে। প্ল্যাঙ্কে মূলত পায়ের পাতা ও কনুইয়ের উপর সমস্ত শরীরের ভার রাখা হয়। হাই প্ল্যাঙ্কে পায়ের পাতা ও হাতের তালুর উপর শরীরের ভার রাখা হয়। টাবাটা শুরুর পরে প্রায় ১৫-২০ দিন কেটে গেলে একটু বদল আনতে পারেন। সে ক্ষেত্রে প্রথম ২০ সেকেন্ড করতে পারেন জাম্পিং জ্যাক। তার পর একে একে স্কোয়াট, পুশ-আপ। বার্পির বদলে এখানে করতে পারেন মাউন্টেন ক্লাইম্বিং। এক্ষেত্রে লাফ দিয়ে দু’ হাত সামনে এগিয়ে গিয়ে জগিং করে পিছিয়ে আসতে হয়। তার পর স্কোয়াট, বাইসাইকেল টুইস্ট সেরে ২০ সেকেন্ড হাই প্ল্যাঙ্ক করে শেষ করতে পারেন এক্সারসাইজ়়।
কারা করবেন না?
টাবাটা যে কেউই করতে পারেন। প্রশিক্ষক গুরুপ্রসাদ বলেন, “প্রয়োজনে শুরুর দিকে ধীরে ধীরে ব্যায়ামগুলি অভ্যাস করতে পারেন। পরে শরীর এক বার অভ্যস্ত হয়ে গেলে ধীরে ধীরে ঠিকই গতি বাড়বে।” তবে ব্যায়ামের গতি বাড়াতে গিয়ে কখনওই যেন শরীরে অতিরিক্ত চাপ না পড়ে, সে দিকে নজর রাখতে হবে। গর্ভাবস্থায় একেবারেই এ ধরনের হাই ইনটেনসিটি এক্সারসাইজ়় করা উচিত নয়। তা ছাড়া, কোনও শারীরিক সমস্যা বা শরীরে কোথাও কোনও চোট থাকলে এই ধরনের এক্সারসাইজ়় থেকে দূরে থাকুন৷ শ্বাসকষ্টের সমস্যা বা হার্টের সমস্যা থাকলে তা অতি অবশ্যই প্রশিক্ষককে জানিয়ে রাখতে হবে। প্রশিক্ষকের চেয়েও অনুশীলনকারী নিজের কতটা দম রয়েছে, তা সবচেয়ে ভাল বুঝতে পারেন। তাই সে দিকে সতর্ক থাকতে হবে।
মিউজ়িকের ব্যবহার
টাবাটাতে উৎসাহ বাড়াতে জ়ুম্বা কিংবা এরোবিকের মতো আজকাল গানের ব্যবহার হচ্ছে। পছন্দের গান চালিয়ে তার তালে পা মিলিয়েও এই ধরনের শারীরচর্চা করা যায়। ফিটনেস প্রশিক্ষক গুরুপ্রসাদের মতে, “তবে অবশ্যই কোনও ধীর লয়ের গান বা রোম্যান্টিক গান চালালে চলবে না। এক্সারসাইজ়় করার উপযোগী কোনও মিউজ়িক বেছে নিতে হবে।”
টাবাটার উপকার
সময় সাশ্রয় তো বটেই একই সঙ্গে টাবাটার নানা উপকার রয়েছে। খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তনের কারণে, আজকাল বাড়তি ওজন একটি সাধারণ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ডায়েটের পাশাপাশি অল্প সময়ে ওজন কমাতে এই টাবাটার জুড়ি নেই। যদিও মূল ধারার হাই ইনটেনসিটি ইন্টারভ্যাল ট্রেনিং অর্থাৎ এইচআইআইটি এক্সারসাইজ়ের চেয়ে ওজন কমাতে টাবাটা যে বেশি কার্যকর তা অবশ্য এখনও প্রমাণিত হয়নি, তবে এই ব্যায়ামের নিয়মিত অভ্যাসে মেটাবলিজ়মের হার বেড়ে যায়। পাশাপাশি হাই ইনটেনসিটি এই ব্যায়ামে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। স্ট্যামিনা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। হার্টের স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী। পাশাপাশি এটি ফুসফুসকেও সুস্থ রাখে। একই সঙ্গে পেশির শক্তি বাড়ায় এবং নমনীয় করে তোলে। কোর মাসলেরও উন্নতি হয়। পাশাপাশি টাবাটা মনঃসংযোগ এবং আইকিউ বাড়াতেও সহায়ক। তবে টাবাটাতে ঘড়ির কাঁটার দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
এই ধরনের শারীরচর্চায় যেমন সময় লাগে কম, তেমনই বিশেষ কোনও যন্ত্রপাতি কিংবা অধিক জায়গারও প্রয়োজন হয় না। মাত্র চার থেকে পাঁচ মিনিটের এই ব্যায়ামেই দিনভর নিজেকে ঝরঝরে লাগবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy