সেঅনেক কাল আগের কথা। ইজিপ্টের দুই সুন্দরী নেফারতিতি আর ক্লিয়োপেত্রার সৌন্দর্য, ত্বকের ঔজ্জ্বল্যের চর্চা সর্বত্র। নিজেদের সৌন্দর্য ধরে রাখতে তাঁরা ব্যবহার করতেন নানা প্রাকৃতিক উপাদান। অনেক সময়েই তাঁদের রূপরুটিনে থাকত অ্যালো ভেরার নির্যাস, শাঁস। আবার যুদ্ধে আহত সৈন্যদের ক্ষত নিরাময় করতে অ্যালো ভেরার দাওয়াই দিতেন আলেকজ়ান্ডার, ক্রিস্টোফার কলম্বাস। গ্রিস, ইজিপ্ট, ভারত, মেক্সিকো, জাপান, চিন বহু যুগ আগে থেকেই নানা পরিচর্যায় ব্যবহার করছে অ্যালো ভেরা। রূপচর্চা হোক বা সাময়িক স্বস্তি... অ্যালো ভেরা দুইয়ের জন্যই সমান সাবলীল। ইদানীং তার জনপ্রিয়তাও বাড়ছে। কিন্তু অ্যালো ভেরার গুণাগুণ কী? কী ভাবেই বা ব্যবহার করবেন এটি?
গাছের গোড়ায়
অ্যালো ভেরা হল এক ধরনের সাকিউলেন্ট। এর প্রতিটি পাতা মোটা, নরম কাঁটাযুক্ত। ভিতরে রয়েছে সাদাটে রঙের নরম তুলতুলে শাঁস। এই গাছ জন্মাতে পারে যত্রতত্র। বিশেষ যত্নআত্তিরও প্রয়োজন নেই।
কোনও উদ্ভিদ বা পদার্থে যখন অনেক গুণ থাকে, তখন কিন্তু তার ভিতরে লুকিয়ে থাকে প্রকৃতির গহিন রহস্য। অ্যালো ভেরাতেও তার অন্যথা নেই। বিজ্ঞান বলছে, এতে রয়েছে প্রায় ৭৫টি গুণাগুণ। ভিটামিন, উৎসেচক, খনিজ, সুগার, অ্যামিনো অ্যাসিড, স্যাপোনিন, ফ্যাটি অ্যাসিড, হরমোন... সব মিলেই অ্যালো ভেরাকে করে তুলেছে অসাধারণ। ফলে ত্বকের পরিচর্যা কিংবা ঘরোয়া টোটকায় স্বাস্থ্যরক্ষা... অ্যালো ভেরা ভীষণ উপযোগী।
ত্বকের যত্ন
অ্যালো ভেরা ত্বক পরিষ্কার করে হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করে। এই গাছ এমনিতেই রুক্ষ, শুষ্ক আবহাওয়াতেও তরতাজা থাকে। পাতায় সঞ্চিত থাকে জল, গাছের খাদ্য। পাতায় থাকা কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট ত্বক ময়শ্চারাইজ় করে। আবার এই গাছ ত্বক এক্সফোলিয়েট করে ত্বক মেরামতেও সাহায্য করে। এর শাঁস এমনিতেই ঠান্ডা হয়। ফলে ত্বকে আরাম হয়। অ্যালো ভেরায় আছে ভিটামিন সি, ই এবং বিটা ক্যারোটিন। ফলে ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখায় বলিরেখা পড়তে বাধা দেয়। তবে ত্বকের যত্ন নিতে অ্যালো ভেরা ব্যবহারের বেশ কিছু উপায় রয়েছে। সব ধরনের ত্বকে একই ভাবে এর ব্যবহার করা যায় না।
ব্যবহারবিিধ
রূপচর্চার জন্য অ্যালো ভেরা ব্যবহার করতে পারেন সরাসরি। সে ক্ষেত্রে এমন গাছই নিন, যার পাতা মোটা, সুস্থ এবং শাঁসালো। ভাল একটি পাতা কেটে লম্বালম্বি চিরে নিন। ভিতরে পাওয়া যায় নরম, ঠান্ডা শাঁস। সেই শাঁস ছুরি বা চামচ দিয়ে চেঁছে নিয়ে ব্যবহার করতে পারেন স্বচ্ছন্দে।
শুষ্ক ত্বকে: পাতা কেটে শাঁস বার করে নিন। তাতে এক চিমটি হলুদ গুঁড়ো, এক চা চামচ মধু, এক চা চামচ দুধ এবং কয়েক ফোঁটা গোলাপজল মেশান। এ বার মিহি করে মিশিয়ে মুখে, গলায়, ঘাড়ে লাগিয়ে নিন। কুড়ি মিনিট পরে পরিষ্কার জলে ধুয়ে নিন। সংবেদনশীল ত্বকে: অ্যালো ভেরা জেল, শসার রস, দুধ, রোজ় অয়েল একসঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করতে হবে সংবেদনশীল ত্বকে। এটি আবার অ্যাকনে দূর করতেও সাহায্য করে। প্রাকৃতিক স্ক্রাব: আধ কাপ অ্যালো ভেরা জেলের সঙ্গে এক কাপ চিনি, দু’টেবিল চামচ পাতিলেবুর রস মেশালেই তৈরি স্ক্রাব। এ বার আলতো হাতে মুখে-গলায় ঘষতে হবে এই স্ক্রাব। এতে মৃতকোষ যেমন দূর হবে, তেমনই অ্যালো সাহায্য করবে ত্বক পরিষ্কার করতে। আবার পাতিলেবুর রস যে কোনও দাগছোপ ও ট্যান কমাতে সাহায্য করে। এই স্ক্রাব চাইলে ব্যবহার করা যায় রোজই। প্রকৃিতর সানস্ক্রিন: সানবার্ন, সানট্যান রুখতেও অ্যালো ভেরা অব্যর্থ। রোদে বেরোনোর আগে কৃত্রিম সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে না চাইলে অ্যালো ভেরার জেল অল্প লাগিয়ে নিতে পারেন মুখে। তবে ফিরে এসে ফের মুখ পরিষ্কার করে, অ্যালো জেল লাগিয়ে নিলে উপকার বেশি পাবেন। ঠোঁটের যত্নে: ঠোঁট নরম রাখতেও অ্যালো ভেরা অদ্বিতীয়। সামান্য অ্যালো জেল সরাসরি ঠোঁটে লাগিয়ে নিতে পারেন। কিনতে পারেন অ্যালো ভেরা সমৃদ্ধ লিপ বাম। তবে বাড়িতে অ্যালো লিপ বাম বানিয়ে বেশি দিন ব্যবহার করতে চাইলে সামান্য কসরত দরকার। দু’টেবিল চামচ খাঁটি নারকেল তেল ডাবল বয়েলিং মেথডে গলিয়ে নিন। ঠান্ডা হলে তাতে আধ টেবিল চামচ বি ওয়াক্স, ১ চা চামচ শিয়া বাটার, ১ চা চামচ অ্যালো ভেরা জেল, ৮-১০ ফোঁটা হোহোবা বা আমন্ড অয়েল মিশিয়ে নিন। তা হলেই তৈরি অ্যালো ভেরা সমৃদ্ধ লিপ বাম।
চুলের চেকনাই
অ্যালো ভেরায় থাকে প্রোটিয়োলাইটিক উৎসেচক, যা স্ক্যাল্পের মৃতকোষকে সারাতে সাহায্য করে। আবার চুলের কন্ডিশনার হিসেবেও দারুণ কাজ করে। চুলের গ্রোথ বাড়ায়, স্ক্যাল্পের চুলকানি কমায়। খুশকি কমাতেও সাহায্য করে অ্যালো। এর জন্য সম পরিমাণে অ্যালো জেল ও একস্ট্রা ভার্জিন কোকোনাট অয়েল মিশিয়ে সারা রাত চুল ও স্ক্যাল্পে লাগিয়ে রাখতে হবে। পরদিন সকালে চুল শ্যাম্পু করে নিলেই হবে। সপ্তাহে দু’দিন করা যেতে পারে এটি।
অ্যালোর গভীরে
আরামদায়ক: গ্লুকোমেনন নামে এক ধরনের অত্যন্ত উপকারী গ্রোথ হরমোন পাওয়া যায় অ্যালোয়। আগুন, সূর্যরশ্মি বা কোনও আঘাত থেকে ত্বকে ছ্যাঁকা, পোড়া বা জ্বলুনির মতো প্রদাহ শুরু হলে, তা কিছুক্ষণের মধ্যেই নিরাময় করতে পারে অ্যালো। ছোট কাটাছেঁড়ায় স্বাভাবিক ভাবেই এটি আরাম দেয়। তরতাজা রাখতে: বছর কয়েক আগে একটি পরীক্ষার মাধ্যমে দেখা গিয়েছিল যে, অ্যালো জেল যে কোনও আনাজপাতি টাটকা রাখতে সাহায্য করে। টম্যাটো ও আপেলের উপরে প্রাথমিক ভাবে এই পরীক্ষা করা হয়। আনাজের গায়ে অ্যালো জেলের হালকা পরত থাকলে কোনও ক্ষতিকর ব্যাকটিরিয়া আর জন্মাতে পারে না বা বংশবৃদ্ধি করতে পারে না। তাই কৃত্রিম পদার্থ দিয়ে সংরক্ষণ না করে ব্যবহার করা যায় অ্যালো জেলও। প্রাকৃতিক মাউথওয়াশ: অ্যালোয় থাকে ভিটামিন সি। তাই অ্যালো জেল দিয়ে তৈরি মাউথক্লিনার দিয়ে কুলকুচি করলে প্লাক (ব্যাকটিরিয়ার জন্মের ফলে দাঁতের উপরে যে হলদেটে, পিচ্ছিল ও দুর্গন্ধময় পর্দা তৈরি হয়) দূরে থাকে। দাঁতের মাড়ি ফুলে গেলে তার যন্ত্রণা কমাতেও সাহায্য করে অ্যালো।
শরীরের বহিরঙ্গের যত্ন হোক বা ভিতরের খেয়াল... অ্যালো ভেরা দুইয়ের জন্যই আদর্শ। চাই রূপচর্চায় না িক সার্বিক সুস্থতায়... অ্যালো ভেরা কোন কাজে লাগাবেন, সেটা জানা জরুির। তার পরে শুধু সেই মতো তাকে কাজে লাগানো দরকার।
মডেল: ঐশ্বর্য সেন, ছবি: জয়দীপ মণ্ডল, মেকআপ: উজ্জ্বল দত্ত
লোকেশন: দ্য ললিত গ্রেট ইস্টার্ন
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy