ছবি: সংগৃহীত।
বাতাসে পুজো পুজো গন্ধ। পিতৃপক্ষের অবসানে দেবীপক্ষের সূচনা। বাকি আর ৩৪ দিন। তার পরেই মা আসছেন। বাঙালির উৎসব মানেই একটা বড় অংশ জুড়ে থাকে সাজগোজ। তাই পুজোর বাজারও চলছে জোরকদমে। ঘরে ঘরে চলছে দুর্গা আবাহনের প্রস্তুতি। শহর সেজে উঠছে উৎসবের রোশনাইয়ে। সেই সঙ্গে জোরকদমে চলছে পুজোর জন্য নিজেকে সাজিয়ে তোলার প্রস্তুতি। শহরের ফুটপাত থেকে বিলাসবহুল শপিং মল— পুজোর কেনাকাটায় থিকথিক করছে ভিড়। পুজো মানেই জমিয়ে সাজগোজ। অষ্টমীর ধুনুচি নাচ কিংবা নবমীর সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে জমিয়ে আড্ডা— রকমারি পোশাকের বাহারে পুজো যেন অন্য রূপ পায়। পুজোয় সাবেকি সাজের পাশাপাশি পশ্চিমি পোশাকও কিন্তু সমানতালে পাল্লা দেয়। অষ্টমীর অঞ্জলি দেওয়া ছাড়া পুজোর বাকি দিনগুলিতে শাড়ির বদলে কেতাদুরস্ত নানা ধরনের পোশাক পরতে অনেকেই পছন্দ করেন। কারণ, শাড়ি পরলেই তা সামলানো নিয়ে মাথায় আলাদা একটা চিন্তা থাকে। পশ্চিমি পোশাকের ক্ষেত্রে সে সবের ঝক্কি নেই। দেখতেও সপ্রতিভ লাগে। পশ্চিমি পোশাক মানেই তার দাম আকাশছোঁয়া, এই ধারণা ভুল। ১০০০ টাকার মধ্যেই মনপসন্দ সব পশ্চিমি পোশাক পেয়ে যাবেন। কিন্তু কোথায় পাবেন, কী কী পাবেন, তা জানা আছে কি? রইল তার খোঁজ।
পুজোর সাজে চমকে দিতে কো-অর্ড সেট
এয়ারপোর্ট লুক হোক কিংবা ছবির প্রচার, ইদানীং বলি তারকাদের পরনে থাকছে কো-অর্ড সেট। তবে শুধু তারকা নয়, কমবয়সিরাও বেশ পছন্দ করছেন এই পোশাক। টপ এবং ট্রাউজ়ার্স, দুটো একই নকশার, একই কাপড়ের। তবে টপের সঙ্গে যে সব সময়ে ট্রাউজ়ার্সই থাকতে হবে, তার কোনও মানে নেই। পালাজো, হাঁটু ঝুল স্কার্ট, হট প্যান্ট কিংবা শরারাও থাকতে পারে। শুধু দুটোই একই কাপড় দিয়ে তৈরি হতে হবে। ফুলছাপ, মোজাইক, টাই অ্যান্ড ডাই, এমব্রয়ডারি— নকশাতেও বৈচিত্র আছে। পুজোর কোনও এক দিন কো-অর্ড সেটে সাজলে মন্দ হবে না। ষষ্ঠীর সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে যাবেন। বন্ধুবান্ধবের হইহুল্লোড়ে শাড়ি, সালোয়ার কামিজের চেয়ে অনেক বেশি স্বচ্ছন্দে থাকতে পারবেন এই পোশাকে। আবার পুজোর সাজের সঙ্গেও আপস করতে হল না। পনিটেল করে বাঁধা চুল, কানে রিং, হালকা মেকআপ, পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে লিপস্টিক, হাতের কব্জিতে একটা ডিজিটাল ঘড়ি— কো-অর্ড সেটের সঙ্গে এমন করে সাজলে বাকিরা আপনাকেই দেখবে। পুজোর কেনাকাটার তালিকায় একটি কো-অর্ড সেট তাই রাখতেই পারেন। ১০০০ টাকার মধ্যে এই পোশাক কিনতে হলে জুডিয়োতে যেতে পারেন। ৯৯৯ টাকায় পেয়ে যাবেন। ভরসা রাখতে পারেন মিন্ত্রা, অ্যামাজ়নে, অজিয়োতেও। ৭৯৯ থেকে ৯০০ টাকার মধ্যে বেশ মনপসন্দ কো-অর্ড সেট পাবেন। দামি কো-অর্ড সেট কম দামে কিনতে ঢুঁ দিতে পারেন ‘পোলাগো’ অনলাইন স্টোরে। ১৮৯৯ টাকার কো-অর্ড সেট ৪৫ শতাংশ ছাড়ে অর্থাৎ, ৯৯৯ টাকায় পেয়ে যাবেন।
পুজোয় ইচ্ছেমতো ঘুরে বেড়ানোয় ড্রেস
পুজো মানেই হইহুল্লোড়, হাঁটাহাঁটি, যেখানে-সেখানে বসে পড়া। তার মধ্যে আলাদা করে পোশাক সামলানোর ঝক্কি নিতে না চাইলে বরং পুজোর কোনও একটি দিন পরতে পারেন ওয়ান পিস। হেঁটে ঠাকুর দেখা হোক কিংবা ম্যাডক্স স্কোয়ারে রাতভর আড্ডা, হাঁটুঝুল ওয়ান পিস পরে নিলে নিশ্চিন্ত। শারীরিক কোনও অস্বস্তিও থাকবে না, আবার দেখতেও সপ্রতিভ লাগবে। একরঙা ওয়ান পিসের চাহিদা রয়েছে। তবে এই ধরনের পোশাকের নকশায় বৈচিত্রের শেষ নেই। জর্জেট থেকে সুতি— বিভিন্ন কাপড়ের ওয়ান পিস পাওয়া যায়। তবে শরৎকাল হলেও গরম কমার যে হেতু কোনও লক্ষণ নেই, ফলে পোশাকের ক্ষেত্রে সুতির উপর ভরসা রাখাই শ্রেয়। হাফ হাতা, ফুল হাতা, নুডল্স স্ট্র্যাপ, কাঁধখোলা, পাওয়ার শোল্ডার— বিভিন্ন ধরনের ওয়ান পিস পাওয়া যায়। সাজগোজ করতে যাঁরা বিশেষ পছন্দ করেন না, তাঁদের জন্য এই পোশাক উপযুক্ত। ওয়ান পিস পরলে আনুষঙ্গিক সাজ জমকালো না হলেও চলে। নো মেক আপ লুক, হালকা লিপস্টিক, কানে ছোট্ট দুল আর হাতে ঘড়ি— অল্প সাজেই বাজিমাত করতে পারেন। ১০০০ টাকার মধ্যে ওয়ান পিস কিনতে সোজা চলে যেতে হবে জুডিয়োতে। ৬৯৯ টাকায় মনের মতো সব ওয়ান পিস পেয়ে যাবেন। ট্রেন্ডসেও ওয়ান পিসগুলির দাম ৭৯৯ থেকে ৯৯৯ টাকার মধ্যে।
পুজোয় সঙ্গীর সঙ্গে সিনেমা ডেটে জাম্পস্যুট
‘ইয়ারো কি বারাত’ সিনেমায় ‘চুরালিয়া হ্যায় তুমনে জো দিলকা’ গানের দৃশ্যে জিনাত আমনকে মনে আছে নিশ্চয়? সাদা জাম্পস্যুট পরে গিটার বাজিয়ে গান গাইছিলেন। জাম্পস্যুট নিয়ে ইদানীং মাতামাতি হলেও সত্তর দশকের বলিউডি ছবির হাত ধরেই কিন্তু এর পরিচিতি। তবে তখন এই পোশাকের ততটাও কদর ছিল না। এখন কমবয়সিদের মধ্যে আলাদাই চাহিদা তৈরি হয়েছে। বন্ধুর জন্মদিন হোক কিংবা প্রিয়জনের সঙ্গে ডেট, জাম্পস্যুট সব অনুষ্ঠানেই মানানসই। পুজোর সাজেই বা বাদ যাবে কেন এই পোশাক! হাঁটুঝুল জাম্পস্যুট যেমন আছে, তেমনি গোড়ালি পর্যন্ত জাম্পস্যুটও পেয়ে যাবেন। নকশাতেও রয়েছে বৈচিত্র। স্যাটিন লাইক্রা, লিনেনের উপর ফ্যাব্রিক প্যাস্টেলের কাজ, সুতির উপর সুতোর কাজ— নানা ধরনের জাম্পস্যুট পেয়ে যাবেন। ভারী চেহারা বলে অনেকেই জাম্পস্যুট এড়িয়ে যান অনেকে। এই ধারণা কিন্তু একেবারেই ভুল। ওজন বেশি হোক বা কম, জাম্পস্যুট সব চেহারায় সমান মানানসই। তাই এত কিছু না ভেবে পুজোয় নিজের জন্য একটি জাম্পস্যুট কিনেই ফেলুন। অনলাইনে ১০০০ টাকার মধ্যে জাম্পস্যুট পেয়ে যাবেন অনায়াসে। মিন্ত্রা, অ্যামাজন ছাড়াও ‘লুকস গুড’, ‘হাউস অফ ইন্ডিয়া’ নামে কিছু অনলাইন স্টোর আছে। সেখানে হাজারখানেক টাকায় বেশ ভাল মানের জাম্পস্যুট পাবেন। এ ছাড়া, ট্রেন্ডস-এ এক বার খোঁজ করে দেখতে পারেন। খোঁজ করে দেখতে বলা এই কারণেই ট্রেন্ডস-এর প্রতিটি শাখায় সব সময়ে একই ধরনের পোশাক থাকে না। তাই এক বার বাড়ির কাছের কোনও শাখায় ঘুরে দেখতে পারেন। ধর্মতলা আর গড়িয়াহাটের অস্থায়ী দোকানগুলিতে একটু দরদাম করে কিনলে হাজার টাকায় দুটো জাম্পস্যুটও হয়ে যেতে পারে। পুজোয় বেশ কয়েকটি বাংলা সিনেমা মুক্তি পাচ্ছে। সঙ্গীর সঙ্গে সিনেমা ডেটে যাওয়ার জন্য জাম্পস্যুটটি তুলে রাখতে পারেন।
পুজোয় ঘরোয়া আড্ডায় র্যাপ স্কার্ট
পুজো হল সাজ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার উপযুক্ত সময়। বিশেষ করে এত ধরনের পশ্চিমি পোশাক যে, ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে পরলে মন্দ হয় না। এই যেমন র্যাপ স্কার্ট। দেখতে অনেকেটা লম্বা ঝুলের র্যাপারগুলির মতো। তবে র্যাপ স্কার্ট ঊরুর কাছেই শেষ হয়ে যায়। যাঁরা একটু ছোট ঝুলের পোশাক পরতে অভ্যস্ত, তাঁরা পুজোয় একটি র্যাপ স্কার্ট কিনতেই পারেন। পুজোর সময়ে বাড়িতেই অনেকের আড্ডার আসর বসে। বন্ধুবান্ধব হলেও বাড়িতে এলে আপ্যায়নে তো কোনও ত্রুটি রাখা চলে না। তার উপর এমন উৎসবমুখর সময় বলে কথা। ভারী কোনও পোশাক পরে কাজ করা মুশকিল। সে ক্ষেত্রে একটি র্যাপ স্কার্ট পরে নিলে সব দিক রক্ষে। দেখতেও সুন্দর লাগবে আবার আবার হাঁটাচলা, দৌড়ঝাঁপ করতেও কোনও সমস্যা হবে না। র্যাপ স্কার্টের সঙ্গে ক্রপ টপ সবচেয়ে ভাল লাগে। এ ছাড়া অফ শোল্ডার, টিউব টপও ভাল মানাবে এর সঙ্গে। তবে স্কার্টের সঙ্গে মানাচ্ছে এমন টপ পরতে হবে। স্কার্ট যদি ফুলছাপ কিংবা অন্য কোনও নকশা করা থাকে, সে ক্ষেত্রে একরঙা টপ পরতে পারেন। আর স্কার্ট যদি এক রঙের হয়, তা হলে নকশা করা টপ পরতে পারেন। এই ধরনের পোশাকের সঙ্গে সাজ একেবারে ছিমছাম হবে। পনিটেল করে বাঁধা চুল, গলায় কেতাদুরস্ত সরু হার, কানে চাইলে একটা ছোট্ট টপ পরতে পারেন, একেবারে হালকা মেকআপ আর হালকা লিপস্টিক— র্যাপ স্কার্ট আর ক্রপ টপের সঙ্গে একেবারে মানানসই সাজ। স্কার্ট এবং টপ একসঙ্গে সেট হিসাবে পাবেন না। আলাদা করে কিনতে হবে। র্যাপ স্কার্ট কম দামে সবচেয়ে ভাল পাবেন মিন্ত্রাতে। ৬৮৯, ৭১০, ৮২৫ বিভিন্ন দামের র্যাপ স্কার্ট পেয়ে যাবেন। অ্যামাজ়ন, ফ্যাব অ্যালি, আজিয়োতেও ৮০০ টাকার মধ্যে র্যাপ স্কার্ট পেয়ে যাবেন। শপিং মলগুলিতে এই ধরনের স্কার্টের দাম ১০০০ পেরিয়ে যাবে। তবে অনলাইনে কেনার সুযোগ থাকলে চিন্তার কোনও অবকাশ থাকে না।
রাতভর ঠাকুর দেখায় গ্রাফিক প্রিন্টেড শার্ট
এই ধরনের পোশাক ইদানীং ভীষণ চলছে। প্রিয় কার্টুন চরিত্র থেকে কেতাদুরস্ত রমণী, খবরের কাগজ থেকে নানা রঙের আঁকিবুকি— গ্রাফিক প্রিন্ট করা পোশাকের জনপ্রিয়তা কমবয়সিদের মধ্যে অনেক বেশি। মূলত সাদা, প্যাস্টেল রঙের পোশাকের উপর এই ধরনের গ্রাফিক বেশি ফোটে। তবে সবুজ, আকাশি, কালো রঙের গ্রাফিক শার্টও কিন্তু বেশ সুন্দর দেখায়। জেগিংস, হট প্যান্টের সঙ্গে এই ধরনের শার্ট পরলে পুজোর ভিড়ে অন্য রকম সাজ হবে। তবে সাধারণ জিন্সের বদলে ডেনিম ফ্লেয়ার দিয়ে পরতে পারেন। দারুণ দেখতে লাগবে। গ্রাফিক প্রিন্টেড টি-শার্টও কিন্তু পাওয়া যায়। পরিবারের সঙ্গে সারা রাত ঠাকুর দেখার পরিকল্পনা থাকলে এই ধরনের আরামদায়ক পোশাক পরতে পারেন। এমন একটি পোশাক পরলেই অর্ধেক সাজ হয়ে গেল। খোলা চুল, ছিমছাম মেকআপ, গাঢ় লিপস্টিক, কানে টপ, ঘ়ড়ি— বাকি সাজও সম্পূর্ণ হয়। গ্রাফিক প্রিন্ট করা শার্ট বাজেটের মধ্যে পাবেন অনলাইনে। মিন্ত্রায় যেমন এই ধরনের শার্ট বিক্রি হচ্ছে ৭৯৯, ৫৯৩, ৮৯৬ টাকায়। ‘দ্য সোল্ড স্টোর’ নামে একটি অনলাইন অ্যাপে এই ধরনের পোশাকের দাম ৯৯৯ টাকার কাছাকাছি। অ্যামাজ়নে খুঁজলেও প্রচুর গ্রাফিক প্রিন্টেড শার্ট পাবেন। সেগুলির দামও কম। তবে মান নিয়ে সংশয় আছে। এই ধরনের শার্ট কম দামে পেয়ে যাবেন টালিগঞ্জের হরিপদ দত্ত লেনের পশ্চিমি পোশাকের হোলসেল দোকানগুলিতে। ধর্মতলার শ্রীরাম আর্কেডের মধ্যে পশ্চিমি পোশাকের প্রচুর ছোট ছোট দোকান রয়েছে। সেখানেও ১০০০ টাকায় মনপসন্দ শার্ট পাবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy