Advertisement
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪
Botox

করিনা বোটক্স করেন না, কিন্তু কেউ কেউ করেন, বয়স ধরে রাখার চিকিৎসা কি আদৌ নিরাপদ?

মুঠোর মধ্যে যৌবনের চাবি পেয়েও তালা খোলার সাহস পান না অনেকে। তার আগেই চেপে বসে ভয়— হিতে বিপরীত হবে না তো! ভাল দেখতে লাগার লোভে পড়ে মুখের বারোটা বেজে যাবে না তো!

গ্রাফিক— সনৎ সিংহ।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১১:১২
Share: Save:

কথায় আছে ‘এজিং লাইক ফাইন ওয়াইন’। অর্থাৎ, ভাল ওয়াইন যেমন পুরনো হলে মহার্ঘ হয়, ঠিক সেই নিয়মেই বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে রূপ খোলতাই হয়। এটা তাঁরাই পারেন, যাঁরা বয়সের ছাপের সঙ্গে মিলিয়ে দিতে পারেন লাবণ্য। যাকে ইংরেজিতে বলে ‘গ্রেস’। কিন্তু সবাই এই ভাবনায় বিশ্বাসী নয়। বিশ্বের অধিকাংশ মানুষই তারুণ্যের পুজারী। রূপ এবং যৌবনকে যাঁরা চোখের রেখা বা কপালের ভাঁজ দিয়ে বিচার করেন, তাঁদের জন্য যৌবন ফিরে পাওয়ার চাবিকাঠি হল ‘বোটক্স’।

মুশকিল হল, মুঠোর মধ্যে চাবি পেয়েও তালা খোলার সাহস পান না অনেকে। তার আগেই চেপে বসে ভয়— হিতে বিপরীত হবে না তো! ভাল দেখতে লাগার লোভে পড়ে মুখের বারোটা বেজে যাবে না তো! হয়তো এমন পরিণতি হল সেখান থেকে আর ঠিক হওয়াই গেল না। ‘বোটক্স’ নিয়ে এমনই হাজার অনিশ্চয়তা আর প্রশ্নের মধ্যে কয়েক দিন আগে করিনা কপূর বলে বসলেন, ‘‘আমি বোটক্স করাই না। ভবিষ্যতে করাতে চাইও না।’’ কেন? করিনা জবাব দিয়েছিলেন, ‘‘আমার বরের আমাকে এমনিতেই ভাল লাগে, আবেদনময়ী লাগে। আমার বয়স কমানোর দরকার নেই।’’ মজাচ্ছলে বললেও করিনার ওই মন্তব্যে কু ডাকতে শুরু করে অনেকের মনে। প্রশ্ন ওঠে, ‘বোটক্স’ কি ক্ষতিকর? আনন্দবাজার অনলাইন সেই প্রশ্নের জবাব খুঁজতে দ্বারস্থ হয়েছিল ত্বক বিশেষজ্ঞদের। তাঁরা জানালেন, বোটক্স করানোর কথা যাঁরা ভাবছেন, তাঁদের কয়েকটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে। বোটক্সে ক্ষতি হবে না লাভ, তা সেই কয়েকটি বিষয়ের উপরেই নির্ভর করবে।

বোটক্স কী?

ত্বকের চিকিৎসক ডলি গুপ্ত বলছেন, ‘‘বোটক্স আসলে একটি ব্র্যান্ডের নাম। ত্বকে তারুণ্য ধরে রাখার জন্য যে বোটালিনাম টক্সিন ব্যবহার করা হয়, এই ব্র্যান্ড সেটা তৈরি করে।’’

ক্ষতি করে না

টক্সিন বলতে আমরা বুঝি দূষিত বা বিষাক্ত জিনিস। তাই ডলির কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, ত্বকে বিষাক্ত জিনিস প্রয়োগে কোনও দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হয় না? চিকিৎসক বলছেন, ‘‘নাম টক্সিন হলেও এটা আসলে একটা নিউরোটক্সিক প্রোটিন। এই প্রোটিন যখন মুখের পেশিতে প্রয়োগ করা হয়, তখন পেশির সঙ্গে স্নায়ুর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ফলে পেশির সঞ্চালন অনেকটাই কমে আসে। মুখে ভাঁজ বা রেখা পড়ে না। এক বার প্রয়োগের পরে চার-ছয় মাস পর্যন্ত ওই প্রভাব থাকে। তার পরে ধীরে ধীরে আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসে পেশি। তাই হিসাবমতো ক্ষতির কোনও জায়গা নেই।’’ তবে একসঙ্গেই সতর্ক থাকার কথাও বলেছেন চিকিৎসকেরা।

তবে সতর্ক হতে হবে

ত্বক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক শুভ্র ভট্টাচার্যের কথায়, ‘‘একই জায়গায় বোটালিনাম টক্সিনের দীর্ঘকালীন ব্যবহারে পেশিতে প্রভাব পড়তে পারে। এমনও হতে পারে সেই পেশির প্রকাশ ক্ষমতাই চলে গেল। তাই এ ব্যাপারে যে কোনও পেশাদারদের উপর ভরসা না করে চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা করানো জরুরি।’’

ডলিও এ ব্যাপারে একমত। তিনি বলছেন, ‘‘এই চিকিৎসার চাহিদা ইদানীং এত বেড়ে গিয়েছে যে, পার্লারেও কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিইয়ে বোটালিনাম টক্সিনের ইঞ্জেকশন দেওয়া হচ্ছে। সেখানেই বাধছে গন্ডগোল। একজন চিকিৎসক যে ভাবে যে বিষয়গুলিকে মাথায় রেখে চিকিৎসা করবেন, তাঁরা না জানার জন্যই, তা করছেন না। ফলে ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে।’’

আর কি জরুরি?

দুই চিকিৎসকই জানাচ্ছেন, কোন সংস্থার তৈরি জিনিস চিকিৎসায় ব্যবহার করা হচ্ছে, তার উপরেও নির্ভর করবে অনেক কিছু। ঝুঁকি এড়াতে ভাল এবং নামী সংস্থার ওষুধ ব্যবহার করাই শ্রেয়।

ভুল চিকিৎসায় কী কী ক্ষতি?

ভুল চিকিৎসায় ঝাপসা দৃষ্টি, প্রস্রাবের সমস্যা, শ্বাসের সমস্যা, খাবার গিলতে সমস্যা, জিভ জড়িয়ে যাওয়া, ত্বকের অন্যত্র অসাড় ভাব, পেট খারাপ হওয়া, ব্যথা, মাথা যন্ত্রণা, জ্বর, চোখ থেকে জল পড়া, স্কিনে র‌্যাশ, পেশি দৌর্বল্য, এমনকি, হার্ট অ্যাটাকের মতো উপসর্গও দেখা দিতে পারে। এর মধ্যে প্রথম সাতটি উপসর্গ দেখা দিলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Botox
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE