বাঙালিরা কেমন সাজলেন? গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।
পোশাক নিঃসারে কথা বলতে পারে। যিনি পরছেন আর যাঁরা দেখছেন, তাঁদের মধ্যে স্থাপন করতে পারে অব্যক্ত যোগাযোগ। আবার কখনও পোশাকে বোনা থাকে সূক্ষ্ম ইঙ্গিতের জাল। ফলে কে কোথায় কী পরলেন, তা বহন করে উচ্চারণ না করা কিছু বার্তা। তাই চর্চায় থেকেই যায় সাজ। বিশ্লেষণের বিষয়ও হয়ে ওঠে। ফেলে আসা বছরে বাঙালি নেতা থেকে শুরু করে অভিনেতা, নেত্রী থেকে অভিনেত্রী, পোশাকে বিশেষ ভাবে নজর কেড়েছেন কিছু কিছু মুহূর্তে। বছর শেষের দিনে আনন্দবাজার অনলাইন ফিরে দেখল তেমনই পাঁচ জনের পাঁচ সাজ।
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়
রাজনীতির সাজ আলাদা। অভিনয় জগতের সজ্জা অন্য রকম। নায়ক-নায়িকারা যেমন সাজেন, অনেক ক্ষেত্রেই নেতা-নেত্রীদের তা থেকে দূরে থাকতে দেখা গিয়েছে আগে। দূরত্ব খানিকটা কমলে নেত্রীদের পোশাক নিয়ে আলোচনাও হয়েছে। তাঁরা কী শাড়ি পরলেন, কোন ব্র্যান্ডের জুতো-ব্যাগ ব্যবহার করলেন, তা শিরোনামে উঠে এসেছে। তবে অধিকাংশ সময়ে নেতারা আর একটু দূরে থেকেছেন ওই আলোচনা থেকে। তার একটা বড় কারণ, ইদানীংকালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ছাড়া ভারতীয় নেতাদের বড় একটা চেনা পোশাকের গণ্ডি পেরোতে দেখা যায় না। মুম্বইয়ের পোশাকশিল্পীর নকশা করা জামা তো দূর অস্ত্! অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কিন্তু সেই নিয়ম ভাঙলেন। সাধারণত সাদা বা কালো পাঞ্জাবি, শার্ট, টি-শার্টে প্রকাশ্যে আসা অভিষেক তাঁর পিসি, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ির কালীপুজোয় হাজির হলেন নব অবতারে। দেখা গেল, অভিষেকের পরনে ঘিয়ে রঙের উপর সোনালি ফুলের নকশা আর জরির কাজ করা কুর্তা। তাঁর ওই পোশাকের সঙ্গে মিল পাওয়া গেল বলিউড তারকাদের প্রিয় পোশাকশিল্পী মাসাবা গুপ্তের তৈরি একটি কুর্তা-পাজামার। নতুন সাজে কি নতুন কোনও বার্তা দিতে চেয়েছিলেন তৃণমূল নেতা? প্রশ্ন কিন্তু ঘুরতে শুরু করেছিল সে রাত থেকেই। সে যা-ই হোক, নেতার সাজ নজর কেড়েছে বহুজনের।
রুক্মিনী মৈত্র
নায়িকাদের সাজ নিয়ে কথা হয় অনেক সময়েই। তবে কোথায় কেমন সাজ মানানসই, তা সব সময়ে তাঁদের সাজে উঠে আসে না। যাঁদের ক্ষেত্রে সে ভাবনা দেখা যায়, তাঁরা আলাদা ভাবে চর্চায় উঠে আসেন। যেমন আলিয়া ভট্টকে নিয়ে বহু বার সে আলোচনা হয়েছে। তিনি জাতীয় পুরস্কারের সাজে আলাদা যত্ন নেন, রামমন্দিরের উদ্বোধনে গেলে অন্য ভাবে তাঁর সাজ কথা বলে, আবার বলি তারকাদের পার্টিতে গেলে তিনি আর এক ভাবে যত্নশীল হন। প্রিয়ঙ্কা চোপড়া, করিনা কপূররাও বহু সময়ে তেমন চর্চায় এসেছেন। অম্বানী বাড়ির বিয়ের অনুষ্ঠানে বাংলার নায়িকা রুক্মিনী মৈত্রের সাজও সে তালিকায় জুড়ল। বাঙালি সুন্দরী শাড়ি পরলেন ঠিকই, তবে তাতে থাকল বিশেষ দিনকে বিশেষ করে তোলার চেষ্টা। সেই শাড়ি ছিল যেন ‘সোনা’য় মোড়া। বুকের উপর দিয়ে চলে গিয়েছে আঁচলের সোনালি পাতা কাটা নকশা। দূর থেকে দেখলে কেউ ভাববেন আধুনিক গাউন পরেছেন নায়িকা। আবার কাছে এলেই তা শাড়ি। মডেল-অভিনেত্রী সুন্দরীদের ভিড়ে নিজেকে যে আলাদা করে ফুটিয়ে তুলতে পারেন ভালই, তা দেখিয়েছে তাঁর সাজ।
অনসূয়া সেনগুপ্ত
যে কোনও কাজে অন্য দেশে গেলে, সেই জায়গার সঙ্গে মানানসই পোশাক পরার চল রয়েছে অনেক দিন ধরে। মাঝেমধ্যে সেই ছক ভেঙে নিজের দেশের পোশাক পরেন কেউ কেউ। অনসূয়া সেনগুপ্ত দ্বিতীয় পথে হেঁটেছেন। ফ্রান্সের কান চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা অভিনয়ের সম্মান পাওয়া প্রথম ভারতীয় অভিনেত্রী তিনি। পুরস্কার পাওয়ার পরে তাঁকে যখন দেখল দেশ, তখন তিনি শাড়িতে। সবুজ সেই শাড়ি আবার কোনও দামি ব্র্যান্ডের নয়। কলকাতার পোশাকশিল্পী, যাঁরা কিনা পরিবেশ নিয়ে ভাবনাচিন্তা করে জামাকাপড় বানান, তাঁদের থেকেই শাড়ি কিনেছেন কলকাতার এই কন্যে। কানের ঝলমলে পরিবেশে এ ভাবেও তিনি নাম তুলে নিয়ে গিয়েছিলেন নিজের কলকাতা শহরের।
শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়
বলিউড তো বটেই, টলিপাড়াও তাঁকে মাঝেমধ্যে বব বিশ্বাস বলে ডেকে থাকে। একের পর এক বলি ছবিতে যেমন দেখা যায় তাঁকে, তেমনই নানা অনুষ্ঠানে তাঁর সাজপোশাক ইদানীং বেশি চর্চায় আসে। মুকেশ অম্বানীর ছোট পুত্র অনন্তের বিয়ে ছিল ২০২৪ সালের অতি চর্চিত অনুষ্ঠান। সেখানে জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক স্তরের তারকাদের উপস্থিতি বার বার শিরোনামে থেকেছে। তারই মধ্যে বাংলার অভিনেতা উপস্থিত থেকেছেন একেবারে বাঙালি হয়ে। বব বিশ্বাসের মতো বাঙালি নয়! একেবারে সাবেক সাজ। ধুতি, পাঞ্জাবিতে যেন আলাদাই চমক দিলেন শাশ্বত। রকমারি ব্র্যান্ডের আধুনিকতার ঝলকানির মাঝে চিরাচরিতের গাম্ভীর্য যে আলাদাই, তা-ও প্রমাণ করেছে তাঁর সাজ।
জয়া এহসান
‘এহসান তেরা হোগা মুঝ পর...’ বলে হাতজোড় করে বহু শাড়ি অনুরাগী জয়ার ঢাকাই শাড়ি পরার ধরন নিয়ে সমালোচনা করেছেন। কারণ, চেনা জামদানি অন্য ভাবে পরেছেন নায়িকা। বাঙালি যে ভাবে শাড়ি পরে, তার চেয়ে অনেক আলাদা জয়ার সাজ। ঢাকাই শাড়িও যে এমন সাহসী হয়ে উঠতে পারে, তা-ই যেন দেখিয়েছেন জয়া। এর আগেও বড় অনুষ্ঠানে তাঁর দেশের শাড়ি ঢাকাই জামদানি পরে হাজির হয়েছেন জয়া। তবে তা পরেছেন সাধারণ ঢঙেই। জয়ার নতুন স্টাইলে শাড়ির ফাঁক দিয়ে উরু থেকে পা পর্যন্ত দৃশ্যমান। বেগনি শাড়ির সঙ্গে সেই খোলা পায়ে ম্যাজেন্টা রঙের স্টিলেটো পরেছেন। এক পায়ে পেঁচিয়ে নিয়েছেন আদিবাসী কায়দার মল। জয়ার শাড়ি পরার নতুন আদলকে ‘বিপজ্জনক’ বলেও আখ্যা দিয়েছেন তাঁর অনুরাগীদের একাংশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy