পোশাকের উপর সাদা, নীল এবং লাল রঙের চৌকো লোগোটি দেখলে আলাদা করে এখন আর নির্মাতাদের নাম বলে দিতে হয় না। আমেরিকার প্রথম সারির স্পোর্টস এবং লাইফস্টাইল পোশাক সংস্থার কর্ণধার টমি হিলফিগার। কিন্তু ৭৪ বছর বয়সি চর্চিত এই পোশাকশিল্পীর যাত্রা যে শুরু হয়েছিল ভারত থেকেই, সে কথা অনেকেরই অজানা। সম্প্রতি ভারতে এসে ফ্যাশন এবং এই দেশ নিয়ে তাঁর মনোভাব ব্যক্ত করেছেন টমি।
নিই ইয়র্কের রাস্তায় হোর্ডিংয়ে তাঁর ছবি কিংবা সারা বিশ্বে চর্চার বহু আগে, কেরিয়ারের শুরুর দিকে অনুপ্রেরণার সন্ধানে ভারতে আসেন টমি। টমি জানিয়েছেন, প্রায় চার দশক আগে তিনি ভারতে আসেন। মুম্বইয়ের সান্তাক্রুজ়েই একটি কারখানায় তাঁর জীবনের প্রথম কালেকশন তৈরি করেছিলেন টমি। তিনি বলেন, ‘‘এই ভাবেই আমার কেরিয়ার শুরু হয়েছিল। তার পর দীর্ঘ দিন পর আবার আমি ভারতে এলাম।’’
টমি হিলফিগারের তৈরি পোশাক তার উজ্জ্বল রং এবং স্পোর্টস স্টাইলের জন্য পরিচিত। তবে টমি জানিয়েছেন, কোনও নতুন পোশাকের কালেকশন তৈরির জন্য নয়, বরং তিনি ভারতে এসেছিলেন অনুপ্রেরণার সন্ধানে। সেখানে মুম্বইয়ের সমাজজীবন, স্থানীয় শিল্পীদের পোশাক তৈরির ধরন, নানা ধরনের রং পরবর্তী সময়ে তাঁকে শিল্পী হিসেবে সাহায্য করে। টমি জানিয়েছেন, তার পর থেকে ভারত তাঁর কাছে উৎপাদনের জায়গার পরিবর্তে ‘অনুপ্রেরণা’ হিসাবে পরিচিতি পায়।
আরও পড়ুন:
তবে ভারতের সঙ্গে টমির শুধুই পোশাকের সম্পর্ক নয়। ভারতীয় সংস্কৃতি যে এখনও তাঁর জীবনে গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে রয়েছে, সে কথাও জানিয়েছেন তিনি। ভারতীয় খাবারও তাঁর বিশেষ পছন্দের। টমির কথায়, ‘‘আমার তন্দুরি পছন্দ। কিন্তু বাটার চিকেন থাকলে, সেটাকে না বলব না।’’
১৯৮৫ সালে টমি তাঁর নামেই পোশাকের কোম্পানির শুরু করেন। তার নেপথ্যেও ছিল ভারতীয় যোগসূত্র। টমির কোম্পানির প্রথম বিনোয়গকারী ছিলেন ভারতীয় বংশোদ্ভুত ব্যবসায়ী মোহন মুরজানি। টমি বলেন, ‘‘আমি কেলভিন ক্লেইনের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কিন্তু মোহন আমাকে নিষেধ করে। বলে যে ‘এক সঙ্গে টমি হিলফিগার’ শুরু করা যাক।’’ প্রথাগত ফর্মাল পোশাকের পরিবর্তে আরামদায়ক এবং গ্রাহকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে, এ রকম পোশাকই বাজারে নিয়ে আসেন টমি। এমন পোশাক, ক্রেতারা যা ব্যবহার করে বাড়ির পোশাকের মতো স্বচ্ছন্দ মনে করেন। তার পরবর্তী ফ্যাশন বিপ্লব অনেকেরই জানা। বিষয়টিকে ‘ক্যাজ়ুয়ালাইজ়েশন অফ আমেরিকা’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন টমি।
টমি হিলফিগারের পোশাক এখন তারকা থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু বিশ্বের প্রথম সারির এক পোশাক কোম্পানির জন্মলগ্নের সঙ্গে যে ভারতীয় সংস্কৃতি জড়িয়ে রয়েছে, তা এতকাল অজানাই ছিল।