Advertisement
E-Paper

শাহরুখ থেকে দীপিকা, এক চোখেতেই মন মজল সকল তারকার! কী এই ‘ইভিল আই’?

যা কিছু খারাপ, মন্দ, তার আঁচ থেকে বাঁচতে তুকতাক, টোটকার ব্যবহার নতুন নয়। হাজার হাজার বছর ধরে চলে আসা প্রথা সঞ্চারিত হয়েছে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে। এখন তা হয়ে উঠেছে ফ্যাশনের অন্যতম অঙ্গ।

Evil eye

সকলের নয়নের মণি এখন ‘ইভিল আই’। ছবি: সংগৃহীত।

অঙ্কিতা দাশ

শেষ আপডেট: ০২ মে ২০২৪ ১০:২০
Share
Save

ঘন নীল রঙের, গোলাকার কাচের একটি বস্তু। যার মাঝখানটা দেখতে অনেকটা চোখের মতো। শয়তানের চোখ? তা হলফ করে বলা মুশকিল! কিন্তু তা নিয়েই বিশ্ব জুড়ে এখন হইচই।

Evil Eye

বাজার ছেয়ে গিয়েছে ‘ইভিল আই’-তে। ছবি: সংগৃহীত।

ইনস্টাগ্রামে ‘হ্যাশট্যাগ ইভিল আই’ ব্যবহারের অঙ্ক দেখলে নিজের চোখই কপালে ওঠার জোগাড়। হলিউডের মডেল, অভিনেত্রী কিম কার্দাশিয়ান থেকে বলিউডের বাদশা শাহরুখ খান, সকলেই মজেছেন এই চোখে। বলিউডের তরুণ ব্রিগেড কিয়ারা, আলিয়া, জাহ্নবী থেকে অনন্যা। আবার দীপিকা, ক্যাটরিনা, প্রিয়াঙ্কা, শিল্পা শেট্টি কুন্দ্রা— ইদানীং সকলের গয়নাতেই ‘ইভিল আই’-এর ছোঁয়া রয়েছে। বিশ্বের তাবড় তাবড় শিল্পপতি থেকে সাধারণ ব্যবসায়ী সকলের শরীরেই ইভিল আই। তা দেখে কলেজপড়ুয়া থেকে পাশের ফ্ল্যাটের কিশোরীরাও সেই চিহ্ন দেওয়া গয়না খুঁজছেন। গয়নায় ‘ইভিল আই’-এর ব্যবহার শুধুই কি ফ্যাশন ট্রেন্ড? না কি এই বস্তুটির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে হাজার বছরের ইতিহাস?

Sara Ali Khan, Janhvi Kapoor and Ananya Pandey

এই প্রজন্মের অভিনেত্রী সারা, জাহ্নবী, অনন্যারাও মজেছেন ‘ইভিল আই’ গয়নায়। ছবি: সংগৃহীত।

গয়নায় ‘ইভিল আই’ ব্যবহারের হুজুগ খুব বেশি দিনের নয়। তবে এই ‘ইভিল আই’ আসলে ৫০০০ বছরেরও বেশি পুরোনো একটি ধারণা। নীলনদের দেশ মানে মিশরীয় সভ্যতায় তার আবির্ভাব। পরে অবশ্য পূর্ব ইউরোপ, পশ্চিম এশিয়া, দক্ষিণ এশিয়া, আফ্রিকা, ক্যারিবিয়া, লাতিন আমেরিকা হয়ে এক সময়ে ভারতীয় সংস্কৃতিতেও ঢুকে পড়ে এই বিশেষ চোখটি। গ্রিক দার্শনিক প্লেটোর ‘সিম্পোসিয়াম’-এও ‘ইভিল আই’-এর প্রতি মানুষের বিশ্বাস এবং তার ব্যবহারের নানা উল্লেখ পাওয়া যায়। চিনা ‘ফেংশুই’ শাস্ত্রেও এই জিনিসটি বেশ প্রচলিত।

অন্যের নজর যাতে না লাগে, তা নিশ্চিত করাই কাজ এই ‘ইভিল আই’-এর। শিশুদের হাত-পায়ে কালো কার, কোমরে কিংবা গলায় জালকাঠি পরানোর যেমন চল ছিল নজর কাটানোর জন্য, এ-ও তেমন। কুনজর তাড়ানোর প্রাচীন সেই চিহ্নই এখন ফ্যাশনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। হলিউড, বলিউড হয়ে পৌঁছে গিয়েছে টলিপাড়ার তারকাদের কাছেও। গোটা বিশ্ব এখন একই চোখের দিকে তাকিয়ে।

Actor Amartya Roy

পোশাক, গয়না— এ সব নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে ভালবাসেন তরুণ অভিনেতা অমর্ত্য রায়। সম্প্রতি ‘ময়দান’ ছবিতে অজয় দেবগণের সঙ্গে দেখা গিয়েছিল বাংলার এই অভিনেতাকে। অমর্ত্যের নিজস্ব রুচি-পছন্দ অনেকটাই ‘হিপ্পি’ সংস্কৃতি ঘেঁষা। গান-বাজনার সঙ্গে তাঁদের ফ্যাশন নিয়ে চর্চা করতে গিয়েই ইভিল আই সম্পর্কে জানা। অমর্ত্য বলেন, “আমিও গলায় ইভিল আই লকেট পরি। তবে বিশ্বাস নয়, ওই সংস্কৃতি এবং নীল রং এই দুটোই আমার পছন্দের।”

Evil Eye

চায়ের কাপ থেকে মোবাইল ফোনের কভার— সবেতেই কড়া নজর। ছবি: সংগৃহীত।

গ্রিক পুরাণে বর্ণিত ‘ইভিল আই’-এর আকার ক্যারমের স্ট্রাইকারের চেয়ে খানিক বড়। স্বচ্ছ, নীল রঙের কাচের বস্তুটির একদম মাঝখানে থাকে চোখের মণির মতো কালো রঙের একটি বিন্দু। সেই বিন্দুটিকে ঘিরে রয়েছে আরও দু’টি স্তর। বাইরেটা আকাশি নীল এবং তার পরের অংশটি সাদা। ঘন নীল অংশটির উপর দিকে থাকে ছোট একটি ছিদ্র। সেই ছিদ্র দিয়ে গলানো হয় মোটা সুতো বা দড়ি। অনেকটা হারের সঙ্গে থাকা লকেটের মতোই। ওই সুতো থেকে ঝুলতে থাকে ‘ইভিল আই’।

Evil Eye accessories

চাবির রিং থেকে জুতো— নজর কাটানোর এই চিহ্ন ছেয়ে রয়েছে সর্বত্র। ছবি: সংগৃহীত।

তবে ‘ইভিল আই’ শুধু দরজার কোণেই আটকে থাকেনি। ভৌগোলিক কাঁটাতার, ধর্মীয় রীতি-রেওয়াজ পেরিয়ে বিভিন্ন সংস্কৃতির মধ্যে দিয়ে যেতে যেতে ‘ইভিল আই’ হয়ে উঠেছে বাঙালির বসার ঘরে কাচের আলমারিতে সাজানো ‘শোপিস’, গাড়ির ‘রিয়ার ভিউ মিরর’-এ ঝুলতে থাকা ‘নজর বাট্টু’, অফিসের ডেস্কে রাখা ‘লাকি চার্ম’। হালে তা হয়ে দাঁড়িয়েছে গয়নাশিল্পের নকশাও। ব্রেসলেট, হার, অ্যাঙ্কলেট, কানের দুল, আংটি তো বটেই, সঙ্গে ওয়াচ চেন, চাবির রিং সবেতেই ঢুকে পড়েছে ইভিল আই।

Evil Eye Bracelet

‘ইভিল আই’ ব্রেসলেট। ছবি: সংগৃহীত।

অভিনয়, শিল্প, সঙ্গীত, ফ্যাশন জগতের তাবড় নক্ষত্রেরা সেই ইভিল আই আঁকা নানা গয়নায় মজেছেন। সারা আলি খানের গলায় দেখা যায় ইভিল আই দেওয়া হার, তো অভিষেক বচ্চন আবার ব্রেসলেট পরেন ইভিল আই আঁকা। বাদ যাচ্ছেন না এই তারকাদের অনুগামীরাও। ফলে ঘরে ঘরে ছেয়ে গিয়েছে ‘ইভিল আই’। বিশ্ব জুড়ে একটি চিহ্ন নিয়ে এমন উৎসাহ দেখে নড়েচড়ে বসেছে ‘সোয়ারোভস্‌কি’, ‘শ্যানেল’, ‘পিপা বেলা’-র মতো আন্তর্জাতিক ফ্যাশন সংস্থাগুলি। লক্ষ কোটি টাকা মূল্যের ‘ইভিল আই’ গয়না এ দেশের মধ্যবিত্তের হাতের নাগালে এনে দেওয়ার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে ‘ক্যারেটলেন’, ‘ব্লু স্টোন’, ‘মিয়া’-র মতো শৌখিন গয়না প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলিও। চলতি বৈশাখেই বিয়ে হয়েছে গুরমিত এবং সৃজিতার। অনেক ঝড়ঝাপটা পেরিয়ে সম্পর্ক পরিণতি পেয়েছে। এই সম্পর্কে যেন কারও নজর না লাগে, সে কথা ভেবেই ‘ইভিল আই’ মঙ্গলসূত্র কিনেছিলেন তাঁরা। সৃজিতা বলেন, “আমাদের সংস্কৃতিতে ইভিল আই পরার চল নেই। কিন্তু শুনেছি, এই জিনিসটি খারাপ নজর কাটিয়ে দেয়। তাই বিশেষ দিনের জন্য হিরে বাঁধানো ইভিল আই মঙ্গলসূত্র কিনেছিলাম।”

Deepika Padukone, Shah Rukh Khan and Abhishek Bachchan

দীপিকা, শাহরুখ থেকে অভিষেক— সকলেই বাঁধা পড়েছেন ‘ইভিল আই’-এর নজরে। ছবি: সংগৃহীত।

মায়ানগরী মুম্বইতে বচ্চন এবং কপূরদের সম্পর্ক পারবারিক। সেই সূত্র ধরেই প্রতি বছর অভিনেতা রণবীর কপূরের বোন রিদ্ধিমা কপূর সাহনি, অভিষেক বচ্চনের হাতে রাখি বাঁধেন। নিজের তৈরি ‘ইভিল আই’ মোটিফ দেওয়া রাখি অভিষেকের হাতে পরিয়েছিলেন রিদ্ধিমা। হলিউডের পপ-গায়ক জাস্টিন বিবারের জন্যও ইভিল আই ব্রেসলেটের নকশা এঁকেছিলেন তিনি। খুঁজলে তেমন রাখি এখন যদুবাজার কিংবা লেকমার্কেটেও পাওয়া যাবে। অফিসে আসার সময়ে লোকাল ট্রেনের হকার দাদাদের থেকে রোজই কোনও না কোনও জিনিস কেনেন সোমদত্তা। টিপ, কানের দুল, সেফটিপিন-এর পাশাপাশি ‘ইভিল আই’ দেওয়া এক জোড়া অ্যাঙ্কলেটও কিনেছিলেন। হলিউডের তারকাদের পছন্দের ইভিল আই এখন এ ভাবেই ছড়িয়ে পড়েছে।

Evil Eye accessories

পোশাকে, ব্যাগেও রয়েছে ‘ইভিল আই’ নকশা। ছবি: সংগৃহীত।

ছোট থেকেই শাহরুখ খানের অন্ধ ভক্ত উত্তর কলকাতার মেয়ে কলেজপড়ুয়া সমাপ্তি। আগামী মাসে তাঁর জন্মদিন। মেয়ের আবদার জন্মদিনে তাঁর ‘ইভিল আই’ গয়না চাই। কারণ, তাঁর পছন্দের অভিনেতার হাতে ওই জিনিসটি রয়েছে। তেমন গয়না খুঁজতে ইতিমধ্যেই পাড়ার গয়নার দোকানে ঢুঁ মেরেছেন সমাপ্তির মা-বাবা। বহু দিনের চেনা সব দোকানে তন্নতন্ন করে খুঁজেও ‘ইভিল আই’-এর সন্ধান মেলেনি। পাড়ার সবচেয়ে বড় দোকান রক্ষিত জুয়েলার্স। তার কর্ণধার সৌগত রক্ষিত বলেন, “এখনও বানাইনি, তবে হাতে সময় থাকলে অর্ডার দিয়ে যেতে পারেন। বানিয়ে দিতে পারি। অনেকেই এ সব চাইছেন আজকাল।” অনেকে চাইলেও সকলে নন। যেমন তরুণী অভিনেত্রী অনুষা বিশ্বনাথন। তিনি বলেন, ‘‘আমার ‘ইভিল আই’ ভাল লাগে। কিন্তু ও রকম গয়না আমার নেই।’’ অনুষা জানান, তিনি এখনও মা-দিদিমার গয়নার পছন্দে বিশ্বাস রাখেন। তবে ব্যাপার হল, এখন মা-দিদিমাদের পছন্দও বদলে গিয়েছে। তাঁরাও ঝুঁকছেন ‘ইভিল আই’-এর দিকে।

Anusha Viswanathan

‘কুনজর’ থাকুক বা না থাকুক, নতুন ধরনের একটি চিহ্ন তো পাওয়া গিয়েছে। গয়না না কিনলেও কেউ কিনছেন সেই চোখের আকারে তৈরি সুগন্ধি মোমবাতি, তো কেউ কিনছেন টেবিল ক্লথ, কোস্টার, টোট ব্যাগ। আর এ ভাবেই নজর কাড়ছে নজর কাটানোর চিহ্ন।

Fashion Trend Evil Eye jwellery Social Media Trending

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।