তৃণমূলে তাঁর সহকর্মীরা বলেন, মহুয়া হলেন ‘ইরিপ্রেসিব্ল’! অর্থাৎ, ‘অদম্য’।
মা কালী হোক বা কাঁধের ঝুলি— মহুয়া মৈত্রকে দমিয়ে রাখা যাবে না! আশ্চর্য নয় যে, তৃণমূলে তাঁর সহকর্মীরা বলেন, মহুয়া হলেন ‘ইরিপ্রেসিব্ল’! অর্থাৎ, ‘অদম্য’। ইদানীং অবশ্য তৃণমূলের মুখপাত্র তথা রাজ্য সম্পাদক কুণাল ঘোষও অদম্য হয়ে উঠেছেন। তবে সে রাজ্য স্তরে। মহুয়া জাতীয় স্তরের প্রতিভা।
মা কালী বিতর্কে তাঁকে কোণঠাসা করার চেষ্টা করেছিল বিজেপি। মহুয়া পঞ্চতন্ত্রের বই খুলে বসেছিলেন। সেই বিতর্কে তাঁর নামে একাধিক এফআইআর করেছিল বিজেপি। এমনকি, তাঁর নিজের দল তৃণমূলও মা কালী বিতর্কে নিদজেদের সাংসদ মহুয়ার ওই মন্তব্য থেকে দূরত্ব রচনা করেছিল। দলের তরফে টুইট করে জানানো হয়েছিল, ওই মন্তব্য মহুয়া ব্যক্তিগত স্তরে করেছেন। দল ওই মন্তব্য সমর্থন করে না।
অন্য কোনও নেতা বা নেত্রী হলেও দলের ওই প্রকাশ্য অবস্থানের পর খানিকটা গুটিয়ে যেতেন। কিন্তু মহুয়া তো অদম্য! তিনি উল্টে বিজেপিকে আক্রমণের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। একের পর এক টুইট করা শুরু করেছিলেন। বিভিন্ন চ্যানেলে গিয়ে তাঁর বক্তব্য আরও জোরাল ভাবে পেশ করতে শুরু করেছিলেন। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের গ্রেফতারি এবং সংশ্লিষ্ট দুর্নীতির বিষয়গুলি এসে পড়ায় কালী বিতর্ক থেকে বিজেপির মনোযোগ একটু অন্যদিকে গিয়েছে। কিন্তু মহুয়া তৈরি আছেন। বিজেপি কিছু বললেই পাল্টা দেবেন!
যেমন দিয়েছেন তাঁর ফরাসি ফ্যাশন ব্র্যান্ড ‘লুই ভিতোঁ’র ব্যাগ নিয়ে। ভারতীয় মুদ্রায় যার দাম প্রায় দু’লক্ষ টাকা (শুনে অনেকের ‘জিন্দেগি না মিলেগি দোবারা’য় ফারহান আখতারের ‘ব্যাগবতী’র কথা মনে পড়ে যেতে পারে)।
এ কথা অনস্বীকার্য যে, মহুয়া প্রথম থেকেই সাজগোজ এবং ফ্যাশন সচেতন। টিপটপ চুল, মুখ-ঢাকা গগল্স, টানটান হ্যান্ডলুম শাড়ি— মহুয়াকে এ ভাবেই চেনে গোটা দেশ। সে সবের সঙ্গেই তাঁর সর্বক্ষণের সঙ্গী ওই মহার্ঘ ব্যাগটিও। মহুয়ার ঘনিষ্ঠেরা জানেন, ওই পেল্লাই ব্যাগে তিনি জলের বোতল, ময়শ্চারাইজার, সানস্ক্রিন লোশন-সহ আরও বহুবিধ জিনিস রেখে থাকেন। তাতে বিজেপির আপত্তি ছিল না। নেইও। তাদের বক্তব্য, সোমবার সংসদে যখন মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে ঝাঁজালো বক্তৃতা করছেন মহুয়ার সতীর্থ সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার, তখন তাঁর পাশের আসনে বসা মহুয়া সন্তর্পণে তাঁর দামী ব্যাগটি আসন থেকে নামিয়ে পায়ের কাছে রেখে দেন। দৃশ্যটি ধরা পড়েছে লোকসভার ক্যামেরায়। এবং নিমেষে সেটি ভাইরাল হয়েছে। তেমনই দ্রুত ‘ট্রোল্ড’ হতে শুরু করেছেন মহুয়া। বিজেপির বক্তব্য, মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে যখন তাঁরই দলীয় সাংসদ বক্তৃতা করছেন, তখন মহুয়া সন্তর্পণে তাঁর বহুমূল্য ব্যাগটি নজরের আড়ালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। বিজেপির শেহজাদ পুনাওয়ালা যেমন টুইট করেছেন, ‘দ্বিচারিতার এটাই মুখ।’
Marie Antoinette Mahau Moitra hiding her expensive bag during a discussion on price rise- hypocrisy has a face & its this! A party that believes in TMC- Too Much Corruption discusses price rise after not cutting VAT & alliance with UPA that gave run away inflation of 10% plus pic.twitter.com/VByJsk4tBV
— Shehzad Jai Hind (@Shehzad_Ind) August 1, 2022
প্রসঙ্গত, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের গ্রেফতারি এবং তাঁর ‘ঘনিষ্ঠ’ মডেল-অভিনেত্রী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের হেফাজত থেকে বিপুল টাকা উদ্ধারের পর থেকেই তৃণমূল যথেষ্ট ‘অস্বস্তিতে’। অহরহ তাদের বিরোধী শিবির নিশানা করেছে। এই পরিস্থিতিতে ‘আক্রমণই রক্ষণের শ্রেষ্ঠ উপায়’ পথে চলে তারা মূল্যবৃদ্ধি-সহ বিভিন্ন বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে পাল্টা আক্রমণের রাস্তা নিয়েছে। সোমবার লোকসভায় সই আক্রমণকে নাটকীয় রূপ দিয়েছেন কাকলি। তিনি সভার মধ্যেই কাঁচা বেগুনে কামড় বসিয়েছেন।
কিন্তু ঘটনাচক্রে, ঠিক সেই সময়েই মহুয়া ‘ব্যাগবতী’র স্থানান্তরকরণ ঘটেছে। যে সূত্রে তাঁকে বিঁধতে শুরু করেছে বিজেপি। কিন্তু মহুয়া তো অদম্য! ফলে তিনি সটান জানিয়েছেন, ২০১৪ সালে তিনি এক ফ্যাশন পত্রিকাকে দেওয়ার সাক্ষাৎকারে বলে দিয়েছিলেন যে, তাঁর প্রথম ‘লুই ভিতোঁ’র ব্যাগটি তাঁকে তাঁর স্বামী উপহার দিয়েছিলেন। সেই থেকেই এই ধরনের ব্যাগ তাঁর সঙ্গী। এ বারের বিতর্কিত হাতব্যাগের বিভিন্ন সময়ের ছবির ‘কোলাজ’ বানিয়ে টুইট করেছেন, ‘২০১৯ থেকেই আমি সংসদের ঝোলাওয়ালা ফকির। ঝোলা লেকে আয়ে থে, ঝোলা লেকে চল পড়ে গা’।
Jholewala fakir in Parliament since 2019.
— Mahua Moitra (@MahuaMoitra) August 2, 2022
Jhola leke aye the… jhola leke chal padenge… pic.twitter.com/2YOWst8j98
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজেকে ‘ঝোলাওয়ালা ফকির’ বলেছিলেন। তখন বিরোধীরা তাঁকে মনে করাতে ভোলেননি, যে এই ‘ফকির’ই ১০ লক্ষ টাকার স্যুট পরে বিদেশ সফরে যান। মহুয়ার তাঁর ‘ঝোলা’র প্রসঙ্গ উল্লেখ করে ঝুলি থেকে সেই প্রসঙ্গই বার করেছেন।
সাধে কি তৃণমূলে তাঁর সহকর্মীরা বলেন, মহুয়া হলেন ‘ইরিপ্রেসিব্ল’! ‘অদম্য’।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy