লিম্ফ্যাটিক ফাইলেরিয়াসিস’ দূরীকরণের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। ফাইল ছবি।
আগামী চার বছরের মধ্যে দেশ থেকে ‘লিম্ফ্যাটিক ফাইলেরিয়াসিস’ দূরীকরণের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি বলছে, রাজ্যের পাঁচটি জেলা ও দু’টি স্বাস্থ্য জেলায় মশাবাহিত ওই রোগের প্রকোপ এখনও রয়ে গিয়েছে। অর্থাৎ, ওই সাতটি জেলায় ফাইলেরিয়াসিস বা গোদ ছড়ানোর ভাল রকম আশঙ্কা রয়েছে। তাই এই রোগ প্রতিরোধে সাতটি জেলার প্রতিটি জনগোষ্ঠীর প্রত্যেক সদস্যকে ওষুধ খাওয়ানোর (মাস ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) এ বছরের কর্মসূচি শুরু করছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর।
সূত্রের খবর, রাজ্যে এই মুহূর্তে গোদে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৫০ হাজারেরও বেশি। আগামী দিনে ওই সাতটি জেলায় সংক্রমণ যাতে আর না ছড়ায়, সে জন্য ওষুধ খাওয়ানোর কর্মসূচিতে কোনও খামতি রাখতে চাইছে না স্বাস্থ্য দফতর। ওই সমস্ত জেলার মেডিক্যাল কলেজের কমিউনিটি মেডিসিন-সহ অন্যান্য বিভাগের চিকিৎসকদেরও প্রতিটি এলাকায় গিয়ে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি, এই কর্মসূচিতে নজরদারি চালাতে সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে ‘অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব হাইজিন অ্যান্ড পাবলিক হেলথ’-এর। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, মুর্শিদাবাদ, পশ্চিম বর্ধমান, বীরভূম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া জেলা এবং রামপুরহাট ও বিষ্ণুপুর স্বাস্থ্য জেলার পুরসভা ও ব্লক মিলিয়ে ৩৭টি জায়গায় এখনও ফাইলেরিয়াসিসের সংক্রমণ ছড়ানোর প্রবণতা রয়েছে। তাই আগামী ১০ থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি ওই ৩৭টি অঞ্চলের প্রায় ৭০ লক্ষ মানুষকে ফাইলেরিয়াসিসের ওষুধ খাওয়ানো হবে। বাড়ি বাড়ি ঘুরে ১২০০-র বেশি আশাকর্মী ও স্বাস্থ্যকর্মীরা সেই কাজ করবেন।
স্বাস্থ্য আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, ইতিমধ্যেই যাঁরা ওই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে এই ওষুধে কোনও কাজ হবে না। কিন্তু যাঁরা এখনও আক্রান্ত হননি, অথচ মশার কামড়ে সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, তাঁরা ওই ওষুধে সুরক্ষিত থাকবেন। বছরে এক বার করে, টানা পাঁচ বছর এই ওষুধ খেয়ে যেতে হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রককে ওষুধটি সরবরাহ করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।
স্বাস্থ্য আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, ফাইলেরিয়াসিসের অধীনে রয়েছে লিম্ফডিমা (পা ফুলে যাওয়া) এবং হাইড্রোসিল (অণ্ডকোষ ফুলে যাওয়া) নামে দু’টি রোগ। এই মুহূর্তে প্রায় ৩৫ হাজার মানুষ লিম্ফডিমায় এবং প্রায় সাড়ে ১৪ হাজার মানুষ হাইড্রোসিলে আক্রান্ত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তরফে এ রাজ্যে ‘নেগলেকটেড ট্রপিক্যাল ডিজ়িজ়’ (এনটিডি) কর্মসূচির দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক প্রতিম রায় বলেন, ‘‘গোদে আক্রান্ত রোগীরা শুধু শারীরিক কষ্টই পান না, মানসিক, সামাজিক ও আর্থিক ভাবেও অনেকে ভেঙে পড়েন। তাই এই রোগকে প্রতিরোধ করতে ও নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে এখনও যে সমস্ত জায়গায় গোদের প্রাদুর্ভাব রয়েছে, সেখানকার সমস্ত মানুষকে ওষুধ খেতে হবে।’’
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, কিউলেক্স মশা কামড়ানোর অন্তত পাঁচ-সাত বছর পরে গোদের লক্ষণ দেখা দিতে শুরু করে। কিন্তু পর পর পাঁচ বছর যদি ওষুধ খাওয়া হয়, তা হলে ওই রোগ থেকে সুরক্ষিত থাকা সম্ভব। যদিও এখনও অনেক জেলার বহু জায়গায় ওষুধ খাওয়ার ব্যাপারে অনেকের অনীহা দেখা যায়। প্রতিম বলেন, ‘‘মানুষকে সচেতন হতে হবে। তবেই রাজ্যের আগামী প্রজন্মকে এই সংক্রমণ থেকে মুক্তি দেওয়া সম্ভব।’’
‘অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব হাইজিন অ্যান্ড পাবলিক হেলথ’-এর অধিকর্তা রঞ্জন দাস জানান, দেশ থেকে ফাইলেরিয়াসিস দূর করতে আগামী মার্চে কলকাতায় একটি বড় সচেতনতা শিবির করা হবে। অন্যান্য রাজ্যের যে সব জেলায় এখনও ফাইলেরিয়াসিসের প্রকোপ রয়েছে, সেই সমস্ত জায়গার মেডিক্যাল কলেজের শিশু রোগ, মেডিসিন, ত্বক ও কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসকেরা তাতে অংশ নেবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy