Advertisement
E-Paper

ডিজ়াইনার রথেই নাকি মন মজেছে কলকাতার! কেমন আছেন তবে ডোমপাড়ার রথশিল্পীরা?

এককালে উত্তর কলকাতার ডোমপাড়ায় তৈরি হত রথ। এ সময়টিতে ভিড় জমত সারা শহরের নানা প্রান্তের বাসিন্দাদের। এখন ডিজ়াইনার রথের যুগে, কেমন আছেন সেখানকার শিল্পীরা?

রথের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত ডোমপাড়া।

রথের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত ডোমপাড়া। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

উপাসনা বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০২৪ ১৭:০১
Share
Save

গিরিশ পার্ক থেকে বিডন স্ট্রিট মোড়ের দিকে যেতে বাঁ দিকে পড়ে লিবার্টি সিনেমা। তার গা দিয়ে বাঁ দিকে ঢুকলেই রাজা গুরুদাস স্ট্রিট। সে রাস্তাই স্থানীয়দের কাছে পরিচিত ‘ডোমপাড়া’ নামে। কয়েক বছর আগেও রথের সময়ে গমগম করত ডোমপাড়া। কারণ সেখানে তৈরি হত রথ। ইদানীং স্মার্টফোনমুখী শিশুদের বিশেষ রথ টানতে দেখা যায় না। রথ বিক্রির কেমন অবস্থা? কী করছেন এখন ডোমপাড়ার শিল্পীরা?

‘ডোমপাড়া’য় বাস করে কয়েক ঘর শিল্পী-পরিবার। বংশপরম্পরায় তাঁরা হাতের কাজ করে জীবনধারণ করে আসছেন। শিল্পী সজল পাত্র কয়েক পুরুষ ধরে এই ডোমপাড়ারই বাসিন্দা। তিনি বলেন, “হাতের কাজের পাড়া এটা, একশো বছর ধরে এখানে এ সব কাজ হয়। আমরা কয়েক পুরুষ ধরে এই কাজ করছি।’’ তাঁদের বংশে কে প্রথম এই কাজ শুরু করেছিলেন, মনেও করতে পারেন না তিনি। এখন যে রথ টানার চল নেই তেমন। তবে কি বিক্রিবাটা কমে গিয়েছে? উত্তরে জানা গেল, “বিক্রি ভালই। খারাপ নয়।”

কিন্তু, আজকাল তো রাস্তাঘাটে শিশুদের তেমন রথ টানতে দেখা যায় না। তা হলে কারা কিনছেন রথ? সময়ের সঙ্গে সমাজের চাহিদা যে ভাবে বদলায়, সে ভাবেই বদলায় উদ্‌যাপনের ধরন। জানা গেল, সময়ের সঙ্গে কমেছে ছোট কাঠের রথের চাহিদা। কিন্তু, তার বদলে অনেকেই চাইছেন ‘ডিজ়াইনার রথ’। ইন্টারনেটের ছবি দেখিয়ে, অর্ডার দিয়ে যাচ্ছেন নিজেদের পছন্দ মতো রথ, যা মূলত হাতের কাজ । বিশেষ ভাবে ফরমায়েশ দিয়ে বানানো এই রথের চাহিদা কিন্তু আসছে বিভিন্ন গেরস্থ বাড়ি থেকেই। ইনস্টাগ্রামের যুগে, বেশ করে সাজিয়ে-গুছিয়ে বাড়ির জগন্নাথকে ‘ডিজ়াইনার রথ’-এ বসিয়ে ঘোরালে ভাল ছবি যে ওঠে, তাতে তো সন্দেহ নেই। এই ‘ডিজ়াইনার রথ’-এর দাম শুরু ১০০০-১২০০ টাকা থেকে, এর দাম উঠতে পারে বারো-চোদ্দ এমনকি, কুড়ি হাজার অবধিও। যার যেমন নকশা পছন্দ, তার উপর নির্ভর করে দাম।

ডোমপাড়ার ডিজ়াইনার রথ।

ডোমপাড়ার ডিজ়াইনার রথ। — নিজস্ব চিত্র।

তা হলে তো ব্যবসা বেশ ভালই চলছে বলে বোধ হয়? “মোটেই না। আসল কথা হল, আর্ট কলেজের ছাত্ররা সব কাজ তোলে, আমাদের দিয়ে করায়। কমিশনটা ওরা খায়, আমাদের কিছুই লাভ হয় না।”, উত্তর তরুণ শিল্পী স্নেহাশিস পাত্রের। পড়াশোনার পাশাপাশি বাপ-ঠাকুরদার এই হাতের কাজের ব্যবসা চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার শখ তাঁর। বাবা-ঠাকুরদাকে দেখে দেখেই কাজ করতে শিখেছেন তিনি।

ভবিষ্যতে কি এই কাজেই থাকার ইচ্ছে? “হ্যাঁ, এই ব্যবসাটা বাড়ানো আমার স্বপ্ন। যাতে আর্ট কলেজের ছাত্রদের বদলে অর্ডারটা সরাসরি আমাদের কাছেই আসে, সেই ব্যবস্থা করতে চাই।” হলুদ রথের চূড়ায় লাল রং বুলোতে বুলোতে বললেন স্নেহাশিস।

বেতের তৈরি রথ।

বেতের তৈরি রথ। — নিজস্ব চিত্র।

তবে একেবারেই ভিন্ন কথা শোনা গেল এক খুদে শিল্পী প্রিয়াংশু জানার মুখে। স্কুলপড়ুয়া প্রিয়াংশু হাতের কাজে বেজায় দক্ষ। এই কাজই বড় হয়ে করতে চায় কি না জানতে চাইলে, তার সটান জবাব, “না।’’

—‘‘কেন? কাজ করতে ভাল লাগে না?’’

—‘‘খুব ভাল লাগে।’’

—‘‘তা হলে?’’

“এই কাজ করে সারা জীবন খাবে কী করে,” পাশ থেকে প্রশ্ন তুললেন আর এক কর্মী, উজ্জ্বল কাটারি। সঙ্গ দিলেন শিল্পী জিতু পোড়েল। তিনি বলেন, “এই তো রথের মাস চলে গেল, এর পর কী করব? পুজো না-আসা অবধি তো আর কোনও কাজ নেই।” হাতের কাজের রথের বিক্রি বাড়লেও, সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কমেছে সাধারণ কাঠের রথের বিক্রি। মরসুমে লাখ টাকা অবধিও বিক্রি হয়, কিন্তু তা থেকে পারিশ্রমিক দিতে হয় অনেক শিল্পীকে, সঙ্গে রয়েছে আরও নানা খরচ, শিল্পীদের হাতে খুব বেশি কিছু থাকে না। উৎসবের মরসুম চলে গেলে তো আবার কাজ নেই, ওই টাকায় এই মূল্যবৃদ্ধির যুগে দিন চালানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। এমনই বক্তব্য শিল্পীদের।

এমন চললে কি সত্যিই নতুন প্রজন্ম এগিয়ে আসবে ডোমপাড়ার হাতের কাজের ঐতিহ্যকে এগিয়ে নিয়ে যেতে? না কি এই শহরের অনেক ঐতিহ্যের মতোই হারিয়ে যাবে কলকাতার এই হাতের কাজের পাড়া?

শিল্পী প্রীতম পোড়েল।

শিল্পী প্রীতম পোড়েল। — নিজস্ব চিত্র।

একটি ছোট্ট ত্রিপলের নীচে মিলল এক অন্য রকম আশার আভাস। বৃষ্টিমাখা সকালে এক নীল ত্রিপলের ভিতর মাথা নীচু করে মন দিয়ে রথে রং করতে ব্যস্ত প্রীতম পোড়েল। প্রীতম সেরিব্রাল পলসির শিকার। পাড়ারই ছেলে প্রীতম অন্য শিল্পীদের সঙ্গে থেকে থেকে শিখে নিয়েছে হাতের কাজ। নিজের মনের জোরে আর সঙ্গী শিল্পীদের সহায়তায় এই কাজ করেই দিব্যি দিন গুজরান করেন প্রীতম। প্রকৃত অর্থেই, শিল্পীদের যে তথাকথিত ভাবে স্বাভাবিক হওয়ার কোনও দায় নেই। তাঁরা যে সব সময়েই ‘স্পেশ্যাল’!

Ratha Yatra Celebration Ratha Yatra Artists North Kolkata

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।