সারা ক্ষণ খাই খাই করার প্রবণতা নিয়ে আলোচনায় মনোবিদ। ছবি: সংগৃহীত।
বাঙালির খাদ্যপ্রেম বরাবরই বেশি। আলাদা কোনও উৎসব-অনুষ্ঠানের দরকার পড়ে না, চোখের সামনে মুখরোচক খাবার দেখলেই নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা বেশ মুশকিল হয়ে পড়ে। অনেকের তো আবার মনখারাপ কিংবা যত দুঃখই হোক, বিরিয়ানি খেলেই নাকি সব ঠিক হয়ে যায়। অফিসে কোনও কাজের জন্য দারুণ প্রশংসিত হয়েছেন, উদ্যাপন করতেই ঢুঁ দিলেন রেস্তরাঁয়। কিন্তু সমস্যা হল অন্য জায়গায়। খাওয়ার সময় পরিমাণের কথা একেবারেই মাথায় এল না। কিন্তু খাওয়ার পর উপলব্ধি করলেন, এতটা না খেলেই বোধ হয় ভাল হত। কিন্তু তখন আর কিছু করার থাকে না। সেই সময় নিজের কাছে একসঙ্গে এতটা খাবেন না বলে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হলেও, ফিশফ্রাই কিংবা বিরিয়ানির গন্ধ পেলে সে প্রতিজ্ঞা মাথা থেকে উধাও। খাবার খাওয়ার এই অভ্যাস থেকে অনেকেই বেরোতে চান, কিন্তু মনকে বোঝাতে পারেন না। খাবার সামনে দেখলেই সব ভুলে যান। চিকিৎসা পরিভাষায় এই সমস্যাটিকে ‘বিঞ্জ ইটিং ডিজ়অর্ডার’ বলা হয়। কী ভাবে এই সমস্যা থেকে বেরোনো যায়? তা নিয়েই আনন্দবাজার অনলাইনের ফেসবুক পেজ এবং ইউটিউব চ্যানেলে আলোচনায় বসলেন মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ সপ্তাহের বিষয়, ‘সারা ক্ষণ খাই খাই করি! কী করে বলব?’
প্রতি বারের মতো এ সপ্তাহেও বেশ কিছু চিঠি পেয়েছেন মনোবিদ। খিদে পায়নি, অথচ সারা ক্ষণ কিছু না কিছু মুখে পুরতে ইচ্ছা করছে। এমন সমস্যার কথা লিখে জানিয়েছেন অনেকে। আবার বন্ধুদের সঙ্গে রেস্তরাঁয় গিয়ে নিজের ভাগের খাবার তো খাচ্ছেনই, সেটা শেষ করে বন্ধুদের প্লেটেও হানা দিচ্ছেন অনেকে, এমন সমস্যাও রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জন জানিয়েছেন, বন্ধুদের সঙ্গে বাইরে খেতে গেলেই খাবার নষ্ট করা নিয়ে একটা সমস্যা আছে তাঁর। খাবার ফেলে চলে আসার কথা ভাবতেই পারেন না তিনি। এর ফলে বাকিদের তুলনায় অনেক সময় তিনি বেশি খেয়ে নেন। এমনকি বন্ধুরা খাবার খেতে না পারলেও তাঁর প্লেটেই বাড়তি খাবার দিয়ে দেন। ফলে সেটাও খেতে হয়। বন্ধুরা তখন কিছু না বললেও পরে এই বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন। এমনকি ‘বিঞ্জ ইটিং ডিজ়অর্ডার’ হয়েছে কি না, সেটাও সন্দেহ করেন। বাংলাদেশ থেকে আতাউর লিখেছেন, ‘‘আমি খুব তাড়াতাড়ি খাই। এই সমস্যা আমার ছোটবেলা থেকে। হয়তো তাড়াতাড়ি বেরোব, এমন সময় খাবার দেওয়া হল। তখন দ্রুত খাওয়া ছাড়া রাস্তা নেই। আমার বোন আমায় বলেছে, আমার বোধ হয় ‘ইটিং ডিজ়অর্ডার’ আছে। দ্রুত অনেকটা খেয়ে ফেলা তার অন্যতম লক্ষণ। আমার কি সত্যিই এমন কোনও সমস্যা হয়েছে?’’
পছন্দের খাবার পরিমাণে একটু বেশি খেয়ে নেওয়া, রেস্তরাঁয় গিয়ে বাকিদের চেয়ে খানিকটা বেশি খাওয়া কিংবা তাড়াহুড়োয় খাওয়া— এই প্রতিটি প্রবণতা যে খুব অস্বাভাবিক, তা নয়। অথচ এই বিষয়গুলি নিয়েই প্রশ্ন উঠছে। তার অন্যতম একটি কারণ হতে পারে লোকলজ্জা কিংবা লোকে কী বলবে, তা নিয়ে অস্বস্তি। মনোবিদ বলেন, ‘‘বিঞ্জ ইটিং-এর লক্ষণ হল, সব সময় খিদের খাওয়া নয়। এমন হতে পারে, কিছু ক্ষণ আগেই একটা মিল শেষ হয়েছে। কিন্তু তার পরেই আবার খিদে পেয়ে গিয়েছে। মনে হচ্ছে, আরও কিছু খাই। দুটো খাবারের মধ্যে খুব কম সময়ের বিরতি থাকছে। আরও একটা উল্লেখযোগ্য দিক হল, খাবার খেয়ে নেওয়ার পর নিজেরই খারাপ লাগছে। অপরাধবোধ জাগছে। সেই সঙ্গে মোটা হয়ে যাওয়ার উদ্বেগও তৈরি হচ্ছে। বিঞ্জ ইটিং-এর এটা অন্যতম উপসর্গ। তাই এই লক্ষণগুলি দেখলে একটু সতর্ক হওয়া জরুরি। লক্ষণগুলিকে প্রশ্রয় দিলে নানা মানসিক সমস্যাও জন্ম নিতে পারে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy