Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
Anuttama Banerjee

Anu-Songey Ratnaboli Somaraho: সন্তান আত্মহত্যা করতে চাইলে কী করবেন, উত্তর দিল ‘অনু-সঙ্গে রত্নাবলী’

সন্তান আত্মহত্যা করতে চাইলে কী করবেন? তাকে কি নিয়ে যাবেন চিকিৎসকের কাছে?

অনুষ্ঠানের আগে অনুত্তমা-রত্নাবলী।

অনুষ্ঠানের আগে অনুত্তমা-রত্নাবলী। নিজস্ব চিত্র

সুচন্দ্রা ঘটক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০২১ ২১:৫৮
Share: Save:

সন্তান আত্মহত্যা করতে চাইলে কী করবেন? তাকে কি নিয়ে যাবেন চিকিৎসকের কাছে? তার কথায় বিশ্বাস করবেন, নাকি বিশেষ গুরুত্বই দেবেন না?

মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা ও মানবাধিকারকর্মীদের অনেককে সামনে পেয়ে প্রশ্নগুলি করলেন ষাটোর্ধ্ব এক বাবা। ছেলেকে নিয়ে তিনি চিন্তিত। কী ভাবে সন্তানের যত্ন নেবেন? খানিক দিশেহারা তিনি।

বাইপাস লাগোয়া হোটেল। সেখানেই বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বসেছিল আলোচনাসভা। ‘অনু-সঙ্গে রত্নাবলী সমারোহ’। অনুষ্ঠানের কেন্দ্রে মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মনো-সমাজকর্মী রত্নাবলী রায়। তাঁদের কাছে নিজেদের নানা প্রশ্ন নিয়ে জড়ো হয়েছিলেন রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের বহু জন। সেখানেই প্রশ্নগুলো করে ফেললেন ছেলেকে নিয়ে উদ্বেগে থাকা ওই বাবা। রোজের জীবনে মানসিক স্বাস্থ্যে গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজন কতটা, তা নিয়ে নানা সময়ে কথা হয়ে থাকে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মিনিট কয়েকে তা তরলও হয়ে যায়। অনুষ্ঠানের শুরুতেই চিন্তিত ওই বাবার প্রশ্নগুচ্ছ আয়োজনের প্রয়োজনীয়তা বুঝিয়ে দিল।

অতিমারির সময়ে চার পাশেই শোনা যাচ্ছিল মানসিক সমস্যার কথা। শুধু কলকাতা নয়, বিভিন্ন দেশের ছোট-বড় শহরের একই পরিস্থিতি। সামাজিক দূরত্ব, রোগ-মৃত্যুর ভয়, রোজগার হারানোর আতঙ্ক— সব মিলেমিশে চাপ সৃষ্টি করছিল অনেকের মনের উপর। সময়ের দাবি টের পান দুই মনোবিদ। নিজেদের মতো করে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। শুরু হয় ‘অনু-সঙ্গে রত্নাবলী’। নেটমাধ্যমে সেই আলোচনাসভা এক বছর পূর্ণ হয়েছে কিছু দিন আগে। এ বার সামনাসামনি কথোপকথনের পালা। জীবনের নানা মোড়ে যে সব বিষয় সঙ্কটের মুখে দাঁড় করাতে পারে, সেগুলিই হয়ে ওঠে ‘অনু-সঙ্গে রত্নাবলী’ শীর্ষক অনলাইন আলোচনাসভার বিষয়। কখনও ‘সমকামিতা’, কখনও ‘অটিজম’। কখনও ‘মাতৃত্ব’। কখনও আবার ‘আত্মহত্যার হুমকি’র মতো বিষয় নিয়ে নানা জনের সঙ্গে আলোচনায় জুড়ে গিয়েছেন অনুত্তমা এবং রত্নাবলী। ঘণ্টাখানেকের সেই ফেসবুক লাইভে নানা প্রান্ত থেকে আসে প্রশ্ন। মেলে জবাব। পরামর্শও।

নেটমাধ্যমের প্রোফাইলের আড়াল থেকে বহু প্রশ্ন করা যায়। তবে নিজের ছেলের আত্মহত্যা স্পৃহার কথা জনসমক্ষে কবুল করা সহজ নয়। সে চিন্তায় আরও গুরুত্ব দেওয়ায় জোর দিল এই সভা।

‘অনু-সঙ্গে রত্নাবলী সমারোহ’-এর মঞ্চে অনুত্তমা ও রত্নাবলী।

‘অনু-সঙ্গে রত্নাবলী সমারোহ’-এর মঞ্চে অনুত্তমা ও রত্নাবলী। নিজস্ব চিত্র

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মনোরোগ চিকিৎসক অনিরুদ্ধ দেব। মনোসমাজকর্মী রত্নাবলী প্রসঙ্গের গুরুত্ব বুঝিয়ে জবাব চাইলেন তাঁর কাছেই। অনিরুদ্ধ জানান, আত্মহত্যা নিয়ে ঠিক কতটা কথা বলছেন সেই ব্যক্তি, তার উপর অনেকটা নির্ভর করে বিষয়টি। তিনি বলেন, ‘‘যিনি আত্মহত্যা নিয়ে বেশি কথা বলেন, অনেক সময়েই দেখা যাবে যে তাঁর আত্মহত্যার প্রবণতা কম। আবার যিনি কিছুই বলেন না, তিনি হয়তো বেশি আত্মহত্যাপ্রবণ। কিন্তু আত্মহত্যা নিয়ে যদি কেউ আলোচনা করতে আসেন, তা শোনা অতি জরুরি। তা হলে বোঝা যাবে, এ বিষয়ে তাঁর ভাবনা কতটা এগিয়েছে।’’

চেষ্টা কম করেননি ওই বাবা। মনোবিদ, মনোরোগ চিকিৎসকদের কাছে নিয়ে গিয়েছেন। তাঁরা নিজেদের মতো করে পরামর্শ দিয়েছেন।ওষুধ দিয়েছেন। ডায়েরি লিখতে বলেছেন। কিন্তু ছেলের তা করতে ভাল লাগেনি। অসুস্থ হয়েছেন আরও। সমাধান এখনও মেলেনি। তবে আবার যে কখনও আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন, এমনও নয়।

‘অনু-সঙ্গে রত্নাবলী সমারোহ’-এর জন্য জয় গোস্বামীর শুভেচ্ছাবার্তা।

‘অনু-সঙ্গে রত্নাবলী সমারোহ’-এর জন্য জয় গোস্বামীর শুভেচ্ছাবার্তা।

বিষয়টি কি তবে তত গুরুত্বপূর্ণ নয়? কী বলবেন মনোবিদ? মাইক্রোফোন তুলে নেন অনুত্তমা। তিনি বলেন, ‘‘মনোবিদের বলা পথটি যদি ভাল না লাগে, তা জানান দেওয়ার অধিকার আমার আছে। আমি বলতেই পারি যে, এটি আমার ভাল লাগছে না। অনেক মানুষ হয়তো ডায়েরি লিখে, মনোবিদের দেওয়া বাড়ির কাজ করে ফল পান। কিন্তু এই পন্থাটি ব্যক্তিনির্ভর। মনোবিদের বলা পথ যদি তাঁর পছন্দ না হয়, তবে তাঁকে জানানো জরুরি। তিনিও হয়তো নিজের পদ্ধতি বদলে নিতে পারেন।’’

রত্নাবলীও ওই বাবার কাছে অনুরোধ রাখেন, সন্তানকে বকুনি না দেওয়ার জন্য। মনে করান, মনোবিদের দেওয়া কাজ সকলের পছন্দের না-ই হতে পারে। সে দিকে খেয়াল রেখেই এগোতে হবে।

দেড় ঘণ্টার অনুষ্ঠান পৌনে দু’ঘণ্টায় গড়িয়ে যাওয়ার পর যখন ‘অনু-সঙ্গে রত্নাবলী সমারোহ’ শেষ হচ্ছে, তখনও বাকি থেকে গেল অনেক প্রশ্ন। তবে তত ক্ষণে আলোচনা চারিয়ে গিয়েছে উপস্থিত সকলের মধ্যে।

অন্য বিষয়গুলি:

Anuttama Banerjee Ratnabali Roy Interaction
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE