—প্রতীকী চিত্র।
অনেকের কাছেই কিছুটা অপরিচিত রোগ স্কোলিয়োসিস। এই রোগে মেরুদণ্ডের এক পাশ বেঁকে শরীরের গঠনগত ভারসাম্যে বিঘ্ন ঘটায়। চিকিৎসকদের মতে, এই রোগ জন্মগত। স্কোলিয়োসিস নিয়ে দীর্ঘ জীবন যাপন করা যায়। তবে, দেরিতে চিকিৎসা শুরু হলে জীবনযাত্রার মান হয় নিম্নমুখী। হুইলচেয়ারে আটকে পড়েন রোগী। রোগ নিয়ে সচেতনতা তেমন না থাকায় বহু ক্ষেত্রেই বাড়াবাড়ি পর্যায়ে রোগ ধরা পড়ে। এই অসচেতনতা দূর করতেই জুন মাসকে স্কোলিয়োসিস সচেতনতার মাস হিসাবে পালন করা হয়। মেরুদণ্ডের ভিতরে থাকে সুষুম্নাকাণ্ড ও বিভিন্ন শিরা, যা অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সঞ্চালনে সাহায্য করে। ফলে মেরুদণ্ডের গঠন-বিকৃতি প্রভাব ফেলে সেখানেও।
ভারতে মোট জনসংখ্যার ৫০ লক্ষ মেরুদণ্ডের বিকৃতির শিকার। তবে পরিসংখ্যান বলছে, স্কোলিয়োসিসের প্রভাব বেশি দেখা যায় শিশুদের মধ্যে। শিশুদের মোট সংখ্যার তিন শতাংশ, অর্থাৎ ৩৯ লক্ষ এই রোগে আক্রান্ত।
মেরুদণ্ডে এই পার্শ্বীয় বক্রতার বেশ কিছু উপসর্গ রয়েছে। যা দেখে রোগ চেনা সম্ভব। যেমন, অসমান কাঁধ, সৌন্দর্যে বাধা দেয় এমন বুকের খাঁচা, কটিদেশে (লাম্বার) কুঁজ, অসমান শ্রোণী (পেলভিস), স্তনের গঠনে অস্বাভাবিকতা। এ ছাড়া রয়েছে পিঠ বা কোমর উঁচু-নিচু হওয়া, হাঁটতে গেলে টলমল করা, বিকৃতির মাত্রা বেশি হলে শ্বাস-প্রশ্বাসের অসুবিধা।
স্কোলিয়োসিস চার ধরনের। তবে পরিসংখ্যানে এগিয়ে ইডিয়োপ্যাথিক স্কোলিয়োসিস। যদিও এর কারণ অজানা। কোন বয়সে এটি হয়, তার ভিত্তিতে তিনটি ভাগ হল ইনফ্যান্টাইল, জুভেনাইল ও অ্যাডোলোসেন্ট ইডিয়োপ্যাথিক স্কোলিয়োসিস। বয়ঃসন্ধিকালে ও মেয়েদের বেশি হয় এই ইডিয়োপ্যাথিক স্কোলিয়োসিস। দ্বিতীয় প্রকার, কনজেনিটাল স্কোলিয়োসিস হয় ভ্রূণের গঠনগত বিশৃঙ্খলার কারণে। এ ক্ষেত্রে রোগ প্রকাশ পায় খুব কম বয়সে, বাড়েও দ্রুত। তৃতীয় প্রকার, নিউরোমাস্কুলার স্কোলিয়োসিসের কারণ পেশির ভারসাম্যের অভাব। সেরিব্রাল পলসি, স্পাইনাল মাস্কুলার অ্যাট্রফি, পলিয়োমায়েলেটিস, নিউরোফাইব্রোমেটোসিস, স্পাইনাল কর্ড টিউমারের জন্য পেশির ভারসাম্যের সমস্যা হয়। চতুর্থ ধরনটি অ্যাডাল্ট ডিজেনারেটিভ স্কোলিয়োসিস। প্রাপ্তবয়স্কদের দেখা যায় এটি। মেরুদণ্ডের লাম্বার অথবা ডরসোলাম্বার অংশের অবক্ষয় এর কারণ। চলতি কথায় এটি স্পন্ডোলাইসিস নামেও পরিচিত। পিঠে ব্যথা এর মূল উপসর্গ। সঙ্গে পায়ে ব্যথা ও চলাফেরায় অসাড় ভাব। অস্টিয়োপোরোসিস, পার্কিনসনিজ়ম রোগীরও এটি হয়।
রোগ চিহ্নিত করতে ভরসা, দাঁড়িয়ে করানো হোল স্পাইন এক্স-রে। কার, কত বয়সে রোগ ধরা পড়ছে, তার উপরে নির্ভর করে
শারীরিক বৃদ্ধির সঙ্গে স্কোলিয়োসিসের কারণে মেরুদণ্ডের বক্রতা কতটা বাড়বে। বৈজ্ঞানিক তথ্যের ভিত্তিতে প্রমাণিত, প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পরেও মেরুদণ্ডের বক্রতা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে।
মেরুদণ্ডের শল্য চিকিৎসক সৌম্যজিৎ বসু জানান, স্কোলিয়োসিসে সামনে থেকে মেরুদণ্ড অস্বাভাবিক বেঁকে ‘সি’ অথবা ‘এস’-এর আকার নেয়। এই ত্রুটি সংশোধনের অস্ত্রোপচার যথেষ্ট ব্যয়সাপেক্ষ। তবে, সব রোগীর অস্ত্রোপচার করতে হয় না। সৌম্যজিৎ বলেন, ‘‘কব অ্যাঙ্গেলের মাধ্যমে বক্রতার পরিমাণ যদি ৪০ ডিগ্রির বেশি হয়, তা হলেই অস্ত্রোপচার জরুরি। না হলে প্রথম থেকেই কাঠামো পরিয়ে, ব্যায়াম করিয়ে এবং রোগীকে পর্যবেক্ষণে রেখে রোগ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। অস্ত্রোপচারের আগে বা পরে খেলাধুলো, নাচ-গান, চলাফেরা কিংবা সন্তানধারণে বিধিনিষেধ থাকে না। কনজেনিটাল স্কোলিয়োসিস রোগীর ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হলে, ৫-১০ বছরের মধ্যে করিয়ে নেওয়া জরুরি। এক বার অস্ত্রোপচার হলে বিকৃতি ফিরে আসে না। এখনকার প্রযুক্তিতে অস্ত্রোপচারে ঝুঁকিও নামমাত্র।’’
‘কিয়োর এসএমএ ফাউন্ডেশন অব ইন্ডিয়া’র সহ-প্রতিষ্ঠাতা মৌমিতা ঘোষ বলেন, ‘‘রোগীর জীবনযাত্রার গুণগত মান কমিয়ে দেয় স্কোলিয়োসিস। দ্রুত রোগ নির্ণয় করে চিকিৎসকের পর্যবেক্ষণে থাকা আবশ্যিক। কোনও কোনও বিরল রোগে সেই সচেতনতা আরও জরুরি। কারণ, ওই রোগীদের এমনিতেই শারীরিক জটিলতা থাকে। সেই সঙ্গে মেরুদণ্ডের বেঁকে যাওয়া জীবন-যন্ত্রণা বাড়িয়ে দেয়। এই রোগের উপসর্গ, গুরুত্ব এবং চিকিৎসা নিয়ে সচেতনতা যথেষ্ট কম থাকাই সমস্যার মূলে।’’
ইতিহাস-গবেষকদের তথ্য থেকে জানা যায়, রাজা তুতানখামুনও সম্ভবত মেরুদণ্ড বিকৃতির শিকার ছিলেন। প্রমাণ হিসাবে গবেষকেরা জানাচ্ছেন, রাজার পিরামিডে পাওয়া গিয়েছে ‘ইউ’ আকৃতির ‘হেড রেস্ট’। যা রাজার মাথা ও শিরদাঁড়াকে সোজা রাখতে সাহায্য করত। রাজার মমির সিএটি স্ক্যানে ধরা পড়েছে, তুতানখামুনের শিরদাঁড়া ও পায়ের গঠনের ত্রুটি ছিল। যা ইঙ্গিত করছে, পায়ের অন্য ত্রুটির সঙ্গে স্কোলিয়োসিসও ছিল তাঁর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy