Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
amazon

মিলন রাতে ‘সতীত্ব’ প্রমাণে কৃত্রিম রক্তের পিল অনলাইনে! নিন্দার ঝড় সমাজ জুড়ে

অ্যামাজনের এই পণ্য বিক্রির খবর জানতে পেরেই প্রতিবাদে সরব হয়েছেন নানা ক্ষেত্রের বিশিষ্ট মানুষজন। বিরোধিতায় পিছিয়ে নেই আমজনতাও।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

মনীষা মুখোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০১৯ ১৬:২১
Share: Save:

‘তুমি কি কুমারী? প্রমাণ দাও নারী।’

না, কোনও কবিতার পঙ‌্ক্তি নয়। বরং নব্বই দশকের নারী আন্দোলন যে ক’টা প্রতিবাদী বিষয়ের উপর দাঁড়িয়ে তার ভিত তৈরি করে নিচ্ছিল, এই অন্যায্য দাবি তারই একটি। ২০১৯-এ পৌঁছে সেই কুমারীত্বের প্রমাণই এ বার প্যাকেটবন্দি। নাম তার ‘আই ভার্জিন পিল’। এক ক্লিকেই মিলছে অ্যামাজনের সাইটে। সঙ্গে রয়েছে অনেকগুলি ‘আশ্বাসবাণী’। কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। প্রয়োজন পড়ে না কোনও কাটাছেঁড়ার। অজ্ঞান করারও প্রয়োজন নেই। স্রেফ এক পিলেই শরীরে জমে যাবে পরিমাণ মতো থকথকে ‘নকল’ রক্ত। প্রথম সঙ্গমের পরেই যা সতীচ্ছদ ভেদ করে বেরিয়ে আসবে ‘মিথ্যে’ কুমারীত্বের ‘প্রয়োজনীয়’ প্রমাণস্বরূপ! আবার তাতে চলছে অফারও!

অ্যামাজনের এই পণ্য বিক্রির খবর জানতে পেরেই প্রতিবাদে সরব হয়েছেন নানা ক্ষেত্রের বিশিষ্ট মানুষজন। বিরোধিতায় পিছিয়ে নেই আমজনতাও।

প্রথম শারীরিক মিলনের রাতে মেয়েটিকে রক্তাক্ত হতেই হবে— এ সংস্কার শুধুই তৃতীয় বিশ্বের নয়, বরং অনেক উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশই এই ‘ট্যাবু’ বহন করে এসেছে যুগের পর যুগ। কখনও সরাসরি, কখনও ঘুরপথে। বিভিন্ন সময়ে নানা ধর্মীয় ভাবাবেগ ও কুসংস্কারকে শিখণ্ডী করে এমন প্রথাকে ‘নিয়ম’ বলে দেগে দিয়েছে সমাজের একাংশ। ভারতেও প্রত্যন্ত নানা অঞ্চলে তো বটেই, এমনকি, শহুরে জনজাতিরও কারও কারও মনের অন্দরে ঘাপটি মেরেছিল এমন বর্বর প্রমাণ দেওয়ার খেলা। সেই খেলা যে অতীতে হারিয়ে যায়নি, তা-ই কি প্রমাণ করছে অ্যামাজনের এমন পণ্যের কেনাবেচা? উঠে এল নানা মতামত।

আরও পড়ুন: আশ্রয়হীন হয়ে কাটাতে হয়েছিল একটা সময়, আজ তাঁর হাতের জাদুতে মুগ্ধ মোদী থেকে ওবামা

অ্যামাজনের সাইটে এই পণ্য ঘিরেই তৈরি হয়েছে বিতর্ক।

‘‘মেয়েদের ছোট করতে সমাজের চাপিয়ে দেওয়া, লালন করা নানা খেলার প্রসঙ্গ তো বাদই দিলাম, এ তো রীতিমতো মিথ্যাচার! প্রতারণা!’’ বিষয়টি জানতে পেরেই প্রতিক্রিয়া সাহিত্যিক তিলোত্তমা মজুমদারের। তাঁর মতে, ‘‘অবিশ্বাস ও মিথ্যাচার দিয়ে সম্পর্ক শুরুর হদিশই তো দিচ্ছে এই পিল! কুমারীত্বের প্রয়োজন আছে কি না তা নিয়ে বলার পাশাপাশি এই প্রতারণার দিকটিই বা উড়িয়ে দিই কী করে‍! মেয়েটি বিশ্বাস করছে, কুমারী না হলে ভালবাসা কমবে! ছেলেটি ভাবছে, কুমারী হয়ে ধরা দেওয়াই ভালবাসার প্রাথমিক শর্ত!’’

তিলোত্তমার কথায়: ‘‘এই দুই ধারণার উপর নির্ভর করেই ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থাটি যদি তাদের পিল বাজারে আনে, আর তার ব্যবহারও হু হু করে বাড়ে, তা হলে এই সমাজকে যে তার আন্দোলনকে ফের কেঁচে গণ্ডুষ করতে হবে তা বেশ বোঝা যায়। দু’জন ব্যক্তিমানুষের এক জন অন্যের আস্থা অর্জন করছে এক অন্যায়, আদিম ও অপ্রয়োজনীয় প্রথা দিয়ে, আর অন্য জন সেই বর্বর প্রথা দিয়েই নিক্তিতে মেপে মেয়েটির ‘খুঁতহীন’ শরীরকে গ্রহণ করছে— এই পিল তো সেই আচরণকেই মান্যতা দিচ্ছে!’’

এরই পাশাপাশি তিলোত্তমার সংযোজন: ‘‘আর কুমারীত্ব? এই হাইমেন এমন একটা জিনিস যা একটা বয়সের পরে যে কোনও কারণে ফেটে যেতে পারে। যৌন সংসর্গে কুমারীত্বের মতো অপ্রয়োজনীয় ও ভিত্তিহীন বিষয়ের সঙ্গে প্রেম, ভালবাসা গুলিয়ে ফেলার মতো ভুল আজও এই সমাজ করে ভাবলে কষ্ট হয়। অসহায়ও লাগে। অবশ্য এমন ভাবনায় সমাজের তথাকথিত শিক্ষিত সমাজের প্রতিনিধিরা থাকলেও আমি অবাক হব না!’’

তবে শুধু সামাজিক অন্ধকারই নয়, শিক্ষার বণ্টনের অভাব ও পুঁথিগত শিক্ষার বাইরে পা ফেলতে না পেরে, উদার হতে না পারা মানসিকতাও এমন পণ্যের কেনাবেচা বাড়ায় বলে মত তিলোত্তমার। সঙ্গে তিনি দায়ী করছেন মেয়েদের আত্মবিশ্বাসের অভাবকেও। কারণ, দিনের শেষে এই পণ্য কিন্তু মেয়েরাই কিনবেন কিংবা বাড়ির পুরুষ সদস্যটি কিনে দেবেন মেয়েদের, তাঁদের প্রয়োজনে।

আরও পড়ুন: ১৪ নভেম্বর, রসগোল্লা ও ডায়াবিটিস দিবস একসঙ্গে! কোন দিকে ভোট পড়ল বেশি?

এমন পণ্যের বাজারীকরণের প্রয়োজনীয়তা ও তা কেনাবেচার নেপথ্যে কোন মানসিকতা কাজ করছে, তা নিয়ে কথা বলতে গেলে কোনও ভাবেই সমাজে নারীর অধিকার ও তার অবস্থানকে বাদ দিয়ে তা করা যায় না। আর তার হাত ধরেই চলে আসে দীর্ঘ নারী আন্দোলনের দিকটিও। কুমারীত্ব প্রমাণ দাখিল করার দায় পুরাকাল থেকেই বর্তাচ্ছিল মেয়েদের উপর। তবে হয়তো সে দিন অতীত হয়েছে বলে ভাবতেন নারী আন্দোলনকারী ও সমাজচিন্তক রত্নাবলী রায়। বিষয়টি সামনে আসতে সেই ভাবনার পথে কিছুটা থমকেছেন। এই পণ্যের খবরে তিনি যত না রাগত, তার চেয়েও বেশি বিপন্ন।

রত্নাবলীর কথায়: ‘‘নারী মানে কি শুধু ভ্যাজাইনা? শুধুই দুই ঊরুর মাঝে জমানো ইজ্জত? এক জন মেয়ে যে সমাজের নানা ক্ষেত্রে নানা পারদর্শিতার ছাপ রেখে যান, নানা ঝড় মাথায় রেখে, সংসারে ছাতা হয়ে দাঁড়ান সেটা কিছুই না! এমন সব পণ্য ও সে সব বাজারজাত করার আইডিয়া অবাক করে। আর সতীত্ব? হাইমেন? সকলেই জানেন, বৈজ্ঞানিক ভাবেই এই হাইমেন কেবল শারীরিক সম্পর্কে ছিন্ন হয় এমন নয়। নানা কায়িক শ্রমে তা ছিঁড়ে যেতে পারে। কাজেই হাইমেন জোড়া লাগানো বা কৃত্রিম রক্ত উৎপাদন যে চূড়ান্ত নির্বোধের ধারণা থেকে জন্ম নেওয়া ভাবনা তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।’’

রত্নাবলীর পাল্টা প্রশ্ন: ‘‘আচ্ছা বলুন তো, কেউ যদি বিয়ের আগে চুমু খায়, অ্যানাল সেক্স করে তা হলে কি সে ভার্জিন? হলে কতটা? এক জন নারী কিন্তু তার হাইমেনটি টিকিয়ে রেখেও ভার্জিনিটি হারাতেই পারেন। অশিক্ষিতের মতো কেবল হাইমেনে সতীত্বের সব দায় বেঁধে দেওয়ার কোনও মানেই হয় না। সতীত্ব, হাইমেন এগুলো সবই আসলে চিরকাল ধরে চলে আসা প্রচলিত যৌনতার চিহ্ন। সমাজ যেখানে সমকামীদের বরণ করতে এগিয়ে আসছে, সেখানে বারংবার এই ধরনের নানা পণ্য বাজারে এনে বিষমকামীদের দিকেই ঝোল টানা হচ্ছে!’’

ক্ষুব্ধ রত্নাবলীর কথায়: ‘‘ওই সংস্থা এই ধরনের পণ্য বিক্রি করার সাহস পাচ্ছে এই দেশের রাজনৈতিক বাতাবরণের কারণেও। বাড়ির মেয়েদের সতীসাধ্বী বউ হয়েই দিন কাটাতে হবে, যত্নে রাখতে হবে সতীত্ব— রাজনীতিবিদদের মনের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা এমন সমাজের ‘স্বপ্ন’ই এ সব জিনিস বিক্রির অনুমতি দেয়। এখনই জবাবদিহি ও শাস্তির মাধ্যমে এ সব বন্ধ করা দরকার।’’

তাঁর সঙ্গে সহমত পোষণ করেছেন সমাজবিদ বোলান গঙ্গোপাধ্যায়ও। তাঁর আশঙ্কা, এই ধরনের পণ্য আরও এক বার যৌন স্বেচ্ছাচার ও যৌন অধিকারের দ্বন্দ্বে জিতিয়ে দিল পুরুষের স্বেচ্ছাচারী দাবিকে। আবার সমাজের যে অংশ আজও মনে করত, ‘কুমারীত্ব একটা বিরাট ফ্যাক্টর’, এ বার সেই শ্রেণির মানুষজনই মেয়েদের আরও বেশি করে ভোগ্য করে তুলতে সাহস পাবে। ভার্জিনিটির যে দোহাই দিয়ে তাঁরা স্বেচ্ছাচারী হতে ভয় পেতেন, এ বার সে ভাবনাও উবে গেল। মেয়েদের কুমারীত্ব হারানোর ভয় আর যেখানে নেই, সেখানে তা টিকিয়ে রাখার দায়ও থাকতে পারে না। এ ওষুধ এমন ভোগবাদেরও দাওয়াই।

শুধু সমাজবিদরাই নন, আবিশ্ব যখন পুরুষ-নারীর অধিকার, পুরুষতন্ত্রের কালো দিক, মেয়েদের যৌন অধিকার ও পুরুষের যৌন স্বেচ্ছাচারিতার দ্বন্দ্ব নিয়ে নারী আন্দোলন তার অভিমুখ খুঁজে বেড়াচ্ছে, ধীরে ধীরে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মেয়েরাও তাঁদের নিজস্ব আলোর খোঁজে সচেতন হচ্ছেন, ঠিক তখন এমন এক পণ্যের বাজারীকরণ সরাসরি ঘা মেরেছে এ যুগেও নারীর অবস্থান ও সামাজিক কাঠামোয়— এমনটা মনে করছেন চিকিৎসক ও মনোবিদরা।

আরও পড়ুন: লক্ষণ প্রকাশের অনেক আগেই শরীরে স্তন ক্যানসার বাসা বেঁধেছে কি না জানিয়ে দেবে এই রক্ত পরীক্ষা!

এই ধরনের ওষুধ বা পণ্য সমাজে মেয়েদের সম্মান বজায় রাখতে ও পুরুষতান্ত্রিকতার কলুষ মোছাতেই নিষিদ্ধ হওয়া উচিত বলে মনে করেন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ মৃদুলা হাজরা। সামাজিক দিক না হয় পৃথক, কিন্তু সংস্থার পক্ষ থেকে চিকিৎসা সংক্রান্ত আর যা যা দাবি করা হচ্ছে এমন ওষুধ কি সত্যিই ততটাই নিরাপদ? ‘‘একেবারেই নয়।’’ সাফ জবাব তাঁর, ‘‘ওষুধের সংস্থা যা-ই দাবি করুক না কেন, সম্পূর্ণ নিরাপদ ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন এমনটা কখনও বলা যায় না। হয়তো এই পিলের বিভিন্ন উপাদান মোটের উপর নিরাপদ, কিন্তু একটা ওষুধ শরীরে প্রবেশ করে হরমোনাল নানা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নকল রক্তের জমাট কণিকা তৈরি করে তাকে শারীরিক সম্পর্কের পর পরই ঠেলে দেবে যোনিমুখে। এই জিনিসটি কখনওই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন, খুব ‘সাধু গোছের’ হতে পারে না। নকল এই রক্ত শরীরে ধারণ করায় অনেকেরই নানা অ্যালার্জি, সংক্রমণ ও প্রদাহের ভয় থাকে। শরীর অনুপাতে সেই আশঙ্কা বাড়ে-কমে। আমি তো রীতিমতো শঙ্কায়, এ বার এই ওষুধটি কেউ ব্যবহার করেছেন কি না এটা জানার জন্য হয়তো রক্ত পরীক্ষাও চলে আসবে! একটি মেয়েকে যত ভাবে পারা যায় স্ক্যান করে, অবিশ্বাস করে তাকে নরকের দ্বার করে তোলারই নামান্তর এ সব ওষুধের বিক্রি। বেশির ভাগই চিকিৎসকদের পরামর্শ বিনা এ সব ওষুধ খাবে ও সমস্যাতেও পড়বে। এমনকি, এ থেকে ভবিষ্যতে যৌন মিলনের সময় নানা সমস্যাও জন্মও নিতে পারে।’’

মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায় রীতিমতো চমকে গেলেন খবরটা শুনেই! ‘‘সম্পর্কে ঘনিষ্ঠতার ক্ষেত্রে কুমারীত্ব এত বড় হয়ে দাঁড়াচ্ছে! পুরনো মানসিকতায় ফিরছি। সম্পর্কের আস্থা কি ঊরুদ্বয়ের মাঝে অবস্থিত! রক্ষণশীল ও ক্ষতিকর মানসিকতার হাত ধরে কৃত্রিম রক্ত নির্মাণ সম্ভব হলেও আস্থার পুনর্নির্মাণ কি সম্ভব?’’ প্রশ্ন তুলছেন তিনি।

খবরটা শুনে হতচকিত হলেও এই ধরনের পণ্য মানসিকতায় খুব অবাক হচ্ছেন না সাহিত্যিক সঙ্গীতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর সাফ জবাব, ‘‘ভার্জিনিটি শব্দটা কি সমাজ থেকে মুছে গিয়েছে? অক্ষত যোনি নিয়ে আদিখ্যেতা শেষ হয়ে গিয়েছে? এ সব কি তলায় তলায় নেই? সব তো আছে। সব ছিলও। এবং ভারতবর্ষের রাজনৈতিক পরিস্থিতি যে ভাবে বদলাচ্ছে তাতে এ সব যে নতুন করে শুরু হবে আর ডালপালা মেলবে এ বিষয়ে কোনও সন্দেহই নেই। এবং এই সব রিগ্রেসিভ চিন্তাভাবনার যে একটা বিরাট বাণিজ্যিক দিক আছে সেটা ব্যবসায়ী শ্রেণি খুব ভাল করে জানে। আমার মতে, তারা নির্দিষ্ট লক্ষ্য স্থির করেই এই বিপজ্জনক জায়গাটায় হাত দিয়েছে।’’

শুধু তা-ই নয়, সঙ্গীতা মনে করেন, একটা মেয়ে ‘কুমারী’ কি না এটা তার নিজের কাছেই কোনও বিষয় নয়। একটা মেয়ে নিজেই জীবনে জানতে পারে না কবে, কখন তার হাইমেন ছিঁড়ে গিয়েছে। ‘‘একটা মেয়ে প্রথম পেনিট্রেশনের পর এটা ভাবে না যে সে আর কুমারী নেই। সে এটা ভাবে যে এই তার প্রথম পুরুষ, এই দিনক্ষণ, তারিখ হল তার প্রথম অভিজ্ঞতা। সেখানে সমাজ, সংসার, পরিবারের কোন স্বত্ব নেই।’’

সঙ্গীতা বলছেন, ‘‘যে পণ্য মেয়েদের ব্যবহারের জন্য তৈরি হল তা যদি মেয়েরাই ব্যবহার করে বসে নানা সামাজিক চাপে তা হলে আমাদের আর মেয়েদের অধিকার নিয়ে কথা বলার মানে থাকে না। এ রকম ষড়যন্ত্রে যদি মেয়েদের টেনে আনা যায় তা হলে সেটা নারীবাদেরই বীভৎস পরাজয় হবে। আর সেই আয়োজন করতেই এ সব কিট বাজারে আনা। আমরা হয়তো আঙুল তুলব গ্রামগঞ্জের দিকে। কিন্তু কে বলতে পারে, হয়তো দেখা যাবে অফারে এই কিট কিনে বিয়ের রাতে ব্যবহার করতে শহরের মেয়েরা হয়তো গ্রামের মেয়েদের পিছনে ফেলে দিচ্ছে!’’

আরও পড়ুন: মোবাইলের দুনিয়ায় বুঁদ প্রিয় কেউ? এই সব উপায়ে সরান নেশা

বিশিষ্ট জনদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এই পণ্য বিক্রির চূ়ড়ান্ত বিরোধিতায় শামিল হচ্ছেন আমজনতাও। আইটি সেক্টরের কর্মী তৃণা গুহরায় আকাশ থেকে পড়লেন খবরটা শুনেই! এমনও হয় না কি! মেয়েদের আর কত পিছনে ঠেলবে! আর কত অসম্মান জোগান দিয়ে স্রেফ হাইমেনসর্বস্ব যৌনতার কাঁচামাল হিসেবে এই সমাজ দেখতে চাইবে— তা নিয়ে রীতিমতো দিশাহারা তিনি। অ্যামাজনের এমন পণ্যের ফাঁদে যাতে পরিচিত কেউ না পড়ে, সে দিকে খেয়াল রাখতেও বদ্ধপরিকর। তবে তিনি আশাবাদী, এ জিনিসের কেনাবেচা খুব একটা হবে না। যুগ বদলাচ্ছে যে!

নিজের মেয়ের মুখ মনে পড়তেই এই পণ্য নিয়ে বিষোদ্গার করলেন জাঙ্গিপাড়া থেকে কলকাতার ছোট দোকানে কাজ করতে আসা শম্ভু প্রামাণিকও। স্পষ্ট বললেন, ‘‘গরিবগুর্বো মানুষের প্রতিনিধি হিসেবে যদি আমাকে এই জিনিসটা বিক্রি নিয়ে মতামত জানতে চান, তা হলেও বলব, অশিক্ষার নানা ঝাপটায় দরিদ্র ও পিছিয়ে পড়া এলাকায় স্থানীয় কিছু সামাজিক রীতিনীতি তৈরি হয়ে যায় ঠিকই, সংস্কারও অন্য রকম থাকে। তবু এমন একটা জিনিস বিক্রিকে কোনও ভাবেই সমর্থন করা যায় না। আমারও বাড়িতে মেয়ে রয়েছে, স্ত্রী-মা রয়েছেন। তাঁরা মোটেই শুধু কুমারীত্বের প্রতীক নন। সতীত্ব যে আলাদা করে কিচ্ছু প্রমাণ করে না তা কিন্তু ধীরে ধীরে আমাদের মতো গরিব, পড়াশোনা বেশি দূর করতে না পারা মানুষরাও বোঝেন। এই জিনিস যাঁরাই কিনুন তাঁরা আর যাই হোক মেয়েদের সঙ্গে নিজেদেরও ছোটই করবেন। তবে আমার আশা, এ জিনিস মুখ থুবড়ে পড়বে। আজকাল আর এ সব নিয়ে ভাবে না কি কেউ, মানে ভাতকাপড়ের চিন্তার পর সময় থাকে ভাবার?’’

সময় মিলবে কি না, বিক্রি বা কত কম-কত বেশি সে সবের হিসেবের বাইরেও যা জ্বলজ্বলে হয়ে থাকে তা এই আমজনতার নিরন্তর আশাবাদ ও ইচ্ছাশক্তি। যাদের পালে হাওয়া দিয়েই মানুষ জয় করেছে নানা চূড়ান্ত প্রতিকূলতা, আটকে দিয়েছে বিভিন্ন প্রলোভনের মায়ামোহজাল। ‘আই ভার্জিন কিট’-এর মতো কার্যত প্রতারণা, ছলও এই দেশে এমন আশাবাদ ও ইচ্ছাশক্তির জোরে হেরে যাবে এমন আশায় বুক বাঁধছে সমাজের নানা মহল। সাক্ষী থাকছে বদলে যাওয়া নারীবাদ।

অন্য বিষয়গুলি:

I Virgin Pill Blood Powder Amazon Virginity Woman Revolution
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy