প্রতীকী ছবি।
হাত ধোয়ার জন্য সাবান-জল দূর অস্ত্, দেশের ৩২ শতাংশ স্কুলে (মাথাপিছু রোজ দেড় লিটার) পানীয় জলের ঠিক মতো সরবরাহই নেই! কোভিড ১৯-এর পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বের স্কুলগুলিতে ‘ওয়াটার, স্যানিটেশন অ্যান্ড হাইজিন’-এর (ওয়াশ) পরিকাঠামো কেমন, তার বিশ্লেষণে এমনই তথ্য উঠে এসেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এবং ইউনিসেফের যৌথ সমীক্ষা বা ‘জয়েন্ট মনিটরিং প্রোগ্রাম’-এ (জেএমপি) স্কুলগুলির পানীয় জল সরবরাহ ও পরিচ্ছন্নতা (হাইজিন) মানা সংক্রান্ত পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। সমীক্ষায় ‘স্পেশ্যাল ফোকাস অন কোভিড ১৯’ কথাটি উল্লেখ করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানাচ্ছেন, স্বাস্থ্য সুরক্ষার ক্ষেত্রে বরাবরই হাত ধোয়ার বিষয়টি গুরুত্ব-সহ দেখা হয়। এর আগে ইউনিসেফের এক সমীক্ষাতেই দেখা গিয়েছিল, হাত পরিষ্কারে অবহেলার কারণে সংক্রমণজনিত রোগে প্রতি বছর পাঁচ বছরের নীচে ১৪ লক্ষের মতো শিশুর মৃত্যু হয়। অথচ বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সেই মৃত্যু আটকানো যায় শুধু জল-সাবান দিয়ে হাত ধুয়েই। এক গবেষকের কথায়, ‘‘খাওয়ার আগে ও টয়লেটের পরে সাবান-জল দিয়ে হাত ধুলে ডায়রিয়ার আশঙ্কা যে ৪০ শতাংশ কমে, তা ইতিমধ্যেই প্রমাণিত।’’
এত দিন এই সব তথ্য জনসংখ্যার একটি অংশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু করোনা সংক্রমণ হাত ধোয়ার গুরুত্ব নতুন করে সামনে এনেছে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা। সেখানেই প্রাসঙ্গিক হয়েছে স্কুলগুলিতে হাত ধোয়ার পরিকাঠামো কতটা রয়েছে বা আদৌ রয়েছে কি না। ‘ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ’-এর প্রাক্তন ডিরেক্টর জেনারেল নির্মল গঙ্গোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘যে কোনও সংক্রমণ ছড়ানোয় নোংরা, অপরিষ্কার হাতের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে। হাত পরিষ্কার থাকলে অনেক রোগ থেকেই বাঁচা যায়।’’
বিশ্ব-কথা
• ৪৩ শতাংশ স্কুলে প্রায় ৮২ কোটি বাচ্চার জন্য জল-সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা নেই।
• প্রায় ৩৫ কোটি শিশুর স্কুলে জলের সরবরাহ রয়েছে, অথচ সাবানের ব্যবস্থা নেই।
• অপরিচ্ছন্নতার জন্য বিশ্বের ৬০টি দেশের প্রতি চার শিশুর মধ্যে তিন জনেরই স্বাস্থ্য বিপন্ন।
সমীক্ষা জানাচ্ছে, মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির স্কুলে ২০১৫ সালে যেখানে ‘নো হাইজিন সার্ভিস’ ছিল ৪৬ শতাংশ, সেখানে ২০১৯ সালে তা কমে হয়েছে ২৩ শতাংশ। তবে হাইজিন পরিকাঠামোর মানোন্নয়ন ভারত ও বাংলাদেশেই বেশির ভাগ হয়েছে। ২০১৫ সালে এ দেশের ৫২ শতাংশ স্কুলেরই হাইজিন পরিকাঠামো ভাল ছিল না। গত চার বছরে তবু কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তথ্য বলছে, ২০১৯ সালে সেই ভাল না-থাকার পরিকাঠামো এসে দাঁড়িয়েছে ২৫ শতাংশ স্কুলে। যদিও এর পরেও দেখা যাচ্ছে, দেশের প্রতি তিনটি স্কুলেরই একটিতে জল, স্যানিটেশন ও হাইজিনের পরিকাঠামো নেই।
তবে বিশেষজ্ঞদের একটি অংশের মতে, মিড-ডে মিল কিছুটা স্বাস্থ্য-সুরক্ষার অভ্যাস গড়ে তুলতে সাহায্য করেছে। কারণ, মিড-ডে মিলের আগে একসঙ্গে হাত ধোয়ার (গ্রুপ হ্যান্ডওয়াশিং) নিয়ম চালু হয়েছে। সমীক্ষাতেও তারই প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। সমীক্ষা জানাচ্ছে, মিড ডে মিলের আগে ৯৫ শতাংশ স্কুলের পড়ুয়ারা একজোট হয়ে হাত ধোয়। যদিও শহরের ও গ্রামের স্কুলের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। তা হল, শহরের প্রায় ৫০ শতাংশ স্কুলে হাত ধোয়ার জন্য পাইপলাইনের মাধ্যমে জল সরবরাহ হয়। কিন্তু গ্রামের এক তৃতীয়াংশেরও কম স্কুলে পাইপলাইনের জলের সংযোগ রয়েছে। ‘পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশন অব ইন্ডিয়া’-র জনস্বাস্থ্য-বিজ্ঞানী প্রিয়া বালসুব্রহ্মণ্যমের বক্তব্য, ‘‘মিড-ডে মিলের কারণে হাত ধোয়ার যে অভ্যাস ধীরে ধীরে গড়ে উঠেছে, তা আরও প্রাসঙ্গিক হয়েছে কোভিড ১৯-এর পরিপ্রেক্ষিতে। এই অভ্যাস যদি সব স্তরে মানা হয়, তা হলে কোভিড ১৯-এর মতো অনেক সংক্রমণের বিরুদ্ধেই প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy