সার্কিট ট্রেনিংয়ের মূল কথা কম সময়ে বেশি ঘাম ঝরানো। ওজন নিয়ে বা ওজন ছাড়া, দু’ভাবেই সার্কিট করা যায়। তবে ডাম্বেল সহযোগে সার্কিট ট্রেনিং কম সময়ে ওজন ঝরাতে, পেশি ও হাড়ের জোর, শরীরের ভারসাম্য এবং কার্ডিয়োভাসকুলার ফিটনেস বাড়াতে সহায়ক। আট থেকে দশ রকমের এক্সারসাইজ় নিয়ে তৈরি হয় এই ট্রেনিংয়ের একটি সার্কিট। এক ব্যায়াম থেকে অন্যটায় যাওয়ার মাঝে থাকে কয়েক সেকেন্ডের বিশ্রাম।
ওজনের কারিকুরি
ফিটনেস প্রশিক্ষক অরিজিৎ ঘোষাল বলছেন, “ডাম্বেল, বারবেল, কেটলবেল সব দিয়েই সার্কিট করা যায়। তবে ডাম্বেল ব্যবহারে সব পেশির উপরে সমান চাপ পড়ে। ঠিক কত ওজনের ডাম্বেল নিয়ে কী ধরনের শারীরচর্চা করবেন, তা এই ট্রেনিংয়ের মূল বিষয়।” সহজে তুলতে পারছেন এমন ওজন নয়, বরং যে ওজন তুলতে সামান্য অসুবিধে হচ্ছে, এমন ডাম্বেল বেছে নিন। বিগিনারস লেভেলে দু’হাতে আড়াই কেজি করে ডাম্বেল নিতে পারেন। পরে অভ্যেসের সঙ্গে ওজন বাড়ান।
সময়ের খেলা
এ ক্ষেত্রে হাই ইন্টেনসিটি ইন্টারভ্যাল ট্রেনিং করা হয়। অরিজিৎ বলছেন, “প্রাথমিক ভাবে এ ক্ষেত্রে গোটা একটা সার্কিট শেষ করে তার পর বিশ্রাম নেওয়া হয়। অভ্যেসের সঙ্গে বিশ্রামের সময় কমানো হয়।” এ ক্ষেত্রে পাঁচ-ছ’টি ব্যায়াম নিয়ে একটি সার্কিট বানিয়ে এক মিনিটে তা শেষ করে, ৩০ সেকেন্ডের বিশ্রাম নিয়ে ফের শুরু করা যেতে পারে। প্রতিটি সার্কিট তিন থেকে পাঁচ সেট করা জরুরি।
কী করবেন?
ওয়ার্ম আপ করে সার্কিট শুরু করুন। এ ক্ষেত্রে একটি সেটের মধ্য দিয়েই দেহের প্রায় প্রতিটি অঙ্গের ব্যায়াম হয়ে যায়। তাই শুরুর আগে কী কী ব্যায়াম করবেন, তা বেছে নিন—
- প্রথমে ১০-১২ বার ডাম্বেল স্কোয়াট করুন। থাই, কোর মাসলের ব্যায়াম হবে। তার পরে হ্যামস্ট্রিং, গ্লুট, হিপের জন্য ১৫ বার ডাম্বেল অল্টারনেট বক্স স্টেপ আপ করুন।
- ডাম্বেল সহযোগে অল্টারনেট লাঞ্জেস, দু’টি পায়ের প্রতিটির জন্য ১২ বার করতে পারেন।
- প্ল্যাঙ্কসও করা যায়। এতে শরীরের উপরের ও নীচের অংশের প্রায় প্রতিটি পেশির কসরত হবে। শরীরের কর্মক্ষমতা, পেশির নমনীয়তা বাড়বে।
- সার্কিট সেটে রাখতে পারেন ডাম্বেল বেন্ট ওভার রো, ডাম্বেলস রিভার্স ক্রাঞ্চেস। পেশির উন্নতির সঙ্গে কোর স্ট্রেংদেনিং, শারীরিক গঠনও ঠিক হয়।
- ডাম্বেল ওভারহেড প্রেস করাও ভাল। তবে এ ক্ষেত্রে উপরে তোলার সময়ে ডাম্বেল এক সেকেন্ডে তুলবেন, কিন্তু নীচে নামানোর সময়ে চার সেকেন্ডে নামাবেন। স্ক্যাপুলার জন্য এই এক্সারসাইজ় ভাল। এ ছাড়াও, মার্চ উইথ ডাম্বেল হোল্ড, কিকস্ট্যান্ড ডেডলিফট, ডাম্বেল বাইসেপ কার্লস ইত্যাদি করতে পারেন। ফল ভাল পেতে টিইউটি অর্থাৎ টাইম আন্ডার টেনশন পদ্ধতি অনুসরণ করা যায়।
সতর্কতা
ডাম্বেল সার্কিট বাড়িতেও করা যায়। এ ক্ষেত্রে মূলত রেজ়িসট্যান্স ও এনডিয়োরেন্স ট্রেনিং বাড়ানোর দিকে নজর দেওয়া হয়। দ্রুততার সঙ্গে এই ব্যায়াম করা হয় বলে হার্ট রেট বাড়ে। পাশাপাশি এ ধরনের শারীরচর্চায় ভঙ্গিমা ঠিক হওয়া জরুরি। বাচ্চা থেকে বয়স্ক, সকলেই এই ট্রেনিং করতে পারেন। তবে টেনিস এলবো, কোমর বা হাঁটুতে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, হৃদ্যন্ত্রের সমস্যা থাকলে এই ট্রেনিং করার আগে প্রশিক্ষকের পরামর্শ নিন।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)