—প্রতীকী চিত্র।
সাস্টেনেবল ডায়েট কথাটি ইদানীং হামেশাই শোনা গেলেও বিষয়টি আসলে কী, সে বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা অনেকেরই নেই। বিষয়টি নিঃসন্দেহে জটিল। কিন্তু সহজ ভাষায় বলা যেতে পারে, যে ধরনের খাবার আমরা খাই, সেটি কী ভাবে উৎপাদিত হয়, বিতরণের প্রক্রিয়াটিই বা কী, প্রক্রিয়াকরণের ক্ষেত্রে কী পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়, এবং সর্বোপরি, পৃথিবীর উপর তার প্রভাব কী হতে পারে, সেই সব কিছু মিলিয়েই গড়ে ওঠে সাস্টেনেবল ডায়েট। এই ডায়েটের সবচেয়ে সুন্দর দিক হল, এটি শুধু মানুষের কথাই ভাবে না। এই বিশেষ ডায়েট ব্যক্তিমানুষকে যেমন তার ‘বর্তমান’ স্বাস্থ্য সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করে, ঠিক তেমন ভাবেই আমাদের পরিবেশের ‘ভবিষ্যৎ’ সুরক্ষার প্রতিও নজর রাখে। নিশ্চিত করে, যাতে আগামী দিনে পরবর্তী প্রজন্মের খাওয়ার মতো পর্যাপ্ত উপাদান এই পৃথিবীতে মজুত থাকে।
পুষ্টি বিশেষজ্ঞ কোয়েল পালচৌধুরী বললেন, “এই ডায়েটে স্থানীয় ভাবে উৎপন্ন বিভিন্ন ধরনের দানাশস্য, ডাল, বাদাম, প্রচুর পরিমাণে মরসুমি ফল এবং আনাজ রোজকার খাদ্যতালিকায় রাখার ক্ষেত্রে উৎসাহ দেওয়া হয়। খেয়াল রাখা হয় যাতে তা সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়। এ ক্ষেত্রে যদিও উদ্ভিজ্জ প্রোটিনের উপরেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়, তবে প্রাণিজ প্রোটিনও ব্রাত্য থাকে না। কারণ, মানবশরীরে প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে প্রাণিজ প্রোটিন যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। ফলে এতে কিছুটা পরিমাণে ডিম, দুগ্ধজাত দ্রব্য, মাংস ও মাছ রাখা হয়। এই পুরো প্রক্রিয়াটিতে খাদ্য উৎপাদনে যাতে অ্যান্টিবায়োটিক এবং হরমোনের ব্যবহার ন্যূনতম রাখা যায়, সে দিকে নজর দেওয়া হয়। সাস্টেনেবল ডায়েট-কে ব্যালান্সড ডায়েটও বলা যায়। যদি একটা প্লেট হিসাবে ধরা হয়, তা হলে তাতে ৫০ শতাংশ থাকবে ফল এবং আনাজপাতি, ২৫ শতাংশ দানাশস্য, আর ২৫ শতাংশ প্রোটিন। এ তো গেল খাবারের কথা। অন্য দিকটিতে দেখা হয়, প্যাকেজিংয়ের ক্ষেত্রে যেন প্লাস্টিকের ব্যবহার প্রায় না করা হয়, এবং খাদ্য অপচয়ও যথাসম্ভব কমানো যায়।
কোয়েল পালচৌধুরী জানাচ্ছেন, আমরা রোজ যে সব খাবার খাই, তার উৎপাদন বা প্রস্তুত করার পদ্ধতিটি সব সময় স্বাস্থ্যসম্মত হয় না। অনেক সময়ে রাসায়নিকের ব্যবহার বা প্রিজ়ারভেটিভ প্রয়োগের ফলে খাবারের পুষ্টিগুণ কমে যায়। সেই কারণে ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচারাল অর্গানাইজ়েশন পরামর্শ দেয় খাবারে যতটা সম্ভব পুষ্টিগুণ অবিকৃত রাখার। ফলে খাবারে কৃত্রিম, অস্বাস্থ্যকর উপাদানের প্রয়োগ যতটা সম্ভব কমানো জরুরি। আমরা যে চিপস খাই, তার মধ্যে দিয়ে অতিরিক্ত সোডিয়াম আমাদের শরীরে মেশে। ঠান্ডা পানীয়ের মধ্যে দিয়ে কার্বন ডাই অক্সাইড মেশে। অন্য দিকে, এগুলি ব্যবহারের পর ফেলে দেওয়া প্যাকেট, বোতল পরিবেশকেও ভয়ঙ্কর দূষিত করে। সাস্টেনেবল ডায়েট এই অভ্যাসকে বর্জন করে এক সুস্থ পৃথিবীর দিশা দেখায়। এই জন্য একে অন্য ভাবে বলা হয় ‘ফুড অ্যান্ড নিউট্রিশনাল সিকিয়োরিটি’।
নিঃসন্দেহে এখনকার পৃথিবীতে খাদ্যাভ্যাস দ্রুত পাল্টাচ্ছে। স্বাস্থ্যসচেতনতাও আগের চেয়ে অনেকটাই বেড়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতেই বিভিন্ন ডায়েটের কথা শোনা যায়। যেমন— সমুদ্রের আশপাশে যাঁরা থাকেন, তাঁদের ক্ষেত্রে মেডিটেরেনিয়ান ডায়েটের কথা বলা হয়। এ ছাড়া লো-কার্ব ডায়েট, কিটো ডায়েট ইত্যাদি হরেক ডায়েট আলোচনায় উঠে আসে। কিন্তু সবার জন্য যে কোনও ডায়েটের পরামর্শ পুষ্টিবিদরা দেন না। এটা অনেকটাই প্রয়োজনভিত্তিক। রোগীর ক্ষেত্রে তাঁর রোগের ধরন, শারীরিক চাহিদার উপর ভিত্তি করে ডায়েট স্থির করা হয়। যেমন— কিটো ডায়েট শুধুমাত্র এপিলেপ্সি রোগীদের জন্য, সবার জন্য নয়। কিন্তু অনেকেই এই দিকটিকে গুরুত্ব না দিয়ে চলতি ধারায় গা ভাসিয়ে ইচ্ছেমতো ডায়েট প্ল্যান করেন। ওজন কমানোর জন্য অনেকে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই কিটো ডায়েটের দিকে ঝুঁকছেন। ভাল করে না জেনেই ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিংয়ের রাস্তাবেছে নিচ্ছেন। এতে আখেরে শরীরের ক্ষতি হয়।
সাস্টেনেবল ডায়েট এই সমস্ত বিপদের ঝুঁকি থেকে মানুষকে দূরে রাখতে সাহায্য করে। এখানে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি মেনে চাষ হয়, ক্রেতা বাজার থেকে তাজা আনাজপাতি কিনে আনেন, যেমনটি পুরনো আমলে দেখা যেত। এই কারণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও এখন এই ডায়েটে জোর দিচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy