—প্রতীকী চিত্র।
নতুন কিছু শিখতে কার না ভাল লাগে? নতুন গান, কোনও রান্না বা দূর দেশের কোনও ভাষা। আমরা যখন নতুন কিছু দেখি, শুনি বা শিখি, তখন তা মস্তিষ্কে গেঁথে যায় অর্থাৎ ‘রেজিস্টার’ করে। এই শিক্ষার মাধ্যমেই মস্তিষ্ক আমাদের কাজে সাহায্য করে। এই কাজের মধ্যে পড়ে সৃজনশীল নানা কিছু, দৈনন্দিনের যাবতীয় অভ্যাস। যেমন, গান থেকে হাত বাড়িয়ে টেবিল থেকে কলম নেওয়া ইত্যাদি। এই সবকাজেই ভূমিকা রয়েছে নিউরোপ্লাস্টিসিটির।
নিউরোপ্লাস্টিসিটি কী
নতুন কিছু শেখার সময়ে কিংবা মস্তিষ্কে ট্রমা বা আঘাত থেকে সেটির কোষগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হলে মস্তিষ্কের নিজস্ব যে মানিয়ে নেওয়া বা খাপ খাওয়ানোর প্রক্রিয়া, সেটা কাজ করতে শুরু করে। একেই বলা হয় নিউরোপ্লাস্টিসিটি।
নিউরোপ্লাস্টিসিটি বাড়ানোর উপায়
সম্প্রতি অভিনেত্রী কাজল সমাজমাধ্যমে একটি পোস্ট করেছিলেন। তাতে তাঁকে হাতের কিছু ব্যায়াম করতে দেখা যায়। কাজল জানাচ্ছেন, এটা আসলে নিউরোপ্লাস্টিসিটি বাড়ানোর জন্য করছেন।
আসলে নতুন কিছু শিখলে বা পুরনো কোনও কাজকে নতুন ভাবে করতে গেলে অভ্যস্ত হতে কিছু দিন সময় লাগে। চোটের ফলে, স্ট্রোক, ব্রেন টিউমর বা মস্তিষ্কে সংক্রমণের মতো গুরুতর সমস্যার জেরে মস্তিষ্কের কোষ নষ্ট হতে পারে। এর গুরুতর প্রভাব পড়তে পারে শরীর ও মনে। মস্তিষ্ক-কোষের নিজস্ব পুনর্গঠন ক্ষমতা নেই। ফলে কমতে থাকে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা। একটা সময়ে হাঁটা-চলা বা কথা বলার মতো দৈনন্দিন অভ্যেসগুলিতেও প্রভাব পড়ে। তবে এ ক্ষেত্রে আশার আলো দেখাতে পারে নিউরোপ্লাস্টিসিটি।
স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জয়ন্ত রায় জানাচ্ছেন, আঘাত লাগার পরে মস্তিকের প্লাস্টিসিটি বাড়ানোর জন্য নানা চিকিৎসা পদ্ধতি রয়েছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সেগুলির উদ্দেশ্য, আগে থেকে চেনা-জানা কাজগুলিকে নতুন করে আবার মনে করানো এবং এর মাধ্যমে কর্মক্ষমতা বাড়ানো।
এমনই একটি পদ্ধতি, একই কাজ বারবার করা (কনস্ট্রেন্ট ইনডিউসড মুভমেন্ট থেরাপি)। স্ট্রোকের রোগীদের জন্য ভীষণ উপকারী এটি। ধরা যাক, স্ট্রোকের ফলে বাঁ হাতে বশ নেই। কিন্তু শরীরের ডান দিকে তেমন প্রভাব পড়েনি। এ ক্ষেত্রে ডান হাতটিকে বেশি ব্যবহার না করতে দিয়ে বাঁ হাতের ব্যবহারের উপরেই জোর দেবেন চিকিৎসকেরা।
এ ছাড়া, ফিজ়িয়োথেরাপি, মিউজ়িক থেরাপির মতো কিছু চিকিৎসা পদ্ধতিও বেশ কাজে দেয়। এই সব ক্ষেত্রেই চেনা কাজ, পরিবেশ, অনুভূতিগুলির কথা মস্তিষ্ককে মনে করানোর চেষ্টা করা হয়।
আবার ‘হাওয়া বদল’ করতে নতুন জায়গায় গেলে যেমন মন-মেজাজ ফুরফুরে হয়, তেমনই তা মস্তিষ্কের প্লাস্টিসিটি বাড়াতেও সাহায্য করে। এ ছাড়া, বই পড়া, নতুন কোনও বাদ্য যন্ত্র বাজানো শেখা বা হাতের ব্যায়াম করলেও মস্তিষ্কের ফিটনেস বাড়ে। দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠা যায়।
সাবধানতা জরুরি
শিশুদের মস্তিষ্কের প্লাস্টিসিটি বেশি হওয়ায়, নতুন কিছু শিখতে বা চোট সারতে অপেক্ষাকৃত কম সময় লাগে। বয়সের সঙ্গে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা কিছুটা কমে আসে। তাই প্রাপ্তবয়স্ক, প্রবীণেরা যদি কেউ স্ট্রোক, ব্রেন টিউমর বা মস্তিষ্কে সংক্রমণের মতো গুরুতর কোনও রোগে আক্রান্ত হন, তাঁদের সেরে ওঠার ক্ষেত্রে বেশি সময় লাগে। কিছু ক্ষেত্রে প্রায় কোনও দিনই সেরে উঠতে পারেন না।
ডা. রায় জানাচ্ছেন, যে কোনও সমস্যার ক্ষেত্রে যত দ্রুত নিউরোপ্লাস্টিসিটি বাড়ানোর থেরাপি শুরু করা যায়, তত তাড়াতাড়ি রোগীর সেরে ওঠার সম্ভাবনা থাকে। তবে, সাবধানতা জরুরি। না হলে হিতে বিপরীত হতে পারে। যেমন, ফ্যান্টম লিম্ব পেন। ধরা যাক, দুর্ঘটনায় কারও বাঁ হাতটি বাদ গিয়েছে। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ে নিউরোপ্লাস্টিসিটি বাড়ানোর থেরাপি করানো হচ্ছে। ব্যায়ামের অনুকরণ করার সময়ে ডান হাতের বদলে মস্তিষ্ক যদি বাঁ হাতটিকে সঙ্কেত দেওয়ার চেষ্টা করে, তখন এক অদ্ভুত ব্যথার অনুভূতি হতে পারে রোগীর। এই ব্যথা কখনও কিছু সেকেন্ড স্থায়ী হয়, কখনও আবার বেশ কিছু দিনও চলতে পারে। সময় ও অভ্যেসের সঙ্গে অবশ্য এই সমস্যা থেকে মুক্তি মেলে।
স্ট্রোকে আক্রান্ত অনেক রোগীরও হঠাৎ ব্যথার অনুভূতি হয়। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, এই ধরনের রোগীদের ক্ষেত্রে এমন ব্যথা মস্তিষ্কের প্লাস্টিসিটি বাড়ানোর চেষ্টারই ফল।
ডা. রায় অবশ্য এ-ও জানাচ্ছেন, দুর্ঘটনা বা আঘাতের পরে নিউরোপ্লাস্টিসিটি বাড়ানো এক ধরনের কঠিন অভ্যাস বলেও মনে করেন অনেকে। কিছু ক্ষেত্রে তাই রোগীর থেরাপিতে অনীহা থাকে। এ সময় জরুরি, মনোবল বাড়ানো। কখনও মনোবিদের পরামর্শ নেওয়া, কখনও আবার অনেকের সঙ্গে এই ধরনের ব্যায়াম করানোর ফলে সুফল মিলতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy