Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
corona

নিউ নর্মালে গড়ে উঠেছে নতুন অভ্যাস, কোনটায় কী কী উপকার

মানুষের সঙ্গে ৩-৬ ফুট দূরত্ব বজায় রাখলেও কমবে ড্রপলেট সংক্রমণের আশঙ্কা। তার মধ্যে সাধারণ ফ্লু থেকে যক্ষ্মার মতো জটিল অসুখও আছে।

মাস্ক এখন সবসময়ের সঙ্গী। ফাইল চিত্র।

মাস্ক এখন সবসময়ের সঙ্গী। ফাইল চিত্র।

সুজাতা মুখোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০২০ ১০:৪৮
Share: Save:

কোভিড-১৯ কবে যাবে বা কত দিন পর আবারও পৃথিবী আগের মতো হবে, বিজ্ঞানী চিকিৎসকরা কেউই নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না এ কথা। এ দিকে টিকা আসতে আসতে কম সে কম এক-দেড় বছর। এলেও আমরা সবাই নিতে পারব কিনা, ঠিক নেই। এ রকম পরিস্থিতিতে রোগ ঠেকাতে সম্বল বলতে লকডাউনের সময় বা তার আগে থেকে শেখা কিছু অভ্যাস, যা বছর দেড়েক তো বটেই, সম্ভব হলে জীবনভর চালিয়ে যেতে হবে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সুবর্ণ গোস্বামীর কথায়, “লকডাউন উঠে গেল মানে আপনি আপনি মুক্ত বিহঙ্গ, আগে যেমন ছিলেন, তেমন, তা আর হওয়ার নয়। কারণ এই ভাইরাস চলে যাওয়ার জন্য আসেনি। এইচআইভি, ডেঙ্গি, ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস যেমন ঘুরে-ফিরে আসে, এও তেমন। সময়ের সঙ্গে প্রকোপ হয়তো কমে যাবে। কমবে ধ্বংস করার ক্ষমতা। কিন্তু কবে কমবে, কতটা কমবে বা আদৌ কমবে কিনা, তা বলা খুব কঠিন। ভ্যাকসিন কবে আসবে তাও বলা যাচ্ছে না। কাজেই এখন যেমন সাবধান হয়ে চলছেন, মাস্ক পরছেন, হাত ধুচ্ছেন, দূরত্ব বজায় রাখছেন, তেমনই থাকতে হবে তখনও। বাইরে বেরোনোর সময় ছোট্ট পাউচে সাবান, স্যানিটাইজার, অতিরিক্ত মাস্ক নিয়ে বেরোবেন। ক্লাব-পার্টি, রেস্তরাঁয় খেতে যাওয়া, চায়ের দোকানে আড্ডা, পাশাপাশি বসে সিনেমা-থিয়েটার দেখা, দূরে কোথাও বেড়াতে যাওয়ার ভাবনা থাকলেও ভুলে থাকতে হবে বছরখানেক।”

জীবনযাপনে এই পরিবর্তনটুকু নিয়ে আসতে পারলে, শুধু করোনা নয়, বাঁচা যাবে আরও অনেক সমস্যার হাত থেকেই, এই মত মেডিসিনের চিকিৎসক সুকুমার মুখোপাধ্যায়েরও।

আরও পড়ুন: করোনার হানা কমেনি, সুস্থ থাকতে এখন কী কী মানতেই হবে​

সু-অভ্যাসের অন্য উপকার

খাওয়ার আগে-পরে, বাইরে থেকে এসে বা এমনিও মুখে-নাকে হাত দেওয়ার আগে হাত ভাল করে সাবান জলে ধুয়ে নিলে বা ৭০-৯০ শতাংশ অ্যালকোহলসমৃদ্ধ স্যানিটাইজারে হাত পরিষ্কার করে নিলে ফ্লু থেকে শুরু করে পেটের গোলমাল ও অন্য সংক্রমণজনিত অসুখের আশঙ্কা কমবে।

মানুষের সঙ্গে ৩-৬ ফুট দূরত্ব বজায় রাখলেও কমবে ড্রপলেট সংক্রমণের আশঙ্কা। তার মধ্যে সাধারণ ফ্লু থেকে যক্ষ্মার মতো জটিল অসুখও আছে।

মাস্ক আপনাকে বাঁচাবে ফ্লু, টিবি, ডাস্ট বা পোলেন অ্যালার্জি থেকে। লকডাউন খুললে পরিবেশ দূষণের প্রকোপ শুরু হয়ে যাবে, মাস্ক পরলে তা কিছুটা ঠেকাতে পারবেন। পরোক্ষ ধূমপানের হাত থেকেও বাঁচবেন কিছুটা।

ব্যাঙ্ক কিংবা ডাকঘর, লাইন দিলেও বজায় রাখতে হবে সামাজিক দূরত্ব। ফাইল ছবি।

চড়া রোদে যাতায়াতের সময় মাস্ক পরে নিলে বা চোখ বাদে বাকি মাথা-মুখ সব ওড়নায় ঢেকে বেরোনোর চল হয়েছে তেমন যদি করেন, যদি সঙ্গে ছাতা-সানগ্লাস থাকে, সানস্ক্রিনের খরচ বেঁচে যাবে।

আরও পড়ুন: কম্পিউটারে এক টানা কাজ, 'ভিশন সিনড্রোম' থেকে বাঁচতে এই সব মানতেই হবে

রোদ না লাগায় চুল শুষ্ক হবে কম। মুখ ঢাকা থাকলে মেক-আপের প্রয়োজন হবে না। প্রয়োজন হবে না বিউটি ট্রিটমেন্টের। এতে খরচ যেমন কমবে, কমবে সংক্রমণজনিত বিপদের আশঙ্কাও।

যতটুকু দূরত্ব রাখার কথা বলা হচ্ছে, পার্লার ট্রিটমেন্টের সময় সে দূরত্ব থাকে না। তাছাড়া অন্যের হাত আপনার নাকে-মুখে না লাগাই ভাল কিছুদিন।

ত্বকের ক্ষতি হবে? হবে না। রোদ এবং মেক-আপ এড়িয়ে গেলে ত্বক ভাল হবে আগের চেয়ে।

ত্বক, স্বাস্থ্য সবই ভাল থাকবে যদি নিজে হাতে ঘরে রান্না করার অভ্যাসটা বজায় রাখতে পারেন। কম তেলে রান্না করা হালকা খাবার পেট একটু খালি রেখে খেলে ও বাইরের খাবার না খাওয়ার অভ্যাস মোটামুটি বজায় রাখতে পারলে, এখন যেমন ডাক্তারের প্রয়োজন খুব একটা হচ্ছে না, পরেও হবে না।

আরও পড়ুন:ঘরবন্দি বাচ্চা বুঁদ টিভি-মোবাইলে, সামলাতে কী কী করতেই হবে

ফিটনেস বিশারদরা বলছেন, নিজের কাজ নিজে করার অভ্যাস বজায় রাখুন। এতে শরীর যেমন সচল থাকে, বাইরের লোকের মাধ্যমে ঘরে সংক্রমণ ঢোকার আশঙ্কা কমে। তাছাড়া সহায়িকা না এলে নিজেও সব সামলানোর অভ্যাস করতে হবে। লকডাউনে ছাদ-বারান্দায় হাঁটাহাঁটিতে যদি ওজন কমে থাকে, সেটা বন্ধ করবেন না। অবশ্য বন্ধ করতে চাইলেই যে পারবেন, এমন নয়। কারণ এক মাসে ব্যায়ামের অভ্যাসও হয়ে যায়। না করলে খালি খালি লাগবে।

শরীরচর্চার অভ্যাস বজায় রাখতে হবে। ছবি:শাটারস্টক

ক্লাব-পার্টি-বেড়ানো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যে মন খারাপ হয়েছে, তা ভাল হয়ে যাবে যখন দেখবেন মাসের শেষে কিছু পয়সা জমছে হাতে। মন্দার বাজারে উপরি এই টাকাটুকু অনেক দরকারে লাগবে।

আরও পড়ুন:সব সময় শাসন নয়, ‘স্পেস’ দিন শিশুদেরও

লকডাউনে সময় কাটাতে অনেকেই অনেক নতুন কিছু শুরু করেছেন। কেউ গান গাইছেন, কেউ বাগান করছেন, কেউ মানুষের সেবায় মন দিয়েছেন আরও বেশি করে। এই অভ্যাসটা নষ্ট করবেন না। ভবিষ্যতে যদি আরও কোনও বিপদ আসে এই ভাবেই সে বিপদ কাটিয়ে উঠতে পারবেন।

(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE