বিশ্ব তথা দেশ জুড়ে লোকস্বাস্থ্যে এর প্রভাব আগামী দিনে বাড়বে বলেই মত চিকিৎসকদের। প্রতীকী ছবি।
তলে তলে জাল বিস্তার করছে ‘নন-কমিউনিকেবল ডিজ়িজ়’। গোপনে বেড়ে চলা প্রাণঘাতী এই ধরনের রোগের সঙ্গেই বাড়ছে ‘মেটাবলিক আনহেলদিনেস’ বা অস্বাস্থ্যকর মেটাবলিক অবস্থা ও মদ্যপান না করা সত্ত্বেও যকৃতে মেদ জমার সমস্যায় আক্রান্তের সংখ্যা। বিশ্ব তথা দেশ জুড়ে লোকস্বাস্থ্যে এর প্রভাব আগামী দিনে বাড়বে বলেই মত চিকিৎসকদের। শহুরে ও সম্পন্ন পরিবারেই শুধু নয়, গ্রামীণ জীবনেও গভীর প্রভাব ফেলেছে এই সমস্যা।
সম্প্রতি ওয়েস্ট বেঙ্গল লিভার ফাউন্ডেশনের করা এক কার্যকরী গবেষণায় উঠে এল এই বিষয়টিই। গ্রামবাংলায় কতটা সহজ পদ্ধতির মাধ্যমে মেটাবলিক ডিজ়অর্ডার এবং নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার চিহ্নিত করা যায়, তা-ও তুলে ধরা হয়েছে এই গবেষণায়। পাশাপাশি, এই কাজে গ্রামীণ স্বাস্থ্য পরিষেবকদের ভূমিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তারও উল্লেখ করা হয়েছে। করোনা অতিমারির আগে দু’বছর ধরে চলা ওই গবেষণাপত্রটি সোমবার গ্রহণ করেছে ‘ল্যানসেট’ পত্রিকা। ওই গবেষণার পরিকল্পনা করেছিলেন লিভার ফাউন্ডেশনের মুখ্য উপদেষ্টা, চিকিৎসক অভিজিৎ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের গবেষণার মূল লক্ষ্য ছিল, মেটাবলিক ডিজ়অর্ডারের ঝুঁকিসম্পন্ন মানুষদের সুচারু ভাবে ধাপে ধাপে তুলে আনার একটা ব্যবস্থাপনা তৈরি করা। গ্রামীণ ভারতের ভিতর থেকে সেই রোগীদের তুলে আনার চেষ্টা করা হয়েছে এবং গ্রামীণ স্বাস্থ্য পরিষেবকদের সুসংহত ভাবে ব্যবহারের দিকটিও দেখানো হয়েছে। পুরো প্রক্রিয়াটি কতটা বাস্তবসম্মত, সেটাই এই গবেষণার মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে।’’
গবেষণায় অংশ নিয়েছিলেন লিভার ফাউন্ডেশনের সম্পাদক পার্থ মুখোপাধ্যায়, এসএসকেএম হাসপাতালের হেপাটোলজির বিভাগীয় প্রধান, চিকিৎসক কৌশিক দাস, এন্ডোক্রিনোলজির শিক্ষক-চিকিৎসক সুজয় ঘোষ ও প্রদীপ মুখোপাধ্যায়। তাঁরা জানাচ্ছেন, খুব শীঘ্রই গবেষণাপত্রটি ল্যানসেট পত্রিকায় প্রকাশিত হবে। পার্থ জানাচ্ছেন, ২০১৫-’১৬ সালে বীরভূমের ১৯টি ব্লকের উপরে এই গবেষণা চালানো হয়। ওই সমস্ত ব্লকের ভোটার তালিকা থেকে প্রতি পাঁচ জন অন্তর এক জনকে বাছা হয় গবেষণার জন্য। এ ভাবে ৭৯,৯৫৭ জনের রক্তচাপ, র্যান্ডম ব্লাড সুগার, ওজন, উচ্চতা ও ভুঁড়ির পরিমাপ করেন গ্রামীণ স্বাস্থ্য পরিষেবকেরা। পাশাপাশি, প্রত্যেকের পরিবারিক তথ্যও নির্দিষ্ট ফর্মে নথিভুক্ত করা হয়। সমীক্ষায় দেখা যায়, ৪১ হাজার ৯৫ জনের কোনও না কোনও পরীক্ষার ফলাফলে সমস্যা ধরা পড়েছে। তখন প্রথম পর্যায়ে তাঁদের হলুদ কার্ড দেওয়া হয়।
সেখান থেকে ৯৮১৯ জন আসেন দ্বিতীয় স্তরের পরীক্ষার জন্য। তখন প্রত্যেকের লিভার এনজ়াইম (এএলটি) এবং ফাস্টিং ব্লাড সুগার (এফবিএস) পরীক্ষা করানো হয়। তাতে যে কোনও একটি বা দু’টিতেই সমস্যা রয়েছে, এমন ৫২৮৩ জনকে চিহ্নিত করা হয়। ‘মেটাবলিক আনহেলদিনেস’-এ আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকা ওই সমস্ত রোগীকে তখন লাল কার্ড দেওয়া হয় তৃতীয় স্তরের পরীক্ষার জন্য। এ বার সেখান থেকে ১৪০৩ জনের বেশ কয়েকটি রক্ত পরীক্ষা করানো হয়। পার্থ বলেন, ‘‘দেখা যায়, প্রত্যেকেরই কোনও না কোনও ‘মেটাবলিক আনহেলদিনেস’-এর সমস্যা রয়েছে। অর্থাৎ, ডায়াবিটিস, যকৃতের গোলমাল, উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা। একটি বড় অংশের মধ্যে নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতাও রয়েছে।’’
সুজয় বলেন, ‘‘মেটাবলিক ডিজ়অর্ডারের কারণে ডায়াবিটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও স্থূলতার পাশাপাশি যকৃতের সমস্যাও যে প্রকট হচ্ছে, এই গবেষণার মাধ্যমে তা তুলে ধরা হয়েছে।’’ আর কৌশিক জানাচ্ছেন, যে সমস্ত জায়গা এখনও অনুন্নত কিংবা ঠিকঠাক চিকিৎসা পরিকাঠামো নেই, সেখানে একটি কার্যকরী উপায়ে ‘নন-কমিউনিকেবল ডিজ়িজ়’ প্রতিরোধের কাজ কতটা সুসংহত ভাবে করা যায়, সেটাই বিশ্বের দরবারে তুলে ধরা হয়েছে। দু’বছরের এই গবেষণায় বীরভূমের ১৯টি ব্লকে মোট ৫০টি কেন্দ্র করা হয়েছিল। যেখানে কাজ করেছেন প্রায় ৫০০ গ্রামীণ স্বাস্থ্য পরিষেবক। প্রথম ও দ্বিতীয় স্তরের পরীক্ষা ওই সব কেন্দ্রে হওয়ার পরে, চারটি কেন্দ্রীয় জায়গায় হয়েছে তৃতীয় বা চূড়ান্ত স্তরের পরীক্ষা। অভিজিতের কথায়, ‘‘লোকস্বাস্থ্যের আঙ্গিকে গ্রামীণ স্বাস্থ্য পরিষেবকেরা কতটা সহায়ক হতে পারেন, সেটাও এ বার গবেষণায় প্রমাণিত হল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy