সায়ন দে
১৭ সেপ্টেম্বর সংখ্যাটা ছিল ৭৯।
তার ঠিক এক সপ্তাহের মধ্যে কলকাতায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যাটা গিয়ে দাঁড়াল ১৬৫-তে।
সাত দিনে কলকাতায় ৮৬ জন নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ডেঙ্গিতে। দিল্লির পরে কলকাতাতেও রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে ডেঙ্গির তীব্রতাও। বৃহস্পতিবারই শহরের দুই সরকারি হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে দু’জনের। এক জনের বয়স পাঁচ বছর। সে সল্টলেকের বাসিন্দা। অন্য জন বালুরঘাটের বাসিন্দা এক যুবক। তবে কারও মৃত্যুর কারণ হেমারেজিক ডেঙ্গি নয় বলেই স্বাস্থ্য-কর্তারা জানিয়েছেন। তবে বেসরকারি হাসপাতালে কত জন রোগী ভর্তি, সেখানে ডেঙ্গিতে কারও মৃত্যু হয়েছে কি না, সে ব্যাপারে স্বাস্থ্য দফতরের কাছে সুনির্দিষ্ট কোনও তথ্য নেই। শুধু কলকাতা মহানগরীই নয়। ডেঙ্গি ছড়াচ্ছে পার্শ্ববর্তী বিধাননগর পুর-নিগম এলাকাতেও। এ দিন সন্ধ্যায় বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বীরভূমের ময়ূরেশ্বরের বাসিন্দা রেখা দাসের (৪০) মৃত্যু হয়েছে বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর।
এই পরিস্থিতিতেও কলকাতা পুরসভা কিন্তু আত্মবিশ্বাসে ভরপুর। জঞ্জাল সাফাই দফতরের মেয়র পারিষদ দেবব্রত মজুমদারের স্ত্রী ও ছেলে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষ নিজে জ্বরে কাবু। এ অবস্থায় পুরকর্তারা গত বছরের পরিসংখ্যান তুলে বলছেন, এ বছর কলকাতায় ডেঙ্গি-আক্রান্তের হার ৬০ শতাংশ কম। গত বছর এ সময়ে কলকাতায় ৪৫০ জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। কিন্তু সাত দিনে ৮৬ জন নতুন করে আক্রান্ত হয়েছিলেন কি না, সে তথ্য অবশ্য পুরকর্তারা জানাতে পারেননি। মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘শহরে ডেঙ্গি হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু অবস্থা নিয়ন্ত্রণে। পুরসভা আগেই ব্যবস্থা নিয়েছে। এ ছাড়াও খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ঘটনাস্থলে গিয়ে আমাদের স্বাস্থ্যকর্মীরা মশা মারার কাজ করছেন। সব ক’টি বরোতেই ক্যাম্প করা হয়েছে। যে বাড়িতে ডেঙ্গির রোগী পাওয়া যাচ্ছে, সেই বাড়ি-সহ আশপাশের আরও ৫০টি বাড়িতে ধোঁয়া ছড়ানো হচ্ছে।’’
ধোঁয়া ছড়িয়ে মশা তাড়ানো যায় কি না, সেই ধোঁয়ায় মানুষের ক্ষতি হয় কি না— তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে যথেষ্ট। কিন্তু পুরকর্তারা এখন বিপাকে পড়ে ধোঁয়াকেই ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণের মূল অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছেন। তবে এখনও শহরে মানুষকে সচেতন করার তেমন প্রয়াস চোখে পড়েনি পুরসভার তরফে। প্রতি বছর জুলাই-সেপ্টেম্বর মাসে ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়ার বাড়বাড়ন্ত হয়। বৃষ্টিতে বাইরের জমা জল ধুয়ে গেলেও ঘরের ভিতরে যে পরিষ্কার জল জমা থাকে, তা সরে না। আর ডেঙ্গির বাহক এডিস ইজিপ্টাই মশা জন্মায় ঘরের ভিতরে জমিয়ে রাখা পরিষ্কার জলেই।
বাড়ি-বাড়ি গিয়ে পুরসভা ঠিকমতো প্রচার অভিযান চালালে এমনটা হতো না বলে মনে করছেন চিকিৎকদের অনেকেই। বৃহস্পতিবার মুম্বইয়ে বাড়িতে জমিয়ে রাখা পরিষ্কার জলে এডিস ইজিপ্টাইয়ের লার্ভা মেলায় বেশ কয়েক জন চিত্রতারকাকে নোটিস পাঠিয়েছে মুম্বই পুরসভা। কলকাতা পুরসভা কেন এ ভাবে বাড়ি-বাড়ি গিয়ে দেখে না সেই প্রশ্নও উঠতে শুরু করেছে। তবে কলকাতা পুরসভার দাবি, তারা বাড়ি-বাড়ি নিয়মিত জমা জল খুঁজে বেড়ায়। শহরের কয়েকটি হাসপাতালকে নোটিসও পাঠানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকালে বি সি রায় হাসপাতালে মারা যায় সল্টলেকের সিডি ব্লকের বাসিন্দা পাঁচ বছরের সায়ন দে। গত শুক্রবার সে জ্বরে আক্রান্ত হয়েছিল। বি সি রায় হাসপাতালে ডেঙ্গি-আক্রান্ত হয়ে মোট ছ’টি শিশু ভর্তি রয়েছে, তবে তাদের প্রত্যেকের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি। এ দিনই এসএসকেএম হাসপাতালে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন বালুরঘাটের তুরিপাড়া এলাকার বাসিন্দা দীপক সিংহ। বছর পঁয়ত্রিশের এই যুবক পেশায় শ্রমিক ছিলেন। আইডি হাসপাতালেও আপাতত ২০ জন ডেঙ্গি রোগী ভর্তি। তাঁদের মধ্যে তিন জনের আবস্থা আশঙ্কাজনক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy