চিকিৎসায় গাফিলতিতে সদ্যোজাতের মৃত্যুর অভিযোগকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে উঠল রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতাল চত্বর। অভিযুক্ত চিকিৎসক ও নার্সদের শাস্তির দাবিতে বৃহস্পতিবার দুপুর ২টো নাগাদ ওই প্রসূতির পরিবারের লোকজনেরা হাসপাতাল সুপারের দফতরের দরজা বাইরে থেকে আটকে দিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। বিক্ষোভে সামিল হন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন একাধিক রোগী, রোগিণীর পরিবারের লোকজন। তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত হাসপাতাল পরিষেবা সহায়তা কেন্দ্রের সদস্যরা বিক্ষোভে সামিল হন। সুপারের ঘরে আটকে পড়েন তিন চিকিৎসক সহ একাধিক স্বাস্থ্যকর্মী ও প্রশাসনিক বিভাগের কর্মীরাও।
সাড়ে ৩টে নাগাদ পুলিশ ও হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সুপার কমল সরকার আন্দোলনকারীদের তদন্তের আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। পুলিশ চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্য কর্মীদের হাসপাতালে ঢুকিয়ে দেয়। ওই প্রসূতির পরিবারের তরফে হাসপাতালের প্রসূতি রোগ বিশেষজ্ঞ তাপসকুমার ঘোষের বিরুদ্ধে লিখিত ভাবে উত্তর দিনাজপুরের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক, রাজ্যের পরিষদীয় সচিব অমল আচার্য এবং হাসপাতাল পরিষেবা সহায়তা কেন্দ্রের প্রধান তপন নাগের কাছে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ জানানো হয়। হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সুপার কমলবাবু বলেন, “অভিযুক্ত চিকিৎসক ও নার্সদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে। কারও গাফিলতি প্রমাণ হলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” অভিযুক্ত চিকিৎসক তাপসবাবুকে ফোন করা হলে তিনি তিনি ধরেননি। কিছুক্ষণ পরে বোঝা যায়, তাঁর মোবাইল বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
হাসপাতাল সূত্রে খবর, ইটাহারের বাড়িওল এলাকার বাসিন্দা তিরিশোর্ধ্ব প্রসূতি রসেনা খাতুন নামে ওই গৃহবধূর প্রসব যন্ত্রণা শুরু হওয়ায় মঙ্গলবার রাত ৮টা নাগাদ তাঁকে হাসপাতাল নিয়ে যান পরিবারের লোক। চিকিৎসক তাপসবাবুর অধীনে হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগে তাঁকে ভর্তি করানো হয়। পরিবারের লোকজনের দাবি, পরদিন সকালে চিকিৎসক তাপসবাবু রসেনার স্বাস্থ্যপরীক্ষা করে সদ্যোজাত পরিণত হয়নি বলে জানিয়ে দেন। এর পরে ওই প্রসূতিকে মহিলা সার্জিক্যাল ওয়ার্ডে ভর্তি করানোর পরামর্শ দেন। সেই মতো তাঁরা রসেনাকে সার্জিক্যাল ওয়ার্ডে ভর্তি করেন! অভিযোগ, এদিন ভোর তিনটে নাগাদ সার্জিক্যাল ওয়ার্ডে বেডে শুয়েই পুত্রসন্তান প্রসব করে ফেলেন প্রসূতি রসেনা দেবী। নার্সদের পরামর্শে আয়ারা ওই সদ্যোজাতকে শিশু বিভাগে নিয়ে গেলে সেখানেই ওই সদ্যোজাতের মৃত্যু হয়। এর পর রসেনা বিবিকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ফের প্রসূতি বিভাগে নিয়ে যান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
পেশায় চাষি রসেনার স্বামী মুস্তাক আলি বলেন, “চিকিৎসক তাপসবাবু আমার স্ত্রীকে সার্জিক্যাল ওয়ার্ডে ভর্তি করানোর পরামর্শ দিলে পুত্রসন্তানের মৃত্যু হত না। তাঁর অভিযোগ, মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার দুপুর পর্যন্ত তাঁর স্ত্রী প্রসূতি বিভাগে প্রসব যন্ত্রণায় ছটপট করলেও ওষুধ বা স্যালাইন দেওয়া হয়নি। সেই সঙ্গে চিকিৎসকও দেখতে যাননি বলে তারঁ অভিযোগ। সে জন্য হাসপাতালের ওই শয্যায় রসেনার প্রসব হয়ে যায়। রসেনার ভাই আব্দুল বারেক, হাসপাতাল পরিষেবা সহায়তা কেন্দ্রের সদস্য সুমিতকুমার দাসের অভিযোগ, হাসপাতালে চিকিৎসকদের একাংশ সঠিক সময়ে হাসপাতালের বহির্বিভাগ ও রাউন্ডে না গিয়ে প্রাইভেট প্র্যাক্টিস ও নার্সিংহোম নিয়ে ব্যস্ত। সে জন্যই এমন গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে বলে রোগীদের অনেক আত্মীয়-স্বজনই মনে করেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy