Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪

রোগীর ঘরে সাপ ঢুকেছে, গাছতলায় চলে চিকিৎসা

রোগীর ঘরে সাপের বাসা! হুড়া ব্লকের রখেড়া-বিসপুরিয়া উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের মাটির ঘরের ভিতরে সাপের দেখা মিলেছে। ঘরের ভিতরে সাপের উপদ্রবের জেরে বাধ্য হয়ে তাই গাছতলাতেও মাঝে মধ্যে রোগীদের চিকিৎসা করা হচ্ছে। ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পোশাকি নাম পড়াশিয়া উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র। শ্যামপুর গ্রামের এক প্রান্তে গোয়ালা পাড়ায় এই স্বা্যস্থ্যকেন্দ্র। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গ্রামের প্রান্তে একটি ভাড়াবাড়িতে এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি।

কখনও পোড়ো বাড়ি, কখনও গাছতলায় চলে স্বাস্থ্যকেন্দ্র। —নিজস্ব চিত্র

কখনও পোড়ো বাড়ি, কখনও গাছতলায় চলে স্বাস্থ্যকেন্দ্র। —নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০১৪ ০২:১১
Share: Save:

রোগীর ঘরে সাপের বাসা!

হুড়া ব্লকের রখেড়া-বিসপুরিয়া উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের মাটির ঘরের ভিতরে সাপের দেখা মিলেছে। ঘরের ভিতরে সাপের উপদ্রবের জেরে বাধ্য হয়ে তাই গাছতলাতেও মাঝে মধ্যে রোগীদের চিকিৎসা করা হচ্ছে।

ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পোশাকি নাম পড়াশিয়া উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র। শ্যামপুর গ্রামের এক প্রান্তে গোয়ালা পাড়ায় এই স্বা্যস্থ্যকেন্দ্র। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গ্রামের প্রান্তে একটি ভাড়াবাড়িতে এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি। এখানে স্বাস্থ্য পরিষেবা বলতে গর্ভবতী মহিলাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা, নবজাতকদের বিভিন্ন টীকাকরণ, কিশোরী ও ছোট মেয়েদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ইত্যাদি পাওয়া যায়।

কয়েক সপ্তাহ আগে এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মধ্যে একটি সাপ ঢুকে পড়ে বলে খবর। তখন এই উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রটি বন্ধ ছিল। সাপটিকে ঘরের ভিতরে ঢুকতে দেখা গেলেও কেউই বেরোতে দেখেনি। তাতেই আত্ঙ্ক ছড়িয়েছে স্বাস্থ্যকর্মী ও রোগীদের মধ্যে। ওই ঘরের ভিতরে কাজ করতে চাইছেন না কিছু স্বাস্থ্যকর্মী। টালির ছাউনির নীচে কমবেশি ৮ ফুট বাই ৬ ফুটের ছোট্ট ঘর। সেখানে একটি টেবিল, গোটা দুয়েক চেয়ার ও একটি লোহার আলমারি রয়েছে। দেওয়াল জুড়ে লম্বা ফাটল। শুধু এ বারই নয়, বছর দেড়েক আগে একদিন যথারীতি সকালে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রোগী থাকাকালীন একটি সাপ দেখা গিয়েছিল এখানে।

স্বাস্থ্যকর্মী নমিতা মাহাতো-র কথায়, “একজন চিৎকার করে ওঠেন, ‘দিদিমণি সাপ সাপ!” সকলেই দেখেন মেঝেতে বিরাট এক কেউটে। ভয়ে টেবিলের উপরে উঠে সে বার কোনও রকমে রক্ষা পাওয়া গিয়েছিল। লোকজন সাপটিকে পিটিয়ে মেরে ফেলে। ফের সম্প্রতি এলাকার লোকজন.একটি সাপকে দরজার ফাঁক দিয়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভিতরে ঢুকতে দেখেন। পরের দিন ওই ঘরে সাপ নজরে না এলেও ভয়ে ঘরের মধ্যে কাজ করতে পারছেন না কেউই।” এক স্বাস্থ্যকর্মীর কথায়, “দেখছেন তো ঘরের অবস্থা? চালার মধ্যে কিংবা ফাটলের মধ্যে যদি সাপ সেঁধিয়ে থাকে. এই অবস্থায় কাজ করব কী ভাবে?” রোগীরাও বলছেন দিদিমণি বাইরে দেখুন।

শুধু তাই নয়, এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দুরাবস্থা নিয়েও বাসিন্দাদের ক্ষোভ রয়েছে। এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মাথার উপরে ছাউনির টালি এখানে-সেখানে ভাঙা। ছাউনির কাঠে উই ধরে যাওয়ায় মাঝে মধ্যেই ওষুধ-ইঞ্জেকশনের উপরে ঝুরঝুর করে মাটিও পড়ে বলে অভিযোগ। আক্ষরিক অর্থেই ঘুপচি ঘর। কেন না ঘরে আলো-বাতাস ঢোকার পথ বলতে শুধু দরজাটুকুই। একটাও জানালা নেই। কর্মীরা জানান, সামান্য বৃষ্টি হলেই জল পড়ে। বাইরে ওষুধপত্র রাখার জো নেই। কিন্তু স্বাস্থ্যকর্মীদের বিপদ অন্যত্র। লোহার আলমারিতে স্থান সঙ্কুলানের অভাবে এতদিন কোনওরকমে পেটির মধ্যে কিছু ওষুধপত্র রেখেছিলেন। এ বার বর্ষাকাল শুরু হলে আরও সমস্যা। পিছনের দিক আগাছায় ভর্তি। ঘরের মধ্যেও বিদ্যুৎ নেই।

এই পরিস্থিতিতে উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রের অদূরে মাঝে মধ্যে গাছের ছায়ায় চলছে মহিলাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা। এক স্বাস্থ্যকর্মীর কথায়, “মহিলাদের নানা সমস্যা থাকে যা তাঁরা আমাদের একান্তে বলেন। কিন্তু বাইরে অন্য রোগীদের সামনে তা বলতে তাঁরা সঙ্কোচ বোধ করছেন। আবার ভিতরে যেতেও চাইছেন না।” এলাকার বাসিন্দা যাঁরা চিকিৎসা করাতে এসেছিলেন তাঁদের মধ্যে সুপর্ণা হেমব্রম, দীপালি মুর্মু, তুফান বাউরিদের কথায়, “শুনলাম ঘরের ভিতরে সাপ ঢুকেছে। সকলেই তাই বলছেন। ঘরের মধ্যে ঢুকতে ভয় লাগছে। বাধ্য হয়ে বাইরেই দেখাতে হচ্ছে।”

রখেড়া-বিসপুরিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান বৈশাখী মাহাতো বলেন, “ওই গ্রামের উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রটির বেহাল অবস্থার কথা জানি। বেশি দিন আমরা পঞ্চায়েতে আসেনি। বিএওএইচ এবং পঞ্চায়েত সমিতিকে বিষয়টি সম্পর্কে অবগত করেছি।. আমরা নতুন করে এই উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের বাড়ি নির্মাণ করতে চাই।” বিএমএইচ নরেন্দ্রনাথ সোরেন বলেন, “আমি সবে এই ব্লকের দায়িত্ব নিয়েছি। ওখানে উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের বাড়ি তৈরি করা হচ্ছে বলে শুনেছি। তবে কোন কারনে সেই কাজ আটকে রয়েছে। কেন আটকে রয়েছে তা খোঁজ নেব।” তাঁর পরামর্শ, স্বাস্থ্যকর্মীরা কাবোর্লিক অ্যাসিড ব্যবহার করে আপাতত কাজ চালাতে পারেন।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy