চতুর্থ শ্রেণির কর্মীদের দিয়ে প্লাস্টার খোলানো হচ্ছে হাসপাতালে। তার উপর, প্লাস্টার কাটতে গিয়ে টাকাও নিচ্ছেন সেই কর্মীরা। টাকা নেওয়ার অভিযোগ পেয়ে রোগীদের লাইনে দাঁড়িয়ে পড়েছিলেন বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সহকারী সুপার। এবং তিনি-ই হাতেনাতে ধরে ফেললেন টাকা চাওয়ায় অভিযুক্ত এক চতুর্থ শ্রেণির কর্মীকে।
সোমবারের ঘটনায় অভিযুক্ত ওই কর্মীর নাম মনোরঞ্জন তালুকদার। এক রোগীর আত্মীয় মনোরঞ্জনবাবুর বিরুদ্ধে লিখিত ভাবে হাসপাতাল সুপারের অফিসে এ দিন প্লাস্টার খোলার জন্য টাকা নেওয়ার অভিযোগ করেন। হাসপাতাল সুপার পঞ্চানন কুণ্ডু অবশ্য এ দিন কলকাতায় ছিলেন। তাঁর অনুপস্থিতিতে হাসপাতালের এক আধিকারিক বলেন, “রোগীর আত্মীয়ের তরফে অভিযোগ পাওয়ার পরে তদন্তে নামা হয়। মনোরঞ্জনবাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। পুরো বিষয়টি হাসপাতাল সুপারকে জানানো হবে। তিনিই এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।” হাসপাতাল সুপার পঞ্চানন কুণ্ডু পরে ফোনে বলেন, “এই ধরনের ঘটনা বরদাস্ত করা হবে না। আমি বাইরে আছি। ফিরে ঘটনা সম্পর্কে বিশদে খোঁজ নিয়ে কড়া ব্যবস্থা নেব।” মনোরঞ্জনবাবু অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
১০ বছরের ভাইপো সুমন দাসের হাতের প্লাস্টার খোলাতে এ দিন পাত্রসায়র থেকে বাঁকুড়া মেডিক্যালে এসেছিলেন যাদব দাস। তাঁর অভিযোগ, প্লাস্টার কাটার দায়িত্বে থেকে মনোরঞ্জববাবু তাঁর কাছ থেকে এই কাজের জন্য ৪০ টাকা দাবি করেন। টাকা না দিলে প্লাস্টার কাটা হবে না বলেও জানিয়ে দেন। এর পরেই যাদববাবু সরাসরি হাসপাতাল সুপারের অফিসে গিয়ে লিখিত ভাবে ঘটনাটি নিয়ে অভিযোগ জানান। সুপার বাইরে থাকায় ডেপুটি সুপার নিমাইচাঁদ দেবনাথ দায়িত্বে ছিলেন। অভিযোগ পেয়েই সরেজমিনে খতিয়ে দেখতে রোগীর সঙ্গে আউটডোরে যান সহকারী সুপার প্রশান্ত ভট্টাচার্য। রোগীদের লাইনে যাদববাবুকে সামনে রেখে দাঁড়িয়ে পড়েন তিনিও। হাসপাতাল সূত্রের খবর, যাদববাবুকে দেখেই মনোরঞ্জনবাবু বলেন, ‘আপনাকে বললাম তো ৪০ টাকা লাগবে!’ যাদববাবু বলেন, ‘অত টাকা নেই। অনেক দূর থেকে এসেছি।’ এর পর মনোরঞ্জনবাবু ৩০ টাকায় তাঁর ভাইপোর প্লাস্টার খুলতে রাজি হয়ে যান। কিন্তু সেই টাকাও নেই বলে টাকা দিতে চাননি যাদববাবু। তখন মনোরঞ্জনবাবু যাদববাবুকে রোগীদের লাইন থেকে সরে দাঁড়াতে বলেন।
আর যাদববাবুর পিছনে দাঁড়িয়ে এই গোটা কথোপকথনের সাক্ষী সহকারী সুপার প্রশান্তবাবু। মনোরঞ্জনবাবু তাঁকে চিনতে পারেননি। প্রশান্তবাবু তাঁর কাছে জানতে চান, কেন টাকা নেওয়া হচ্ছে। মনোরঞ্জনবাবু সাফ জানিয়ে দেন, বাইরে প্লাস্টার খুলতে ৪০ টাকা লাগে। এখানে ৩০ টাকা দিতে হবে। টাকা দিতে না পারলে বাইরে গিয়ে প্লাস্টার খোলাতে হবে। এই কথা বলে তিনি প্রশান্তবাবুকেও লাইন থেকে সরে দাঁড়াতে বলেন।
এর পরেই ‘আমাকে চেনেন?’ বলে মনোরঞ্জনবাবুকে সরাসরি প্রশ্ন করেন প্রশান্তবাবু। মনোরঞ্জনবাবু তার পরেও চিনতে না পারায় নিজেই নিজের পরিচয় দেন প্রশান্তবাবু। ফোন করে ঘটনার কথা জানান ডেপুটি সুপারকে। ঘটনার খবর পেয়ে ছুটে আসেন ওয়ার্ড মাস্টার বকুল দে। তিন জন আধিকারিক মিলে মনোরঞ্জনবাবুকে চেপে ধরেন। চাপে পড়ে ওই চতুর্থ শ্রেণির কর্মী তখন দাবি করেন, তিনি আদৌ টাকা চাননি। শুধু বলেছিলেন, বাইরে প্লাস্টার খোলাতে গেলে ৪০ টাকা লাগে। তাঁর বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন হাসপাতালের কর্তারা। অভিযোগকারী যাদববাবু পরে বলেন, “হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যদি ব্যবস্থা না নেয়, তা হলে থানায় অভিযোগ জানাবো।” হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রকাশ্যে ঘটনাটি নিয়ে কিছু বলতে চাননি।
তবে, এই ঘটনায় হাসপাতালের বেহাল দশার ছবিটাও একই সঙ্গে স্পষ্ট হয়েছে। প্লাস্টার কাটার কাজ কেন চতুর্থ শ্রেণির কর্মীদের দিয়ে করানো হবে, সে প্রশ্নও তুলতে শুরু করেছেন রোগী ও তাঁদের পরিজনেরা। কয়েক মাস আগে এই হাসপাতালেরই শিশু বিভাগে এক সদ্যোজাতের স্যালাইন খুলতে গিয়ে বুড়ো আঙুল কেটে ফেলার অভিযোগ উঠেছিল চতুর্থ শ্রেণির এক কর্মীর বিরুদ্ধে। বাঁকুড়া জেলা পরিষদের প্রাক্তন স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের অভিমত, “প্লাস্টার করা বা খোলা ডাক্তারদের কাজ। একই ভাবে স্যালাইন দেওয়া, অক্সিজেন দেওয়াও প্রশিক্ষিত নার্সদের কাজ। এই সব কাজে ত্রুটি হলে রোগীর বড়সড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। চতুর্থ শ্রেণির কর্মীদের এই সব কাজে নিয়োগ করা উচিত নয়।”
হাসপাতালের সুপার অবশ্য জানিয়েছেন, প্লাস্টার কাটার কাজ চতুর্থ শ্রেণির কর্মীরা করতেই পারেন। এটা নিয়মবিরুদ্ধ নয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy