দেশের ক্রিকেট-প্রাণপুরুষের কান্না ভোলানোর হাসি। মঙ্গলবার বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরফি। ছবি: এএফপি
ভারতের বিরুদ্ধে সিরিজ জিতে উঠে বললেন বাংলাদেশ বোর্ড এবং আইসিসি-র প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট মুস্তাফা কামাল। নিজের অফিসে বসে। যিনি এখন বাংলাদেশের পরিকল্পনা মন্ত্রী।
প্রশ্ন: বাংলাদেশ ক্রিকেটে যে দু’জন প্রাণপ্রতিষ্ঠা করেছিলেন, তাঁদের একজন আপনি। লোকে বলে, আলি বাখারের সঙ্গে আপনি জুটি না বাঁধলে বাংলাদেশ ক্রিকেট এই জায়গায় পৌঁছত না। আজ মনে হচ্ছে, আপনার সে দিনের যুদ্ধ এত দিনে সার্থক হল?
কামাল: এটা ঠিক যে, আমাদের দেশে ক্রিকেট এখন যে জায়গায় দাঁড়িয়ে, আগে ছিল না। একটা সময় মাঠে আড়াইশো লোক হত ক্রিকেট দেখতে। ফুটবলের রমরমা তখন। আমি ক্রিকেট প্রশাসনে আসার পর ভেবেছিলাম কী করে সব পাল্টানো যায়। দক্ষিণ আফ্রিকার ভদ্রলোকের সঙ্গে তখনই দেখা হয়। উনি বললেন, ক্রিকেটের উন্নতি ঘটাতে হলে মাঠে লোক আনতে হবে। তারকা আনো ঘরোয়া ক্রিকেটে। আনলাম। ফেয়ারব্রাদারকে নিয়ে এলাম ’৯২ সালে। তার পর অনেকেই এসেছে। আক্রম এসেছে। আফ্রিদি এসেছে। শোয়েব মালিক তো শোয়েব মালিক হল ঢাকায় খেলে।
প্র: রবিবার রাতে আপনি মীরপুরে বসে বাংলাদেশ ক্রিকেটের ইতিহাস দেখলেন। কোথাও মার্চের মেলবোর্ন মনে পড়ল?
কামাল: আমি মেলবোর্ন নিয়ে আর কথা বলতে চাই না। বিশ্বকাপে মেলবোর্ন থেকে ফিরে এসে আমি আইসিসি থেকে পদত্যাগ করেছিলাম। কিন্তু পদত্যাগের সময় আমার কিছু অবজারভেশন ছিল। ক্রিকেট টিম, দেশের বোর্ডের কাছে কিছু বক্তব্য ছিল। আমি যা কিছু আবেদন করার, টিমের কাছে করেছিলাম। বলেছিলাম যা আমি পারিনি, তোমাদের করে দেখাতে হবে। ওরা আমার চোখের জল সে দিন দেখেছিল। সেটা ওরা সারা জীবন মনে রাখবে।
প্র: মেলবোর্নে ঢুকবেন না বলেও মেলবোর্ন নিয়ে এত কিছু বলে ফেললেন। আজ মনে হয়, সে দিন যদি আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত বিরুদ্ধে না যেত, বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনাল জিতে টিম মাঠ ছাড়ত?
কামাল: সেটা তো কখনও লুকোইনি। হার-জিত অন্য কথা। কিন্তু খেলাটাকে সে দিন যে ভাবে চালানো হয়েছিল, অভাবনীয়। শুধু ওই ম্যাচটায় কোনও প্রযুক্তি ব্যবহার হয়নি। কোনও ক্যামেরা ব্যবহার হয়নি। জায়ান্ট স্ক্রিনে লিখে দেওয়া হয়েছিল, ইন্ডিয়া জিতবে। এ সব চালাতে পারত দু’জন। আইসিসি প্রেসিডেন্ট বা চেয়ারম্যান। আমি আইসিসি প্রেসিডেন্ট যখন, নিশ্চয়ই এ সব করতে পারতাম না। তা হলে পড়ে থাকল কে? আমি সন্দেহ করেছিলাম, খারাপ কিছু ঘটতে যাচ্ছে। তার পর দেখলাম, ঘটেই যাচ্ছে। অন্যায় দেখলে আমি চুপ করে থাকব কেন? আইসিসি প্রেসিডেন্ট হতে পারি, লৌহমানব তো নই। যা বলেছি, সব সত্যি।
প্র: মানে, পরিচ্ছন্ন ক্রিকেট হলে আপনারা মেলবোর্ন কোয়ার্টার ফাইনালও জিততেন।
কামাল: দৃঢ় বিশ্বাস, জিততাম। বিশ্বকাপে যে ক’টা বাংলাদেশ টিম আজ পর্যন্ত গিয়েছে, তার মধ্যে ওটাই সেরা ছিল। আমি মনে করি, অন্যায়-অবিচার না হলে আমরা আরও ভাল করতে পারতাম। তবে এখন আর ও সব মনে রেখে কী হবে? বললাম তো, ও সব ভুলে গিয়েছি।
প্র: আপনি বলছেন ভুলে গিয়েছেন। কিন্তু বাংলাদেশ তো ভোলেনি। রবিবার প্রেস কনফারেন্স করতে যাওয়ার সময় গ্যালারি থেকে মহেন্দ্র সিংহ ধোনিকে ‘মওকা, মওকা’ বলে বিদ্রুপ করা হয়েছে।
কামাল: আপনি যেটা বলছেন ঠিক নয়। ওটুকু এক্সপ্রেশন হয়েই থাকে। কিন্তু ভারতীয় প্লেয়ার বা ভারত নিয়ে একজন দর্শকও আজেবাজে মন্তব্য করেননি। দায়িত্ব নিয়ে বলতে পারি। আমার লোক ছিল। প্রত্যেক মিনিট মনিটরিং হয়েছে।
প্র: একটা কথা বলুন। আপনি ভারতীয় বোর্ডে নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসন জমানা দেখেছেন। এখন জগমোহন ডালমিয়া জমানা দেখছেন। দু’টোয় কী তফাত?
কামাল: ডালমিয়া সাহেব সম্পর্কে আমাদের ধারণাটা অন্য রকম। বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য উনি যা করেছেন, ভোলা সম্ভব নয়।
প্র: আর শ্রীনি? আইসিসি চেয়ারম্যান পদ থেকে তো এখনও সরানো গেল না। গতকালও ওয়েস্ট ইন্ডিজে আইসিসি মহাসভায় গেলেন চেয়ারম্যান হিসেবে।
কামাল: এখন আমি আর আইসিসিতে নেই। এখন আর কিছু বলতে পারব না। তবে হ্যাঁ, ওর জায়গায় আমি থাকলে হয়তো এত দিনে আত্মহত্যা করতাম! বিশ্বকাপ ট্রফি দিতে গেল, লোকে এমন বিদ্রুপ করল যে ট্রফি ফেলে পালিয়ে গেল। তার পরেও এখনও আছে। গায়ের জোরে আইসিসি মিটিংয়ে চলে যাচ্ছে। যাবেও। ন্যায়-অন্যায় বোধ তো ওঁর নেই। থাকলে কোয়ার্টার ফাইনালের পর আমাকে বলত না, বক্তব্য তুলে নিতে। ক্ষমা চাইতে। যেখানে ওর চেয়ারম্যানশিপ আমিই এনডোর্স করেছিলাম। তবে যা-ই করুক, ওর বিচার হবেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy