আর মাত্র পনেরো দিন। আনন্দময়ী মায়ের আগমনবার্তা ছড়িয়ে পড়েছে আকাশে বাতাসে। মায়ের পুজো এগিয়ে এলেই মনটা মাঝে মাঝে দুটো ডানা লাগিয়ে উড়ে চলে সুদূর পশ্চিমবঙ্গে। সেই দিগন্তবিস্তৃত মাঠে বা হাইওয়ের পাশে বা রেল লাইনের অদূরে বা নদীর চরায় সাদা কাশফুলের আন্দোলন। গাছের তলায় ছেয়ে থাকা কমলা বোঁটা সাদা রঙের ছোট ছোট শিউলি ফুল। ঘাসের আগায় জমে থাকা শিশিরবিন্দু। নীল আকাশে সাদা মেঘের ইতস্তত ভেসে চলা এ সব কিছুই মনে করিয়ে দিত, মা আসছেন।
কত দিন হয়ে গেল বাংলার পুজো আর দেখা হয় না। বাংলার প্রকৃতির সঙ্গে মিশে থাকা পুজোর গন্ধটা অনুভব করা হয় না। তবু শরৎকাল এলেই মনের মধ্যে পেখম তোলা ঢাকের বাজনা বেজে ওঠে। এই বয়ে চলা জৌলুসময় শহুরে জীবন থেকে মন একটু অবসর চায়। মনে হয় বাংলার কোনও এক অখ্যাত গাঁয়ে তিন দিক খোলা পুজোমণ্ডপে গিয়ে বসি চুপচাপ। প্রকৃতির সঙ্গে মা যেখানে একাত্ম হয়ে গেছেন। যেখানে আকাশ-বাতাস নির্মল, কলুষহীন। নেই কোনও আড়ম্বর। কোনও অখ্যাত মৃৎশিল্পীর গড়া একচালা প্রতিমার তৃতীয় নয়নে এক স্বর্গীয় দীপ্তি। জানি, এই মুম্বইয়ে বসে পথের প্রান্তে কোনও সুদূর গাঁয়ের ছোট্ট দুর্গাপুজোয় অঞ্জলি দেওয়া, সন্ধিপুজো দেখা সে এক কল্পনা বিলাস। তাই এখানে যা পাই তা দিয়েই চেষ্টা করি মন ভরাতে। এ-ও বা কম কী। বাংলা থেকে এত দূরে দুর্গাপুজোয় যোগদান করতে পারি এ-ও মায়েরই ইচ্ছে।
মুম্বইয়ে দুর্গাপুজো মানে শুধু লোখান্ডওয়ালায় অভিজিতের পুজো বা উত্তর মুম্বই সর্বজনীন মানে রানি-কাজলের পুজো, মানে মুখার্জিবাড়ির পুজো বা ভাসির বড় পুজো নয়। জুহুতে বিশ্বজিতের পুজোও। যদিও নাম জুহু স্কিম সর্বজনীন, আদতে তা বিশ্বজিতের পুজো। বহু বাংলা-হিন্দি ছবির নায়ক বিশ্বজিৎ পুজোটা বড় ভাল করেন। গতবার তাঁর ছেলে, বাংলা ছবির নায়ক, প্রসেনজিৎ সপরিবার এই পুজোয় এসেছিলেন। ঢাক বাজিয়েছিলেন। এ বারও তাঁরা আসবেন বলে বিশ্বজিৎ জানিয়েছেন। বিশ্বজিৎ এ বারও বয়স ভুলে মায়ের পুজো নিয়ে মেতে উঠেছেন। এই পুজোর বড় আকর্ষণ মায়ের ভোগ প্রসাদ। বিশ্বজিৎ নিজে দাঁড়িয়ে থেকে ভোগ খাওয়ান। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও সুন্দর হয় বিশ্বজিতের পুজোয়। মণ্ডপের কাছে বহু স্টল থাকে। পাওয়া যায় কলকাতার চপ-কাটলেট! বিশ্বজিৎ জানিয়েছেন, এ বার পুজো হবে সেন্ট জোসেফ হাই স্কুল গ্রাউন্ডে। মণ্ডপ হচ্ছে অমিতাভ বচ্চনের বাংলো ‘জলসা’র পাশেই। টিউলিপ-এর কাছেই। জানেন তো, মুম্বইয়ে শরৎকালে প্রথম ঢাক বেজেছিল ১৯৩০ সালে, জাভেরি বাজারের বাঙালি স্বর্ণশিল্পীদের উদ্যোগে, কলবাদেবী সর্বজনীন দুর্গাপুজোয়। সেই সময় পুজো হতো কখনও তাড়দেওতে, কখনও ক্রস ময়দানের কাছে। তারপর সি পি ট্যাঙ্কের কাছে মাধববাগে। এখানে মায়ের নথ থেকে নাকছাবি থেকে কানের দুল--- সব হিরের। গায়ে সোনার গয়না। স্বর্ণশিল্পীদের পুজো না! মায়ের হাতে সব রুপোর অস্ত্র। পুজোর বিশাল ঘটও রুপোর! পুজোর এ বার ৮৫ বছর।
এই সংখ্যায় নিয়ে এসেছি মুম্বইয়ের আরও বেশ কিছু দুর্গাপুজোর খোঁজখবর। দুর্গাপুজোয় নারীশক্তিরই জয়জয়কার। তাই শুরু করছি গোরেগাঁও ইস্ট অপরাজিতা মহিলা ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন-এর দুর্গাপুজো দিয়ে। এই পুজো সম্পূর্ণ মহিলাদের দ্বারা পরিচালিত এবং এগারো বছর ধরে একই মহিলা কমিটি পুজোয় নিযুক্ত রয়েছেন। সহযোগিতা ও একাত্মতাই এই দুর্গাপুজোর মূলমন্ত্র। জানালেন পুজোর সেক্রেটারি শর্বরী বাগচি। পুজো অনুষ্ঠিত হবে গোরেগাঁও ইস্ট গোকুলধামে। পুজোর বাজেট আনুমানিক আঠেরো বা উনিশ লাখ। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ২৯ সেপ্টেম্বর অর্থাৎ পঞ্চমীতে পুজোর উদ্বোধন। এই দিন মুম্বইয়ের একটি গ্রুপ পরিবেশন করবে ভক্তিমূলক গান। ষষ্ঠীতে সদস্যদের গীতি-আলেখ্য ‘নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ’। সপ্তমীর সন্ধ্যায় কলকাতা থেকে নৃত্য পরিবেশনে আসছে ‘সঞ্চারী’ নাচের গ্রুপ। অষ্টমী-নবমীতে সুজয় ভৌমিকের গান। দশমীতে লোকগীতি। একাদশীর দিন ব্লাইন্ড স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের সাহাযার্থে একটি ক্যাম্প করা হবে। পুজোর প্রেসিডেন্ট পাহাড়ি চট্টোপাধ্যায়।
চলে আসছি মুম্বইয়ের প্রাচীন দুর্গাপুজো বম্বে দুর্গাবাড়ি সমিতির দুর্গাপুজোয়। এই বছরে পুজোর পঁচাশি বছর পূর্তি। কথা হল পুজোর প্রেসিডেন্ট জয়ন্ত বসুর সঙ্গে। কথায় কথায় জানা গেল, ১৯৩০ সালে কয়েক জন বাঙালি ভদ্রলোক মিলে যে পুজোর সূত্রপাত করেছিলেন, আজ সেই পুজোই পরিণত হয়েছে মুম্বইয়ের ঐতিহ্যশালী দুর্গাপুজোয়। পুজো অনুষ্ঠিত হচ্ছে যথারীতি অগস্ট ক্রান্তি ময়দানের কাছে অগস্ট ক্রান্তি মার্গে তেজপাল হলে। ১৯৭১ সাল থেকে এই তেজপাল হলে পুজো অনুষ্ঠিত হচ্ছে এবং সাধারণের কাছে এই পুজোর পরিচিতি তেজপাল হলের পুজো নামেই। ঐতিহ্য মেনে এ বছরও ডাকের সাজের একচালা প্রতিমা। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে থাকছে অষ্টমী-নবমীর সন্ধ্যায় সদস্যদের অভিনীত নাটক। এ ছাড়া অন্য দিনগুলোয় ‘প্রাঙ্গণ’-এর অনুষ্ঠান এবং মুম্বইয়ের ব্যান্ডের গান। পুজোর সেক্রেটারি তনুশ্রী সেন এবং সোশ্যাল অ্যান্ড কালচারাল চেয়ারপার্সন সুস্মিতা মিত্র।
বান্দ্রার নতুন পল্লি-র পুজোও উল্লেখের দাবি রাখে। এটা আদতে পুরো বাঙালিদের পুজো। এটা শক্তি সামন্তের পুজো বলে খ্যাত। এই পুজোটার সঙ্গে সক্রিয় ভাবে যুক্ত ছিলেন প্রমোদ চক্রবর্তী, রাহুল দেব বর্মণ। দীর্ঘদিন কর্তা ছিলেন বাসু চট্টোপাধ্যায়।
মুম্বইয়ে দুর্গাপুজো প্রসঙ্গে বলতেই হয় পওয়াই বেঙ্গলি ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন-এর পুজোর কথা। পুজো কর্তা পিনাকী দত্ত জানিয়েছেন, “এ বারও বিরাট বাজেটের পুজো করছি আমরা। এ বার আমাদের মণ্ডপ হবে অন্যবারের চেয়ে একেবারে আলাদা। এই তল্লাটে এত বড় পুজো আর কেউ ভাবতেও পারবে না। সঙ্গে থাকবে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।”
কান্ডিভিলি কৃষ্টি: লোখান্ডওয়ালা, কান্ডিভিলি টাউনশিপের এই পুজোর এ বার দশম বছর। ‘কৃষ্টি’ দিনে দিনে বড় হয়ে উঠলেও তার কৃষ্টি-সংস্কৃতি হারায়নি। পুজো প্রসঙ্গে নর্থ বম্বে সর্বজনীন-এর দুর্গাপুজোর কথা বলতেই হয়। পুজোর এ বার ৬৭ বছর। পুজোর স্থান দু’একবার পাল্টেছে। ভাল পুজো বলে পরিচিত। গোডবন্দর রোডের হিরানন্দানী এস্টেটের ‘আমরা প্রবাসী’ পুজো না-দেখলেই নয়। পুজোর এ বার বারো বছর। তিন দিন প্রসাদ বিতরণ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সব মিলিয়ে জমজমাট পুজো।
আন্ধেরিতেই তিনটি পুজো হয়। এর মধ্যে ৫০ পার হওয়া ‘প্রগতি’ আলাদা উল্লেখের দাবি রাখে। তেমনই মহাকালী সর্বজনীন-এর কথা বলতেই হয়। পূর্ব আন্ধেরির মাতশ্রী মিনাতাই ময়দানে এই পুজোর এ বার ১৩ বছর। এখানে মণ্ডপের পাশেই থাকে ফুড কোর্ট। বোরিভিলি পশ্চিমে ‘সংস্কৃতি’ একটা ভিন্ন গোত্রের প্রতিষ্ঠান। তারা শুধু পুজো করে না। তাদের আরও অনেক কর্মসূচি থাকে। এ বারও তারা পুজো করছে। এবং ‘সংস্কৃতি’র পুজো মানে ভিন্ন মাত্র। ভিন্ন ভাবনা। গোরেগাঁও-মালাড-কান্দিভিলি-বোরিভিলিশহরতলির প্রাচীনতম প্রতিষ্ঠান ‘সংস্কৃতি’। কান্দিভিলি ইস্ট-এর ঠাকুর কমপ্লেক্স বা ঠাকুর ভিলেজ-এর পুজোর কথা আলাদা করে উল্লেখ করতেই হয়। অঞ্চলে বাঙালি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পুজোও বেড়েছে, আড়ে-বহরে। নবীনতম দুর্গোৎসব ‘ঐকতান’ গোষ্ঠীর উদ্যোগে, পুজো এ বার তৃতীয় বর্ষে পড়ল। তিন দিন ভোগ প্রসাদের ব্যবস্থা তো আছেই, সঙ্গে থাকছে প্রতি সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। দিনে নানা প্রতিযোগিতা। সামাজিক ঋণ শোধের কথাও তাদের মনে থাকে।
এ বারে মুম্বইয়ের আর এক ঐতিহ্যশালী দুর্গাপুজো শিবাজি পার্কের ‘বেঙ্গল ক্লাব’। শিবাজি পার্কের সংস্থার নিজস্ব জমিতে এই দুর্গাপুজো অনুষ্ঠিত হয়। এ বার পুজো পদার্পণ করল ঊনআশি বছরে। পুজোসংক্রান্ত সমস্ত খবর জানালেন সাধারণ সম্পাদক মলয় পুরকায়স্থ। প্রাচীন মন্দিরের আদলে এ বার তৈরি হচ্ছে পূজামণ্ডপ। দুর্গাপ্রতিমাও হবে মণ্ডপের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে। শিবাজি পার্ক যেহেতু ‘সাইলেন্স জোন’-এর অন্তর্ভুক্ত, সেই জন্য এই পুজোয় কোনও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করা হয় না। কিন্তু অন্য ভাবে এই পুজো আকৃষ্ট করে দর্শকদের। এ বার পশ্চিমবঙ্গের লোকশিল্পকে সকলের সামনে তুলে ধরার প্রচেষ্টা করবে এই পুজো কমিটি। সেই জন্য বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, মেদিনীপুর, নদিয়া প্রভৃতি জেলা থেকে লোকশিল্পীদের এনে তাদের শিল্প প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হবে। বিভিন্ন চিত্র, মূর্তি তৈরি হাতেকলমে করে দেখাবেন শিল্পীরা। বাংলার প্রাচীন দুর্গাপুজো সম্পর্কেও দর্শকদের ধারণা দেওয়া হবে।
শিবাজি পার্কের পুজোয় এ বার সপ্তমীতে দুপুরে ভাগপ্রসাদের আয়োজন প্রায় দশ হাজার মানুষ প্রসাদ পাবেন এবং অষ্টমী-নবমীর দুপুরে এই সংখ্যা দাঁড়াবে প্রায় পনেরো হাজারে। সাধারণ মানুষের সঙ্গে দরিদ্র-নরনারায়ণ সেবাও করা হয় এখানে। সকলের জন্যই সমান ব্যবস্থা। কোনও ভেদাভেদ নেই। সাবুদানা গাছের খোল দিয়ে তৈরি ইকো ফ্রেন্ডলি প্লেটে পরিবেশন করা হবে খিচুড়ি, লাবড়া, বেগুনি, ঘি, পায়েস, চাটনি। এই বিশেষ প্লেটগুলো আনা হয় বেঙ্গালুরু থেকে এবং এগুলো পুরু হওয়ায় তাপ-নিরোধক। সন্ধেবেলা প্রতিমার সামনে হবে ধুনুচি নাচ এবং স্থানীয় কলেজ স্কুল পড়ুয়াদের নাচের প্রতিযোগিতা। এ ছাড়া শঙ্খধ্বনি, উলুধ্বনি প্রতিযোগিতা তো আছেই। শিবাজি পার্কের গ্রাউন্ডে প্রচুর স্টল দেওয়া হয়। রকমারি খাবার, শাড়ি, শাঁখা পলা প্রভৃতি। অবাঙালিরাও শাঁখা-পলা কিনতে ভিড় জমান শিবাজি পার্কের এই সব স্টলে। পুজোর প্রেসিডেন্ট ড. উৎপলকুমার মুখোপাধ্যায়।
এ বার চলে যাই অন্য প্রান্তে। পশ্চিম থানের নবোদয় সংঘ-এর দুর্গাপুজো হীরানন্দানি মিডোসের কাছে কাশীনাথ ঘানেকর নাট্যগৃহের পিছনের পার্কে পুজো অনুষ্ঠিত হবে। উনিশ বছরের পুজো। পুজোমণ্ডপ হচ্ছে দিল্লির লোটাস টেম্পলের মতো। চন্দননগরের আলো। ২৯ সেপ্টেম্বর পঞ্চমীতে পুজোর উদ্বোধন। ওই দিন স্থানীয় শিল্পীদের অনুষ্ঠান। ষষ্ঠীর সন্ধ্যায় সুজয় ভৌমিকের গান। সপ্তমীতে সঙ্গীত-সন্ধ্যায় শিল্পী অন্বেষা। অষ্টমী-নবমীর সন্ধ্যা মাতাবেন গানে মহম্মদ ইরফান। এ ছাড়া সকাল থেকে সন্ধে পুজোমণ্ডপে হবে বাউল গান। সপ্তমীতে অনাথাশ্রমের বাচ্চাদের খাওয়ানো হবে। এই সংস্থা নানা রকম সমাজকল্যাণমূলক কাজ করে থাকে। যেমন থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশুদের জন্য অর্থসাহায্য, দরিদ্র শিশুদের সাহায্য করা প্রভৃতি। পুজোর সমস্ত তথ্য সরবরাহ করলেন এক্সিকিউটিভ কমিটি মেম্বার অনিমেষ গঙ্গোপাধ্যায়। পুজোর প্রেসিডেন্ট অলক দুবে, সেক্রেটারি রাজীব ঘোষ এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট ধ্রুবজ্যোতি রায়। এ বারে চলে আসছি থানের ‘নিউ বেঙ্গল ক্লাব’-এর দুর্গাপুজোয়। এ বছর দুর্গাপুজোর তেরো বছর পূর্তি। পুজো অনুষ্ঠিত হচ্ছে পশ্চিম থানের মোল্লাবাগ, হ্যাপি ভ্যালির পিছনে, ঠিকুজিনীওয়াড়ির কাছে। পুজোর কালচারাল সেক্রেটারি দেব ভট্টাচার্য পুজো সংক্রান্ত তথ্য দিলেন। এ বারের থিম শোভাবাজার রাজবাড়ি। মণ্ডপ তৈরি হবে রাজবাড়ির ঠাকুরদালানের অনুকরণে। কলকাতা থেকে শিল্পীরা আসছেন। পুজোর অনুষ্ঠান চতুর্থী থেকে। সে দিন ‘আনন্দমেলা’। পঞ্চমীর সন্ধ্যায় সায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় গাইবেন। ষষ্ঠীতে ‘দিঘি’ ব্যান্ডের অনুষ্ঠান।
কলকাতা থেকে শিল্পীরা আসছেন মণ্ডপ নির্মাণ করতে। পুজোর অনুষ্ঠান শুরু চতুর্থী থেকে। ওই দিন ‘আনন্দমেলা’। পঞ্চমীর সন্ধ্যায় সায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের গান। ষষ্ঠীতে ‘দিঘি’ ব্যান্ডের অনুষ্ঠান। সপ্তমীর সন্ধ্যায় কলকাতার নাচের ট্রুপের ব্যালে ডান্স। অষ্টমী-নবমীর সন্ধ্যায় গানে গানে আসর মাতাবেন কুমার শানু। এ ছাড়া থাকবে ধুনুচি নাচের প্রতিযোগিতা। দু’দিন ভোগপ্রসাদ। অনাথ আশ্রমের শিশুদের খাওয়ানো হবে ও উপহার দেওয়া হবে। পুজোর প্রেসিডেন্ট দীপক সেনগুপ্ত, সেক্রেটারি সুমন দত্ত।
গত সংখ্যায় নবি মুম্বইয়ে বেশ কিছু পুজোসংক্রান্ত খবর জানিয়েছিলাম। এ বার আরও দুটি দুর্গাপুজো সম্পর্কে জানিয়ে দিই।
সিউড কালচারাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন। এ বার ষষ্ঠ বর্ষ। পুজো অনুষ্ঠিত হবে সিউডের সেক্টর ফর্টিতে কেন্দ্রীয় বিহারের বিপরীতে। পুজোর সেক্রেটারি রাজা মুখোপাধ্যায় জানালেন পুজোর থিম ‘উওমেন এমপাওয়ারমেন্ট’ ‘নারীশক্তি’। দুর্গাপুজোয় আমরা দেবী দুর্গার আরাধনা করি। দেবী দুর্গার মধ্য দিয়ে নারীশক্তিরই চরম প্রকাশ ঘটে। তাই এই পুজোয় নারীকেই অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। পুজোর আগে শনি ও রবিবার মহিলাদের জন্য বিভিন্ন কার্যক্রমের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পনেরো থেকে পঞ্চাশ বছরের মহিলাদের জন্য ‘সেল্ফ ডিফেন্স’ বিনামূল্যে শেখানো হবে। প্রায় আড়াইশো মহিলা এখানে প্রশিক্ষণ পেতে পারেন। এ ছাড়া মহিলাদের জন্য থিয়েটার ওয়ার্কশপ, কেরিয়ার কাউন্সেলিং, মেডিক্যাল ক্যাম্প থাকবে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে এখানে স্থানীয় শিল্পীরাই অনুষ্ঠান করবেন। থাকবে নাটক, গান। পুজোমণ্ডপ তৈরি হবে পুরনো বাগানবাড়ির আদলে। তিন দিন ধরে থাকবে ভোগপ্রসাদ। বাজেট আনুমানিক আঠেরো থেকে কুড়ি লাখ। পুজোর প্রেসিডেন্ট এম এস পাণ্ডা।
খাণ্ডেশ্বর বেঙ্গলি অ্যাসোসিয়েশন-এর দুর্গাপুজো এ বার অনুষ্ঠিত হবে খাণ্ডা কলোনি, সেক্টর সেভেন, জলের ট্যাঙ্কের সামনে। এ বছর পুজোর নবম বর্ষপূর্তি। পুজো কমিটি সদস্য আর এন মুখোপাধ্যায় পুজোসংক্রান্ত তথ্য দিলেন। পুজোর বাজেট প্রায় ছয় থেকে সাত লাখ। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ১ অক্টোবর দুপুর সাড়ে বারোটা থেকে সাড়ে তিনটেয়। দুটি শ্রুতিনাটক। সন্ধেবেলা কচিকাঁচাদের ও বড়দের নাচগান। ২ অক্টোবর দুপুরে কলকাতার ভাবনা দত্তর গান। সন্ধ্যায় চলচ্চিত্রের গান, শিল্পী প্রভাত সিনহা। এরপর নাটক মনোজ মিত্রের ‘হারানো, প্রাপ্তি, নিরুদ্দেশ’। ৩ অক্টোবর দুপুরে ছবি আঁকার প্রতিযোগিতা, শঙ্খধ্বনি ও উলুধ্বনি প্রতিযোগিতা। পুজোর প্রেসিডেন্ট তুষারকান্তি দাস, জেনারেল সেক্রেটারি প্রদীপ দত্ত ও অভিজিৎ গিরি।
অ্যান্টপ হিল, ওয়াডালা: বেঙ্গলি অ্যাসোসিয়েশন-এর পুজো এ বার ২৯ বছরের। পূর্বা শূর জানিয়েছেন, এ বার দু’দিন ভোগ খাওয়ানো হবে। প্রতিমাশিল্পী অমিত পাল। পুজো সম্পাদক অনির্বাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। পুজোতে নানা কমিটিতে মহিলাদেরই প্রাধান্য। পরিক্রমায় বলতেই হয় থানে বঙ্গীয় পরিষদ-এর পুজোর কথা। এ বার ৫২ বছর। মুলুন্ড পশ্চিমের নবজীবন সঙ্ঘ-এর পুজো না-দেখা বড় ‘মিস’। মুলুন্ডবাসী প্রবাসী বাঙালিরা পুজোটা বড় ভাল করেন।
পুজো পরিক্রমা আজ এই পর্যন্তই। সুধিজন, আপনারাও নিশ্চয়ই আসন্ন দুর্গাপুজোর দিন গুনছেন। নতুন জামাকাপড় কেনার পালা প্রায় শেষের পথে। ছোটরা অপেক্ষা করছে কবে নতুন পোশাকটি পরে ঠাকুর দেখতে যাবে। আর এই মুম্বইয়ে ছোটদের আনন্দের শুরু তো গণপতি পুজো থেকেই। তার পরেই নবরাত্রি। শুরু হয়ে যায় ডান্ডিয়া নাচ। নবরাত্রির ন’দিন আপামর মুম্বইবাসী মেতে ওঠেন নাচের ছন্দে, গানের তালে, শেরওয়ালি মায়ের পুজোয়। বাঙালির দুর্গাপুজো এই নবরাত্রি উৎসবেরই অঙ্গ। এখানকার বাঙালি শিশুরা যেমন ডান্ডিয়া নাচে অংশগ্রহণ করে, তেমনই দুর্গাপুজোর মণ্ডপে অনুষ্ঠানও করে। শুধু বাঙালিই বা বলি কেন, সব ভাষাভাষী মানুষই তো শামিল হয় এই আনন্দ-উৎসবে। এক মিনি ভারত যেন দেখতে পাওয়া যায় গোটা মুম্বই জুড়ে। এই আনন্দ-উৎসব সকলের উৎসব ধনী দরিদ্র, জাতি ধর্ম কোনও ভেদাভেদ নেই। মা যেন সকলের। আমরা সবাই তাঁরই সন্তান। দেবীস্তুতি দিয়ে শেষ করি এই লেখা।
‘দেবি প্রপন্নার্তিহরে প্রসীদ, প্রসীদ মার্তজগতোহখিলস্য
প্রসীদ বিশ্বেশ্বরি পাহি বিশ্বং, ত্বমীশ্বরী দেবি চরাচরস্য।’
হে দেবি, হে শরণাগতের দুঃখবিনাশিনী, তুমি প্রসন্না হও হে অখিল বিশ্বের জননী, তুমি প্রসন্না হও হে দেবি, হে বিশ্বেশ্বরী, প্রসন্না হয়ে এই জগৎ পালন করো, কেননা তুমিই চরাচর জগতের ঈশ্বরী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy