আমদাবাদ বিমানবন্দরে নামছে ‘ইমপালস ২’। ছবি: রয়টার্স।
বছর চারেক আগে আমদাবাদে এসে ওঁরা নিজেদের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিলেন নরেন্দ্র দামোদর মোদীকে। শুনেই লাফিয়ে উঠেছিলেন মোদী। তখনই ঠিক হয়ে গিয়েছিল, সৌরশক্তিকে নির্ভর করে বিশ্বভ্রমণে বেরোন ‘সোলার ইমপালস ২’ বিমান ভারতে ঢুকে প্রথম নামবে আমদাবাদেই। এবং মোদীই তাকে স্বাগত জানাবেন।
সোলার ইমপালস ২ ভারতে প্রথম আমদাবাদের মাটিই ছুঁল বটে। কিন্তু মোদী সেখানে থাকতে পারলেন না। কী করে থাকবেন? সাবরমতীর তীর ছেড়ে তিনি যে এখন যমুনার পারে!
বুধবার আমদাবাদ বিমানবন্দরে বসে হেসে ফেললেন বৈমানিক বার্র্টার্ন্ড পিকার্ড “কে জানত মোদী গুজরাতে থাকবেন না? আমরা ওঁকে আমদাবাদে এসে আমাদের বিমান দেখার আমন্ত্রণ জানিয়েছি।” সে বার এই বিমানের ছোট একটা রেপ্লিকা মোদীকে দিয়ে গিয়েছিলেন পিকার্ড। তাঁর কথায়, “যখন সফর শুরু করেছিলাম, তখন অনেকে ফিরিয়ে দিয়েছিল আমাদের। যাঁরা বিমান তৈরি করেন তাঁরা বলেছিলেন, ‘এ অসম্ভব’। কিন্তু আমরা এমন লোক খুঁজছিলাম, যাঁরা উদ্ভাবনী ক্ষমতাকে উৎসাহিত করবেন। এমন রাজনৈতিক নেতা খুঁজছিলাম যিনি এ ব্যাপারে পথিকৃত হবেন।” মোদী ঠিক সেই ভূমিকাটাই পালন করেছিলেন তখন।
শুধু কী মোদীর জন্যই আমদাবাদ? পিকার্ডের সহযোগী আন্দ্রে বোর্শবার্গ আরও পরিষ্কার করে বুঝিয়ে দিলেন, “আমাদের যারা প্রযুক্তির দিক দিয়ে সাহায্য করছে, সেই সব সংস্থার মধ্যে দু’টির ঘাঁটি এই আমদাবাদে। তাই দিল্লি-মুম্বইয়ের আমন্ত্রণ থাকলেও আমরা ঠিক করি আমদাবাদেই আসব।”
গুজরাত সরকারের অধীনে আলাদা শক্তি ও পেট্রোকেমিক্যাল মন্ত্রক রয়েছে। সেই মন্ত্রকের সচিব লালনুনমাউইয়া চুয়াউনগো জানাচ্ছেন, সৌরবিদ্যুৎ তৈরির ক্ষেত্রে গুজরাত অগ্রগণ্য। দেশের ৩০ শতাংশ সৌর-বিদ্যুৎ উৎপন্ন হচ্ছে এখানে। আর এ সবের পিছনেও রয়ে গিয়েছে রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর ব্যক্তিগত উদ্যোগ, জানালেন সচিব। তাঁর কথায়, এমন এক রাজ্যে শুধু মাত্র সৌরশক্তির সাহায্যে উড়ে বেড়ানো বিমানকে স্বাগত তো জানানোই হবে।
আমদাবাদে চার দিন থেকে বিমান নিয়ে আন্দ্রে ও পিকার্ড যাবেন বারাণসী। মোদীর আর একটি প্রিয় শহর। লোকসভায় এই কেন্দ্রেরই সাংসদ তিনি। সোলার ইমপালস-কে সেখানে নিয়ে যাওয়ার পিছনেও মোদীর প্রচ্ছন্ন উদ্যোগ রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে আন্দ্রের কথায়, বারাণসীকে বেছে নেওয়ার পিছনে আধ্যাত্মিক তাগিদও রয়েছে। “দিনরাত ছোট্ট ককপিটে বসে নিরলস উড়ে বেড়াতে গিয়ে মাত্র ২০ মিনিট ঘুমোনর সময় পাই। যোগাসন খুব সাহায্য করে। বারাণসী ধর্মীয় শহর। সেখানে আমাদের মনের খোরাক মিটবে।”
কলকাতায় আসবেন না? মাঝে এক দিন এ শহরের আকাশ ছুঁয়েই উড়ে যাবে সৌর-বিমান। মাটিতে নামা হবে না। তবে এ শহরের সমর্থন চেয়েছেন দুই বৈমানিক। চল্লিশ ছুঁই ছুঁই বয়সে সৌর বিমান নিয়ে বিশ্বভ্রমণে বেরিয়ে দূষণহীন ভবিষ্যতের দূত হিসেবে নিজেদের মেলে ধরতে চাইছেন ওঁরা। এ শহরের কাছে তাঁদের আকুতি, “আমাদের ওয়েবসাইটে গিয়ে ‘ফিউচার ইজ ক্লিন’-এ ক্লিক করে নিজেদের সমর্থন জানান।”
ভবিষ্যতে যাত্রিবিমানের ক্ষেত্রেও কি সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহার করা সম্ভব হবে? ১১১ বছর আগে রাইট-ভাইরা প্রথম বিমান নিয়ে আকাশে উড়েছিলেন, তখন কি কেউ এয়ারবাস ৩৮০-র কথা ভাবতে পেরেছিল? আন্দ্রে আর পিকার্ডও তাই আশাবাদী। সৌর প্রযুক্তি এমন জায়গায় নিশ্চয়ই পৌঁছবে এক দিন, যখন যাত্রিবিমান উড়ে যাবে শুধু সূর্যের আলোর উপরে নির্ভর করেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy