বদ হজম, বুক জ্বালা, অম্বল! বাঙালির চিরসঙ্গী এই সব অসুখের উপশমেও এ বার মমতার ছোঁয়া। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে লোকসভা ভোট শেষ হওয়ার আগেই রাজ্যে আসতে চলেছে নতুন ওষুধ ‘মমতাজাইম’!
না, রাজনীতির চমক নয়। ‘মা মাটি মানুষ’-এর নেত্রীর নামে ওষুধ তৈরির পরিকল্পনার পিছনে রয়েছে শুধুই ব্যবসায়িক স্বার্থ। একটি বেসরকারি ওষুধ নির্মাতা সংস্থা ইতিমধ্যেই নরেন্দ্র মোদী এবং রাহুল গাঁধীর নাম ওষুধের সঙ্গে জুড়ে পসার জমিয়েছে।
তাদের দু’টি নতুন ওষুধ ‘রাগাফ্লেম’ এবং ‘নমোনি’ ভারতের বাজারে সুপারহিট বলেই ওই সংস্থার দাবি। এ বার পশ্চিমবঙ্গের বাজারে মমতার নামে হজমের ওষুধ আনার জন্য লাইসেন্স চেয়ে সেন্ট্রাল ড্রাগস স্ট্যান্ডার্ড কন্ট্রোল অর্গানাইজেশনের কাছে আবেদন জানিয়েছে তারা। ‘মমতাজাইম’ নামে সেই ওষুধের লোগো তৈরির কাজও শেষ।
তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য এমন উদ্যোগকে খুব ভাল চোখে দেখছেন না। দলীয় সাংসদ ডেরেক ও ব্রায়েনের বক্তব্য, “বিষয়টি অস্বস্তিকর। এর নৈতিকতা এবং আইনি দিকগুলি আমরা খতিয়ে দেখব।” তাঁর দাবি, ‘রাগা’ এবং ‘নমো’ কারও আসল নাম নয়। কিন্তু ‘মমতাজাইম’-এর মাধ্যমে তৃণমূল নেত্রীর নামই তুলে আনা হচ্ছে। এটা মানা যায় না।
রাহুল ও মোদীর নামে যে দু’টি ওষুধ ইতিমধ্যেই বাজারে এসেছে, সেই ‘রাগাফ্লেম’ এবং ‘নমোনি’, দু’টোই প্যারাসিটামল গোত্রের ওষুধ। অর্থাৎ জ্বরজ্বারি-ব্যথাবেদনায় সাধারণ ভাবেই যার ব্যবহার, সর্বদা ডাক্তারের প্রেসক্রিপশনের উপর নির্ভরশীল নয়। প্রস্তাবিত ‘মমতাজাইম’ও সাধারণ অম্বল-গলাবুক জ্বালায় ব্যবহার্য ওষুধ হিসেবেই বাজার পেতে চাইছে। কিন্তু এই সব ওষুধের ক্ষেত্রে মানুষ
সাধারণ ভাবে আগে যে ব্র্যান্ডটি ব্যবহার করেছেন, সেটি ফের কিনতে চান। তা হলে মাথার যন্ত্রণায় কাতর ব্যক্তি রাহুল বা মোদীর নাম দেখে নতুন ওষুধ কেনার ঝুঁকি নেবেন কেন? হজমের সমস্যায় কষ্ট পেতে পেতে কেনই বা ‘মমতাজাইম’-এ আগ্রহ দেখাবেন কেউ?
সংশ্লিষ্ট সংস্থার ডিরেক্টর নভোনীল জৈনের অবশ্য দাবি, গত সপ্তাহে ‘রাগাফ্লেম’ এবং ‘নমোনি’ দু’টি ওষুধই গোটা দেশে ২০ লাখ করে বিক্রি হয়েছে। যেটা যে কোনও নতুন ব্র্যান্ডের পক্ষেই বড় নজির। বিভিন্ন হোলসেলার ও ডিস্ট্রিবিউটরদের কাছ থেকে আগামী দেড় সপ্তাহের জন্য যে অর্ডার তাঁরা পেয়েছেন, তা ৪০ লাখের কাছাকাছি। জৈন-এর মতে, “আমি এর আগেও অন্যান্য সংস্থার প্রধান হিসেবে অনেক বড় বড় ওষুধের ব্র্যান্ড বাজারে এনেছি। কিন্তু এমন অভূতপূর্ব সাড়া পাইনি।”
কিন্তু ঘটনা হল, এই নতুন ওষুধগুলির জনপ্রিয়তা যে খুব বেশি দিন থাকবে, এমনটা কেউই মনে করছেন না। তবে বিজ্ঞাপন বিশেষজ্ঞদের একাংশও বলছেন, এই ভাবে রাজনৈতিক নেতার নাম ব্যবহার করার কৌশল খুব কার্যকরী নয়। কারণ, এর স্থায়িত্ব খুবই কম। যেমন রাম রায়ের বক্তব্য, সামান্য কিছু দিনের মুনাফার লোভে এই ধরনের সিদ্ধান্ত ব্র্যান্ড-এর সংজ্ঞারই বিরোধী। তাঁর কথায়, “ব্র্যান্ড এমন ভাবে তৈরি
করতে হয়, যাতে তার মৃত্যু না ঘটে। নইলে এর পিছনে অর্থ বা সময় ঢেলে লাভ কী?”
আর ওষুধ ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, প্রচারমাধ্যমের কল্যাণে গোটা দেশ জুড়ে এখন শুধু রাহুল আর মোদীর নাম। এই হাওয়াকে কাজে লাগিয়ে মাস দুয়েকে গোটা বছরের লাভ তুলে নেওয়াটাই ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থার উদ্দেশ্য। ক্রেতার সঙ্গে এই নতুন ব্র্যান্ডের পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য দোকানগুলিকে কিছু বাড়তি কমিশনও দেওয়া হচ্ছে। দিল্লির মালব্যনগরের এক ওষুধের দোকানের মালিক আমিরউদ্দিন জানাচ্ছেন, “সংস্থার পক্ষ থেকে আমাদের লিফলেট দেওয়া হয়েছে। ক্রেতারা ওষুধ চাইলে আমরা এই লিফলেটটি তাঁদের পড়তে দিচ্ছি।”
ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থাটি অবশ্য স্বল্পমেয়াদে চটজলদি লাভ পেয়ে খুশি। উত্তরপূর্বাঞ্চলে ওষুধের অন্যতম ডিস্ট্রিবিউটর মনোজ পাতোদিয়া জানাচ্ছেন, “নতুন কোনও পণ্য বাজারে আনলে তাকে দাঁড় করাতে সময় লাগে। কিন্তু ‘রাগাফ্লেম’ এবং ‘নমোনি’র বিক্রি দেখে বোঝাই যাচ্ছে, চাহিদা দারুণ ভাল।”
এই সাফল্যের সূত্র ধরেই সংস্থাটি এ বার মমতার জনপ্রিয়তাকে পুঁজি করতে চাইছে। তবে জাতীয় স্তরে নয়, তাদের লক্ষ্য পশ্চিমবঙ্গের বাজার। সংস্থার পক্ষ থেকে গবেষণা করে দেখা হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গে পেটের ওষুধের চাহিদাই সবচেয়ে বেশি! তাই মমতাজাইম!
কিন্তু ভোট তো এসে গেল প্রায়! নির্বাচনী বিধিতে আটকাবে না? নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য, নির্বাচনীবিধি লঙ্ঘন সংক্রান্ত বড় কোনও অভিযোগ না এলে বেসরকারি পণ্যের উপরে তেমন কড়াকড়ি করা হয় না। তা ছাড়া, ‘মমতাজাইম’ তো এখনও বাজারে আসেনি। আসার পরে যদি এই সংক্রান্ত কোনও অভিযোগ আসে, তখন বিচার করা হবে।
কিন্তু সিপিএম নেতা-কর্মী-সমর্থকদের অসুখ করলে কি ‘মমতাজাইম’ কাজ করবে না? সংস্থার পক্ষ থেকে উত্তর মেলেনি! তবে সব শুনেটুনে রাজ্যের রায়গঞ্জ কেন্দ্রে সিপিএম প্রার্থী মহম্মদ সেলিম বললেন, “শাসক দল তো দাবি করে, মমতা আসার পরে রাজ্য জুড়ে সুশাসনের হাওয়া বইছে। বাঙালির মাথা আর পেট তো তবে ঠান্ডা থাকার কথা!
এর পরেও যদি বাঙালির পেট সারাতে নতুন ওষুধ আসে, তা হলে তো বুঝতে হবে...!”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy