Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

বিরোধীশূন্য লম্বা ইনিংসই লক্ষ্য মোদীর

জনমত পাঁচ বছরের। কিন্তু নরেন্দ্র মোদী বুঝিয়ে দিলেন, তিনি লম্বা ইনিংস খেলতে এসেছেন। এক দফাতে বিদায় নেওয়ার কথা ভাবছেনই না। জনাদেশ বলছে, বিজেপির একারই আসন সংখ্যা ২৮২। এনডিএ জোট ৩৩৬। সেখানে দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হিসেবে কংগ্রেসকে খুঁজতে হচ্ছে অনুবীক্ষণ দিয়ে।

ভাবী প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা। রাষ্ট্রপতি ভবনে মঙ্গলবার। ছবি: রয়টার্স।

ভাবী প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা। রাষ্ট্রপতি ভবনে মঙ্গলবার। ছবি: রয়টার্স।

দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২১ মে ২০১৪ ০৩:০৩
Share: Save:

জনমত পাঁচ বছরের। কিন্তু নরেন্দ্র মোদী বুঝিয়ে দিলেন, তিনি লম্বা ইনিংস খেলতে এসেছেন। এক দফাতে বিদায় নেওয়ার কথা ভাবছেনই না।

জনাদেশ বলছে, বিজেপির একারই আসন সংখ্যা ২৮২। এনডিএ জোট ৩৩৬। সেখানে দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হিসেবে কংগ্রেসকে খুঁজতে হচ্ছে অনুবীক্ষণ দিয়ে। স্বাধীন ভারতে এই প্রথম তাদের আসন ৫০-এর তলায় নেমে গিয়েছে। অর্থাৎ মোদীর হাত ধরেই ভারতীয় সংসদে অকংগ্রেসি একদলীয় শাসনের সূচনা হচ্ছে। আজ সংসদের সেন্ট্রাল হলে সর্বসম্মত ভাবে বিজেপির সংসদীয় দলনেতা নির্বাচিত হন মোদী। তার পরে রাষ্ট্রপতি তাঁকে প্রধানমন্ত্রী পদে নিযুক্ত করেন। কিন্তু সংসদে দাঁড়িয়ে তাঁর প্রথম বক্তৃতাতেই মোদী এ দিন বুঝিয়ে দিয়েছেন, তাঁর দৃষ্টি অনেক দূরে। তাঁর দাবি, সরকারের প্রতি বিরূপ হওয়ার সুযোগই তিনি দেবেন না মানুষকে।

এ দিনই জীবনে প্রথম সংসদে পা রাখলেন মোদী। প্রথম বার লোকসভা নির্বাচনে লড়েই সরাসরি প্রধানমন্ত্রী। ঠিক যেমনটি ঘটেছিল গুজরাতে। একেবারে মুখ্যমন্ত্রী হয়েই বিধানসভায় প্রবেশ করেছিলেন তিনি। আজ হাঁটু মুড়ে মাথা ঠেকিয়ে গণতন্ত্রের মন্দিরের সিঁড়িতে প্রণাম করে শুরু করলেন নয়া সফর। সেন্ট্রাল হলে লালকৃষ্ণ আডবাণীই তাঁর নাম প্রস্তাব করলেন সংসদীয় দলের নেতা হিসেবে। তার পর একে একে তা সমর্থন করলেন দলের সব শীর্ষ নেতাই। ৩০ মিনিটের আবেগঘন বক্তৃতায় এর পরই মোদী ঘোষণা করলেন, এ বারের ভোট থেকে একটা বিষয় স্পষ্ট। মানুষ শুধুমাত্র বিগত সরকারের উপর আশাহত হয়েই ভোট দেননি। যদি ত্রিশঙ্কু সরকার হতো, তা হলে বলা যেত সেটা মানুষের ক্ষোভের প্রকাশ। কিন্তু বিজেপি-কে একক ভাবে গরিষ্ঠতা দিয়ে মানুষ ইতিবাচক ভোট দিয়েছেন। তাঁদের আশা এবং বিশ্বাস ব্যক্ত করেছেন। মোদীর বক্তব্য, সেই আশা পূরণ করাই হবে তাঁর দায়িত্ব।

বিজেপি নেতাদের মতে, মোদীর এই মন্তব্যের পিছনে একটি সুদীর্ঘ রণনীতি রয়েছে। নেহরু জমানায় কংগ্রেস এমনই একদলীয় জনমত পেত। প্রথম কয়েকটি লোকসভায় কোনও বিরোধী দলনেতাই ছিলেন না। ১৯৫২ সালের প্রথম জাতীয় নির্বাচনে বিরোধী দল বলতে ছিল একমাত্র সিপিআই। তাদের মাত্র ১৬টি আসন ছিল। তবে বিরোধী দলের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি তাদের মেলেনি।

এ বার মোদীর নামে ভোটে যা ফল হয়েছে, তাতে নেহরু যুগের উলটপুরাণ দেখা যাচ্ছে। সে আমলে রাজনীতি মানে ছিল, কংগ্রেস বনাম আর সবাই। এ বার ছবিটা দাঁড়িয়েছে বিজেপি বনাম আর সবাই। বিরোধী দলনেতার মর্যাদা কেউ পাবেন কি না, সেই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। ঠিক যেমনটি হতো নেহরু জমানাতে। মোদী চাইছেন, আগামী পাঁচ বছরে কাজের মাধ্যমে এমন নজির স্থাপন করা, যাতে দেশ ফের বিরোধীশূন্যই থেকে যায়।

বিজেপির নেতা রবিশঙ্কর প্রসাদের কথায়, একদলীয় ব্যবস্থা অনেক দিন ধরেই ক্ষয় হয়ে দ্বিদলীয় জোট ব্যবস্থা শুরু হয়েছিল। এ বারের নির্বাচনেও দলের অনেকে হয়তো ভাবেননি, বিজেপি একার জোরেই সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করবে। কিন্তু মানুষ অগাধ ভরসা রেখেছেন মোদীর উপরে। নরেন্দ্র মোদী সেটিকেই আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা ভাবছেন। “গত ক’দিনে মোদী যে সব কর্মসূচির কথা বলেছেন, তার পিছনে অন্তত দশ বছরের ভাবনার কথা রয়েছে। এক দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে বসতে চলেছেন তিনি।”

কী সেই পরিকল্পনা? বিজেপি সরকারকে দীর্ঘ জীবন দিতে মোদীর মন্ত্র কী? সে উত্তরও ছিল মোদীর বক্তৃতাতেই। তিনি বলেন, “গরিব ঘরের ছেলে হয়েও আজ আমি আপনাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। এটাই গণতন্ত্রের শক্তি। সরকারের কাজ গরিবদের জন্য ভাবা, তাঁদের জন্য কাজ করা।” মোদীর বক্তৃতা শুরুই হয়েছে দায়িত্বের কথা দিয়ে। সমাজের গরিব-শোষিত অংশ, যুবসমাজ, মা-বোনেদের নিরাপত্তার জন্য কাজ করার কথা বলেছেন তিনি। তাঁর কথায়, উন্নয়ন হতে হবে সকলকে সঙ্গে নিয়ে, সকলের জন্য। নিজের দলের সাংসদ, যার মধ্যে কেউ কেউ আসবেন মন্ত্রিসভায়, সকলের প্রতি তাঁর একই বার্তা। পদের জন্য নয়, মানুষের জন্য কাজ করতে হবে।

দায়িত্ব পালন করতে যে তিনি কতটা দায়বদ্ধ, সেটা আজ স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছেন মোদী। গত বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর তাঁকে দলের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী বলে ঘোষণা করা হয়েছিল। ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু করে দিয়েছিলেন প্রচারের কাজ। এই ক’মাসে গুজরাতে দলের এক নেতার আকস্মিক মৃত্যুর কারণে একটি মিটিং ছাড়া আরও কর্মসূচি বাতিল করেননি।

প্রচারপর্ব শেষ হওয়ার পরে দলীয় সভাপতি রাজনাথ সিংহের সঙ্গে দেখা করে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট পেশ করেছিলেন দলের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী মোদী। এ বার দেশের নতুন প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা, ২০১৯ সালে আবার রিপোর্ট-কার্ড পেশ করব। সরাসরি জনতার কাছে।

মোদী নিশ্চিত, জনতা তাঁকে ফেরাবে না।

অন্য বিষয়গুলি:

diganta bandapadhyay modi bjp
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy