দেওঘরের তিওয়ারি চকের একটি নার্সারি স্কুলে তখন সবে ক্লাস শুরু হয়েছে। পড়ুয়ারা বইখাতা খুলতে না খুলতেই হঠাৎ কেঁপে উঠল ব্লাকবোর্ড। মুহূর্তে শিক্ষকরা বুঝলেন ভূমিকম্প হচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গেই পড়ুয়াদের নিয়ে তাঁরা বেরলেন স্কুলের বাইরে।
আজ সকাল আটটা পাঁচে ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল ঝাড়খণ্ডের মাটি। দেওঘর, ধানবাদ, রাঁচি, দুমকা, পাকুড়, বোকারো, হাজারিবাগেও টের পাওয়া গেল কম্পন। শুধু ঝাড়খণ্ডই নয় কেঁপেছে বিহারের জামুই, গয়া এবং পশ্চিমবঙ্গের আসানসোল ও রূপনারায়ণপুর।
রাঁচির আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা বিনয় কুমার মণ্ডল বলেছেন, ‘‘রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৪.২। এটা মৃদু ভূমিকম্পই বলা চলে। কিছু ঘরবাড়িতে ফাটল দেখা গিয়েছে। তবে বড় ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। হতাহতের কোনও খবর নেই।’’ বিনয়বাবু জানিয়েছেন, ভূমিকম্পের উৎসস্থল দেওঘর।
কোনও ক্ষয়ক্ষতি নেই, মৃত্যুর ঘটনাও নেই। তবুও এই ভূমিকম্পের উৎসস্থল দেওঘর দেখে ভূতত্ববিদদের কপালে ভাঁজ পড়েছে। বিনয়বাবু জানান, ভূমিকম্পের উৎসস্থলের বিচারে ঝাড়খণ্ড ‘জোন ৩’-এর মধ্যে পড়ে। একে নিরাপদ এলাকাই বলা যায়।
তবু কী ভাবে দেওঘর ভূকম্পনের উৎসস্থল হল? ভূতত্ববিদরা জানাচ্ছেন, গত পঞ্চাশ বছরে ঝাড়খণ্ডে মাত্র দু’বার ভূমিকম্পের উৎস হয়েছিল। ২০০৫ সালে ও ১৯৫২ সালে। তা রাঁচির জৈন কলেজের ভূতত্ব বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষক তথা ভূতত্ববিদ নীতীশ প্রিয়দর্শন বলেন, ‘‘এ দিনের ভূমিকম্পের উৎসস্থল মাটি থেকে দশ কিলোমিটার গভীরে ছিল। দেওঘরের মাটির নিচে শক্ত পাথর রয়েছে। শক্ত পাথর থাকা জায়গায় ভূমিকম্প তৈরি হওয়ার আশঙ্কা একেবারে ক্ষীণ। তবে দেখা গিয়েছে, বিভিন্ন কারণে ওই সব শক্ত পাথরগুলিতে ক্রমে ফাটল ধরছে। তাতেই বিপত্তি।’’
ভূতত্ববিদরা জানাচ্ছেন, নানা কারনে ওই সব পাথরে চাপ পড়ছে। পাহাড়ে নির্মাণকাজ, মাটির গভীর থেকে খনিজ পদার্থ তুলতে গিয়ে বিস্ফোরণ, যেখানে বসবাস করা উচিত নয় সেখানে লোকালয় তৈরিই তার মূল কারণ।
রাঁচি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ববিভাগের বিভাগীয় প্রধান দীপক কুমার ভট্টাচার্যও মনে করেন, ভূমিকম্পের উৎসস্থল দেওঘর হওয়া খুবই ব্যতিক্রমী ঘটনা। তিনি বলেন, ‘‘ওই এলাকায় মাটির গভীরে শক্ত পাথর রয়েছে। তবু কেন এটা হল তা খতিয়ে দেখা দরকার। তবে এই অঞ্চলে ভূমিকম্প হলেও তার মাত্রা মৃদুই হবে।’’
ঝাড়খণ্ড সরকারের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর প্রধান কর্নেল শ্রীবাস্তব কিন্তু বলেন, ‘‘আজকের ভূমিকম্প নিয়ে আমরা যথেষ্ট চিন্তিত। নানা কারণে ছোটনাগপুরের পাহাড়-মাটির চরিত্র বদলাচ্ছে। বিভিন্ন জায়গার মাটি ও পাথর পরীক্ষার কাজ চলছে। ভূমিকম্প রোধে কী কী করা যায় তার নীল নকশাও তৈরি করা হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy