Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪

চেয়েও অর্থমন্ত্রক পাননি মনমোহন

প্রধানমন্ত্রীর গদিতে নিজে না বসে সনিয়া গাঁধী যখন তাঁকে সেই পদ ছেড়ে দিয়েছিলেন, তখন মোটেই বিস্মিত হননি মনমোহন সিংহ। ওই পদের জন্য প্রণব মুখোপাধ্যায় বা অর্জুন সিংহের নাম নিয়ে ভাবনা-চিন্তাই করেননি সনিয়া। এমনকী এ কে অ্যান্টনির থেকেও বেশি ভরসা রেখেছিলেন মনমোহনের উপরেই। কারণ তার বেশ কয়েক বছর আগে থেকেই সনিয়ার কার্যত ডান হাত হয়ে উঠেছিলেন দেশে আর্থিক ক্ষেত্রে সংস্কারের এই কান্ডারি।

সঞ্জয় বারুর লেখা বই।

সঞ্জয় বারুর লেখা বই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০১৪ ০৩:৩০
Share: Save:

প্রধানমন্ত্রীর গদিতে নিজে না বসে সনিয়া গাঁধী যখন তাঁকে সেই পদ ছেড়ে দিয়েছিলেন, তখন মোটেই বিস্মিত হননি মনমোহন সিংহ। ওই পদের জন্য প্রণব মুখোপাধ্যায় বা অর্জুন সিংহের নাম নিয়ে ভাবনা-চিন্তাই করেননি সনিয়া। এমনকী এ কে অ্যান্টনির থেকেও বেশি ভরসা রেখেছিলেন মনমোহনের উপরেই। কারণ তার বেশ কয়েক বছর আগে থেকেই সনিয়ার কার্যত ডান হাত হয়ে উঠেছিলেন দেশে আর্থিক ক্ষেত্রে সংস্কারের এই কান্ডারি।

প্রধানমন্ত্রীর গদিতে বসে অন্যান্য কিছু দফতরের পাশাপাশি প্রিয় অর্থ মন্ত্রকের দায়িত্বও নিজের হাতেই রাখতে চেয়েছিলেন মনমোহন সিংহ। কিন্তু ১৯৯১ সালে যিনি অর্থমন্ত্রী হিসেবে দেশকে আর্থিক সঙ্কটের হাত থেকে বের করে এনেছিলেন, ২০০৪ সালে তাঁর হাতে অর্থ মন্ত্রকের দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। সেই মন্ত্রক চলে গিয়েছিল সনিয়ার বিরোধিতা করে এক সময় কংগ্রেস ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়া পি চিদম্বরমের হাতে! যিনি এক সময় বামেদের সমর্থনে চলা যুক্তফ্রন্ট সরকারের অর্থমন্ত্রী ছিলেন!

আমেরিকার সঙ্গে পরমাণু চুক্তি করা নিয়ে বামেদের বিরোধিতার মুখে কার্যত নিজের গদি বাজি রেখেছিলেন মনমোহন। কিন্তু গোটা সরকার যে তাঁর সঙ্গে ছিল, এমন নয়। বিরোধিতা ছিল বিরোধী শিবিরের অন্দরেও।

মনমোহন সিংহের সঙ্গে লেখক। একটি মুহূর্ত।

ভোটের বাজারে নিজের ঝোলা থেকে এমনই নানা গল্প বের করে এনেছেন সঞ্জয় বারু। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের প্রাক্তন মিডিয়া উপদেষ্টা। বারুর এই বই নিয়ে প্রত্যাশিত ভাবেই শুরু হয়ে গিয়েছে রাজনৈতিক যুদ্ধ। বিজেপি বহু দিন ধরেই অভিযোগ করছিল, মনমোহন নামেই প্রধানমন্ত্রী। সব ক্ষমতা সনিয়ার হাতে। আর ক্ষমতার দু’টি কেন্দ্র হয়ে যাওয়াতেই ইউপিএ-সরকারের কাজের গতি রুদ্ধ। সঞ্জয় বারুর বই কার্যত সেই অভিযোগেই সিলমোহর বসিয়েছে। রাজনৈতিক যুদ্ধে রসদ জোগানোর পাশাপাশি সনিয়া-মনমোহনের সম্পর্ক এবং ইউপিএ সরকার তথা দিল্লির রাজনৈতিক শিবিরের অনেক অজানা খবর প্রকাশ্যে এনেছেন সঞ্জয়।

২০০৪ সালে মনমোহন প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তাঁর মিডিয়া উপদেষ্টা পদে নিযুক্ত হন সঞ্জয়। কিন্তু সাংবাদিক হওয়ার সুবাদে অনেক আগে থেকেই মনমোহনের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। ‘দ্য অ্যাক্সিডেন্টাল প্রাইম মিনিস্টার মেকিং অ্যান্ড আনমেকিং অফ মনমোহন সিংহ’ বইয়ে প্রথম ইউপিএ-সরকারের একেবারে গোড়ার কথা তুলে ধরেছেন সঞ্জয়। তখনও কে কোন মন্ত্রক পাবেন, ঠিক হয়নি। চিদম্বরমের তামিল মানিলা কংগ্রেস ভোটের আগেই কংগ্রেসে যোগ দিয়েছে। যুক্তফ্রন্ট সরকারের আমলেও অর্থমন্ত্রী থাকার সুবাদে ফের অর্থ মন্ত্রকের দাবিদার হয়ে উঠলেন চিদম্বরম। এরই মধ্যে সঞ্জয় যে দৈনিকের সম্পাদক ছিলেন, সেখানে খবর প্রকাশিত হল, প্রধানমন্ত্রী মনমোহন নিজের হাতেই অর্থ মন্ত্রক রাখবেন। প্রতিমন্ত্রী হবেন পৃথ্বীরাজ চহ্বাণ। পরের দিনই চিদম্বরম সঞ্জয়ের কাছে জানতে চাইলেন, “আপনাকে এটা কে বলল?” সঞ্জয় জানালেন, একেবারে ঘোড়ার মুখের খবর। চিদম্বরমের প্রশ্ন, “তা হলে আমি কোন মন্ত্রক পাব?” সঞ্জয় জানালেন, আপনাকে বাণিজ্য ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রকের জন্য ভাবা হচ্ছে। চিদম্বরম সাফ জানিয়ে দিলেন, তিনি এটা মেনে নেবেন না। তাঁকে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রকই দিতে হবে। না হলে তিনি মন্ত্রীই হবেন না। সঞ্জয় মজা করে বলেছিলেন, তা হলে আপনি ইংরেজি দৈনিকে সাপ্তাহিক কলাম লেখা চালিয়ে যেতে পারেন!

শেষ পর্যন্ত মন্ত্রিসভা ঘোষণা হওয়ার পরে দেখা গেল, চিদম্বরমই অর্থ মন্ত্রকের দায়িত্বে। কী ভাবে সমীকরণ বদলে গেল? জানা গেল, মনমোহনকে বোঝানো হয়েছে, তিনি সরকারের সব দিক সামলে আবার অর্থ মন্ত্রকের দায়িত্ব সামলাতে গেলে চাপ পড়ে যাবে। তাই অর্থ মন্ত্রকের ভার চিদম্বরমকেই ছেড়ে দিতে হয়েছিল মনমোহনকে। পৃথ্বীরাজ চহ্বাণের আশা ছিল, তিনি প্রধানমন্ত্রীর দফতর ও অর্থ মন্ত্রক, দুইয়েরই প্রতিমন্ত্রী হবেন। কিন্তু তাঁর ভাগ্যে জুটল শুধুই প্রথমটি।

কংগ্রেসের নেতারা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, প্রথম ইউপিএ-সরকারে তাঁর অপূর্ণ ইচ্ছা মনমোহন পূরণ করতে পেরেছিলেন দ্বিতীয় ইউপিএ-জমানায়। প্রণব মুখোপাধ্যায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার পর কিছু দিনের জন্য অর্থ মন্ত্রক নিজের হাতে রেখেছিলেন তিনি। ফের সেই চিদম্বরমের হাতেই দায়িত্ব তুলে দিতে হয়।

যে সনিয়ার জন্য মনমোহন তাঁর ইচ্ছে মতো কাজ করতে পারেননি, সেই সনিয়াই কিন্তু একাধিক শীর্ষ নেতাকে পাশে সরিয়ে রেখে প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য বেছে নিয়েছিলেন নরসিংহ রাও জমানার এই অর্থমন্ত্রীকে। সঞ্জয় বইয়ে জানিয়েছেন, ১৯৯৯ সালে সনিয়ার কথাতেই দক্ষিণ দিল্লি থেকে লোকসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন মনমোহন। বিজেপির ভি কে মলহোত্র-র কাছে হেরেও যান। কিন্তু পরের পাঁচ বছরে ক্রমশ সনিয়ার ডান হাত হয়ে ওঠেন তিনি। বিরোধী দলনেত্রী হিসেবে সনিয়া যখন বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে দেখা করতেন, তখন তাঁর পাশে থাকতেন মনমোহনই। দলনেত্রীর বিশ্বস্ত হয়ে ওঠার সেই পুরস্কারই মনমোহন পেয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী হয়ে।

—ফাইল চিত্র

অন্য বিষয়গুলি:

new delhi sanjaya baru
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy