নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের আসামি নুর হোসেনকে ছাড়ার শর্তেই কি আলফা নেতা অনুপ চেটিয়াকে হাতে পেয়েছে ভারত সরকার? বিদেশ মন্ত্রকের কর্তারা তা স্বীকার করতে নারাজ। বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও বুধবার জানিয়েছিলেন, তেমন কোনও শর্ত কেউ কাউকে দেয়নি। তবে নুর হোসেনকে শীঘ্রই হাতে পাবে বাংলাদেশ সরকার। কিন্তু বুধবার সকালে চেটিয়া ভারতের হাতে আসার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নুর হোসেনকে বাংলাদেশ পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য জেল থেকে বার করে নিয়ে যাওয়ার পরে সেই জল্পনাই সত্যি বলে মনে করা হচ্ছে।
দমদম কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার থেকে বিকেল ৫ টা ৫০ মিনিট নাগাদ নারায়ণগঞ্জ পুরসভার আওয়ামি লিগ কাউন্সিলর নুর হোসেনকে বার করে নিয়ে যান ব্যারাকপুর কমিশনারেটের পুলিশ অফিসারেরা। একটি ভাড়া গাড়িতে চাপিয়ে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় সীমান্তের বেনাপোল চেকপোস্টে। বাংলাদেশ পুলিশের একটি দল দুপুর থেকেই সেখানে অপেক্ষায় ছিল। শুক্রবার সকালেই নুরকে নিয়ে তাদের ঢাকায় পৌঁছে যাওয়ার কথা।
কৈখালির ‘ইন্দ্রপ্রস্থ’ আবাসন থেকে ২০১৪ সালের ২৩ জুন দুই সহযোগী সুমন খান এবং ওবেইদুর রহমান-সহ নুরকে গ্রেফতার করে বাগুইআটি থানার পুলিশ এবং বিধাননগর কমিশনারেটের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স। গ্রেফতারের পরে পুলিশ জানিয়েছিল নুরের কাছ থেকে একটি রিভলভার ও বেশ কিছু কার্তুজ মিলেছে। বেআইনি অনুপ্রবেশ ও অস্ত্র আইনে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করলেও পরে জানতে পারে নুরের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের ‘রেড কর্নার’ নোটিশ রয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে নিজের দলেরই এক কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম এবং আইনজীবী চন্দনকুমার সরকার-সহ সাত জনকে খুন করিয়ে শীতলক্ষ্যা নদীতে ভাসিয়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। তদন্তে জানা গিয়েছে, পুলিশের বিশেষ বাহিনী র্যাব-এর একটি দলকে ৬ কোটি টাকা দিয়ে তিনি এই খুন করান।
কূটনৈতিক সূত্রের খবর, কয়েক মাস আগে বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রক জানায়, ভারতের জেলে বন্দি দুই দুষ্কৃতী সুব্রত বাইন ও নুর হোসেনের বিনিময়ে তারা অনুপ চেটিয়াকে হস্তান্তরে রাজি। সুব্রত এর আগে এক বার কলকাতায় ধরা পড়ার পরে পালিয়ে নেপাল চলে যায়। পরে সেখানকার জেল থেকে পালিয়ে ভারতে এসে আবার গ্রেফতার হয়। ভারতেও তার বিরুদ্ধে বেশ কিছু ফৌজদারি মামলা চলছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ঢাকাকে জানিয়ে দেয়, সুব্রত বাইনকে ফেরত দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু আইনি জটিলতা রয়েছে। কিন্তু নুর হোসেনকে হস্তান্তরে বাধা নেই। তার পরেই চেটিয়া ও নুর হোসেনের আদানপ্রদানের বিষয়টি চূড়ান্ত হয়। সেই অনুযায়ী অত্যন্ত গোপনে মঙ্গলবার রাতে ঢাকার কাশিমবাজার জেল থেকে বার করে এনে বুধবার সকালে ভারতীয় নিরাপত্তা রক্ষীদের হাতে তুলে দেওয়া হয় আলফার সাধারণ সম্পাদক অনুপ চেটিয়াকে।
অসম পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শান্তি আলোচনায় যোগ দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলেও অনুপ চেটিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলাগুলি চলবে। অর্থাৎ, রাজ্যে ফেরার পরে তাঁকে আদালতে তোলা হবে। চলবে বিচার। অনুপের হেফাজত চেয়ে আজ কেন্দ্রকে চিঠিও পাঠিয়েছে অসম সরকার। অনুপকে এ দিনই দিল্লির আদালতে তোলে সিবিআই। সিবিআই সূত্রে জানানো হয়েছে, নির্দিষ্ট মামলা ছাড়া আইনত অনুপকে হাতে নেওয়া যেত না। তাই ১৯৮৮ সালের ২১ মার্চ অসমে হওয়া একটি খুনের মামলায় অনুপকে অভিযুক্ত হিসাবে দেখানো হয়েছে। আদালত অনুপকে ছ’দিনের ট্রানজিট রিম্যান্ড দিয়েছে। তার মধ্যেই তাঁকে অসমের কোনও আদালতে পেশ করতে হবে।
অসম পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, কেন্দ্রের দিক থেকে এই ব্যাপারে সরকারি ভাবে এখনও তাদের কিছু জানানো হয়নি। তবে অসমে আসার পরে আদালত জামিন দিলে তবেই বাড়ি ফিরতে পারবেন অনুপ। পুলিশ সূত্রে খবর— অরবিন্দ রাজখোয়া, রাজু বরুয়া, শশধর চৌধুরী বা এনডিএফবি নেতা রঞ্জন দইমারির মতোই, আলোচনার স্বার্থে পুলিশ তাঁর জামিনের বিরোধিতা করবে না। অসম পুলিশের খাতায় হত্যা, নাশকতা, তোলাবাজি ও অপহরণ-সহ ন’টি মামলায় অভিযুক্ত চেটিয়া।
অনুপবাবুর স্ত্রী মণিকা বরা ইতিমধ্যেই বিজেপির অসম শাখার অন্যতম মুখপাত্র তথা আইনজীবী বিজন মহাজনকে মামলা লড়ার জন্য নিয়োগ করেছেন। মণিকাদেবী জানান, বিজনবাবুকে নিয়ে তিনি শুক্রবার দিল্লি যাবেন। সিবিআইয়ের এক কর্তা বলেন, ‘‘অনুপ চেটিয়া এখন পুলিশের হেফাজতে। তাই তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গেলে ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি লাগবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy