পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ বিজেপি মহিলা মোর্চার। মঙ্গলবার শিলচরে। ছবি: স্বপন রায়।
কাছাড়ের পুলিশ সুপার রজবীর সিংহের বদলির দাবিতে আজও সরব শিলচর। বিজেপির শাখা সংগঠনের বাইরেও অনেকে আজ নিন্দা-প্রতিবাদে মুখর হয়েছেন। বিশেষ করে, মহিলাদের লাঠিপেটার ঘটনায় আজ সরগরম ছিল কাছাড়ের জেলাসদর।
বিজেপির মহিলা মোর্চা ঝাড়ু হাতে মিছিল করে। পুলিশ সুপারের অফিসের সামনে তাঁর কুশপুতুল ঝাড়ুপেটা করের মোর্চার সদস্যারা। পুলিশকর্মীদের সামনেই তাতে আগুন ধরিয়ে দেন প্রতিবাদী মহিলারা। বরাক উপত্যকার বেশ ক’জন মহিলা কবি-সাহিত্যিকও লাঠিচার্জের নিন্দা করেছেন। আইজিপি এস এন সিংহের সঙ্গে দেখা করে বিজেপির এক প্রতিনিধি দল আজ পুলিশ সুপারের বদলির দাবি জানান। পরিস্থিতির খোঁজ নিতে কাল শিলচরে আসছেন বিজেপি নেতা তথা কেন্দ্রীয় ক্রীড়া ও যুব কল্যাণ মন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল।
বিজেপি মহিলা মোর্চার শতাধিক সদস্য আজ সকালে ঝাড়ু হাতে মিছিলে বেরোন। ইটখলা দলীয় কার্যালয় থেকে তাঁরা সোজা যান পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে। তাঁর প্রতি ধিক্কার জানিয়ে বারবার স্লোগান ওঠে। অভিযোগের কেন্দ্রে খোদ পুলিশ সুপার বলে তাঁর বাহিনী ছিল যথেষ্ট সতর্ক। খোদ পুলিশ সুপারের অফিসের সামনে রাস্তা আটকে রাখা, কুশপুতুলে ঝাড়ুপেটা ও পোড়ানোর পরও উত্তেজনার লেশমাত্র ছিল না খাকি উর্দিধারীদের। মহিলা পুলিশ দিয়ে গেটে কর্ডন গড়ে তোলা হয়েছিল। মোর্চার কর্মীরা সেই কর্ডন ভাঙার চেষ্টা করেননি। একই ভাবে কুশপুতুল পোড়ানোর সময় দলীয় সদস্যরা বলয় তৈরি করে রাখে। দাউ দাউ আগুন জ্বললেও পুলিশ সেই বলয়ে ঢোকার চেষ্টা করেনি। ঝাড়ু হাতে এই বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেন মহিলা মোর্চার জেলা সভানেত্রী সন্ধ্যা আচার্য, মধুমিতা নাগ, রীনা সিংহ, গোপীকা দেব, রীনা পাল, মধুমিতা শর্মা, রত্না দাস, গৌরী চক্রবর্তী, লিপিকা রায় প্রমুখ। লক্ষ্মীপুর মহকুমা থেকে আসেন শম্পা দাস, আলপনা বিবিরা। সঙ্গে ছিলেন বিপ্লব দেবনাথ, কাজল রায়, রামকৃষ্ণ সিংহ, রাজেশ দাসের মতো বিজেপি নেতারা।
পুলিশ সুপার রজবীর সিংহ ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুভাষিনী শঙ্করণ তখন অফিসেই ছিলেন। বাইরে পরিস্থিতি সামলাতে উপস্থিত ছিলেন ডিএসপি সুধাংশুকুমার দাস ও আসাম পুলিশের ষষ্ঠ ব্যাটেলিয়নের ডেপুটি কম্যান্ডান্ট মৃন্ময় গোস্বামী।
শনিবার বিধায়ক দিলীপকুমার পালকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে তারাপুর পুলিশ ফাঁড়িতে বিক্ষোভ দেখানোর সময় পুলিশ সুপার রজবীর সিংহ লাঠিচার্জের নির্দেশ দেন। মহিলা পুরুষ নির্বিচারে বিজেপি সদস্যদের উপরে সিআরপি জওয়ানরা লাঠি চালায়। প্রচুর মহিলা জখম হন। মাথায় লাঠির আঘাত নিয়ে আজও শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিত্সাধীন পুর সদস্য রাখি চৌধুরী। এই ঘটনাকে ‘বর্বর আক্রমণ’ বলে উল্লেখ করেছেন বরাক উপত্যকার মহিলা সাহিত্যিকরা। দ্বিজেন্দ্র-ডলি মেমোরিয়াল ট্রাস্ট, নন্দিনী সাহিত্য ও পাঠচক্র এবং মানবী সাহিত্যপত্রের পক্ষ থেকে রজবীর সিংহকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার জন্য তিনদিন সময় দেওয়া হয়েছে। দুর্বা দেব, চন্দ্রিমা দত্ত, শিবানী দেবরায়, সর্বাণী দত্ত, জয়া ভাওয়াল, মঞ্জুরি রায়, মধুর গুপ্ত ও অনন্যা বাগচি বলেন, ‘‘আমরা কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত নই। কিন্তু যে ভাবে পুলিশ-সিআরপিকে দিয়ে মহিলাদের উপর লাঠিচার্জ করা হল, তা মধ্যযুগীয় বর্বরতা।’’ তাঁদের প্রশ্ন, ‘‘পুলিশ কি মহিলাদের বিক্ষোভ কর্মসূচিতে দেখেনি। দেখে থাকলেও তাদের পেটানোরই শখ হলে মহিলা পুলিশ কেন আনা হল না?’’ তাঁদের সঙ্গে থেকে একই ভাবে প্রতিবাদে সোচ্চার হন বরুণজ্যোতি চৌধুরী, রূপরাজ ভট্টাচার্য, স্বপন ভাওয়াল ও শতদল আচার্য।
তাঁরা বিধায়ক দিলীপকুমার পালের প্রতি পুলিশ সুপারের অশালীন মন্তব্যেরও সমালোচনা করেন। চন্দ্রিমা দত্ত বলেন, ‘‘যে দলেরই হোক, তিনি একজন জনপ্রতিনিধি। তাঁর সঙ্গে আপত্তিকর কথাবার্তা শিলচরবাসীকেই অপমান করা।’’ বরুণজ্যোতি চৌধুরী বলেন, ‘‘আন্দোলন সামাল দিতে পুলিশ প্রথমে জলকামান ব্যবহার করতে পারত, পরে কাঁদানো গ্যাস ব্যবহার করে তারপরেই লাঠি চালানোর কথা। মহিলাদের পিঠে, মাথায় যে ভাবে লাঠি চালানো হয়েছে, তা কোনও মতেই মানা যায় না।’’ এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে তিন সংগঠনের পক্ষ থেকে শহরবাসীর প্রতি অনুরোধ করা হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy