Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Yogi Adityanath

ধর্মান্তর-রোধ আইন কার্যকর যোগী-রাজ্যে

আইনের নাম যাই থাক, বিয়ের জন্য ধর্মান্তর রোখাই যে অর্ডিন্যান্সটির প্রধান লক্ষ্য, তা স্পষ্ট।

যোগী আদিত্যনাথ। -ফাইল চিত্র

যোগী আদিত্যনাথ। -ফাইল চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০২০ ০২:১২
Share: Save:

তথাকথিত ‘লাভ জেহাদ’ বিতর্কের মধ্যেই জোর করে ধর্মান্তর রুখতে অর্ডিন্যান্স আনল উত্তরপ্রদেশ সরকার। মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের পাঠানো খসড়া বিলটিতে সই করে অনুমোদন দিয়ে দিলেন রাজ্যপাল আনন্দীবেন পটেল। সরকারি সূত্রে জানানো হয়েছে, রাজ্যপাল শুক্রবার রাতে অনুমোদন দেওয়ার পরে শনিবারই গেজেট নোটিফিকেশন করে অধ্যাদেশটি কার্যকর করা হয়েছে।

আইনের নাম যাই থাক, বিয়ের জন্য ধর্মান্তর রোখাই যে অর্ডিন্যান্সটির প্রধান লক্ষ্য, তা স্পষ্ট। এই আইন প্রয়োগের পরে ধর্মান্তর করে বিয়ে শুধু বাতিল গণ্যই হল না, ১০ বছর পর্যন্ত জেল এবং ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানাও গুনতে হতে পারে পাত্রকে। সরকারি কর্তারা জানিয়েছেন, আপাতত অর্ডিন্যান্স বা অধ্যাদেশ হিসেবে আইনটি প্রয়োগ করা হলেও পরে বিধানসভায় পাশ করিয়ে পূর্ণাঙ্গ ধর্মান্তর-বিরোধী আইনে পরিণত করা হবে এ’টিকে। রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদব সরকারের এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করে জানিয়েছেন, বিধানসভায় তাঁদের সদস্যরা এর বিপক্ষেই ভোট দেবেন।

হিন্দু মেয়ের সঙ্গে মুসলিম ছেলেদের বিয়ের বিরোধিতায় সরব কট্টর হিন্দুত্ববাদীরা। তাঁদের অভিযোগ, হিন্দু মেয়েদের প্রেমের ছলে ভুলিয়ে ধর্মান্তর করে বিয়ে করাটা আসলে মুসলিম জেহাদিদের কৌশল। এরই নাম দেওয়া হয়েছে ‘লাভ জেহাদ’। অনেক সময়ে গরিব হিন্দু মেয়েদের বিয়ে ও সংসারের লোভ দেখিয়েও ধর্মান্তর করা হচ্ছে। বিজেপি হরিয়ানা, কর্নাটক ও মধ্যপ্রদেশও এই ‘লাভ জেহাদ’-এর বিরুদ্ধে আইন আনার কথা বলেছে। উচ্চ আদালত সম্প্রতি স্বেচ্ছা-বিয়ের ক্ষেত্রে ধর্মকে গুরুত্ব দিয়ে না-দেখার কথা বললেও

কট্টর হিন্দুত্ববাদীরা যে তাঁদের অবস্থানে অনড়, উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর এই পদক্ষেপ প্রমাণ। নতুন অর্ডিন্যান্সে ‘জোর করে, প্রভাব খাটিয়ে, ভয় বা প্রলোভন দেখিয়ে ধর্মান্তর’-কে শুধু বেআইনিই করা হয়নি, ধর্মান্তরিত কোনও নারী বা পুরুষের ‘স্বধর্মে ফিরে আসা’-র পথও খোলা রাখা হয়েছে। এ জন্য ওই নারী বা পুরুষকে সংশ্লিষ্ট জেলাশাসকের কাছে আবেদন করতে বলা হয়েছে।

কেউ স্বধর্মে ফিরে এলে ভিন্নধর্মের বিয়ে আর ধর্মান্তরের জন্য বাতিল বিবেচিত হবে না। রাজ্যের বিজেপি নেতাদের ব্যাখ্যা— এই সুযোগ রাখায় প্রমাণ হল, কেবল ধর্মান্তরের উদ্দেশ্যে বিয়েকেই বাতিল করতে চায় যোগী সরকার। তাঁদের প্রশ্ন, প্রকৃত স্বেচ্ছা-বিয়েতে ধর্মান্তরই বা কেন হবে?

আইন অনুযায়ী কেউ যদি অভিযোগ করেন জোর করে, প্রলোভন দেখিয়ে বা ভুল বুঝিয়ে তাঁকে ধর্মান্তর করা হয়েছে, তবে অভিযুক্তদের শাস্তি ছাড়া ক্ষতিপূরণও তিনি পেতে পারেন। এই ক্ষতিপূরণের অঙ্ক ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত। মন্ত্রী সিদ্ধার্থনাথ সিংহ আগেই জানিয়েছিন, জোর করে বা ছল করে ধর্মান্তর প্রমাণ হলে সাধারণ ক্ষেত্রে ১ থেকে ৫ বছরের কারাবাসের সাজা হবে। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত নারী বা পুরুষ নাবালক অথবা তফসিলি জাতি বা জনজাতিভুক্ত হলে শাস্তি বেড়ে ১০ বছর পর্যন্ত হতে পারে। সঙ্গে জরিমানা ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত। ধর্মান্তরিত নিজে ছাড়াও তাঁর রক্তের সম্পর্কের যে কেউ প্রশাসনের কাছে এই আইনে অভিযোগ জানাতে পারবেন।

উত্তরপ্রদেশে হিন্দুত্ববাদীরাও বহু জায়গায় অনুষ্ঠান করে ভিন্‌ ধর্মীদের হিন্দু ধর্মে ফেরান। তা-ও কি নিষিদ্ধ হচ্ছে নয়া আইনে? এই প্রশ্নের উত্তরে বিজেপি নেতাদের জবাব— জোর করে কাউকে হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করানো হয় না। যাঁরা আসেন, তাঁরা স্বেচ্ছায়। আর দেশের সব মানুষই এক সময়ে সনাতন ধর্মাবলম্বী ছিলেন। স্বধর্মে ফেরার পথ তো খোলাই রাখা হয়েছে আইনে।

অন্য বিষয়গুলি:

Anti Love Jihad Law UP Yogi Adityanath
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy