বৃক্ষাসনে জয়ন্ত। নিজস্ব চিত্র
প্রথমে শিরদাঁড়া সোজা করে দাঁড়াতে হবে। হাত দু’টো নমস্কারের ভঙ্গিমায় রেখে মাথার উপরে তুলতে হবে। ডান পা উঠিয়ে বাঁ পায়ের উরুতে রাখতে হবে। পায়ের পাতা উরুর সঙ্গে লেগে থাকবে। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে এ ভাবে আধ মিনিট থাকতে হবে।
মঙ্গলবার ‘যোগ দিবস’-এর সকালে বৃক্ষাসন করছিলেন হাজারিবাগের বিজেপি সাংসদ জয়ন্ত সিন্হা। বোধহয় আঁচ করছিলেন, এক পায়ের উপরে দাঁড়িয়ে শরীরের ভারসাম্য রাখা তুলনায় সহজ। তার থেকে অনেক কঠিন, পিতা-পুত্রের সম্পর্কে ও রাজনৈতিক অবস্থানের মধ্যে ভারসাম্য রেখে চলা। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তাঁকে সেই পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হবে।
কঠিনই বটে। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিরোধী শিবিরের প্রার্থী হয়ে যশবন্ত সিন্হা আরও এক বার কঠিন পরীক্ষার মধ্যে ফেলে দিলেন পুত্র জয়ন্তকে। জয়ন্ত বিজেপির সাংসদ। তাঁকে এ বার ঠিক করতে হবে, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে তিনি বাবাকে ভোট দেবেন, না কি বাবাকে হারাতে বিজেপির প্রার্থীকেই ভোট দেবেন!
জয়ন্ত এ বিষয়ে মুখ খুলতে চাননি। বিজেপির নেতাদের মতে, যশবন্ত নিজেও জানেন, ছেলের ভোট তিনি পাবেন না। কারণ পিতা ও পুত্র আগেই রাজনৈতিক ভাবে বিপরীত মেরুতে চলে গিয়েছেন। যশবন্ত নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় জয়ন্তকে তার খেসারতও দিতে হয়েছে বলেও অনেকের মত। ২০১৪-তে বাবার লোকসভা কেন্দ্র হাজারিবাগ থেকেই জিতে আসার পরে জয়ন্তকে নরেন্দ্র মোদী অর্থ মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী করেছিলেন। তার পরে বিমান মন্ত্রকের স্বাধীন ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রীও হয়েছিলেন। কিন্তু তার পরে মন্ত্রিত্ব গিয়েছে। এখন তিনি শুধুমাত্র অর্থ মন্ত্রকের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান।
যশবন্ত সিন্হা অবশ্য প্রথম থেকে বিজেপিতে ছিলেন না। আইএএস-এর চাকরি থেকে রাজনীতিতে এসে প্রথমে জনতা পার্টি, পরে জনতা দলের সদস্য হয়ে চন্দ্রশেখর সরকারের অর্থমন্ত্রী হয়েছিলেন। তার পরে বিজেপিতে যোগ দেন। বাজপেয়ী সরকারের অর্থমন্ত্রী ও বিদেশমন্ত্রী হয়েছিলেন। কিন্তু নরেন্দ্র মোদীর জমানায় কোণঠাসা যশবন্ত মোদীর সমালোচনা শুরু করেন। ২০১৮-তে বিজেপি ছাড়েন। জয়ন্ত অবশ্য বিজেপিতেই থেকে যান।
যশবন্ত নিজেই স্বীকার করেছিলেন, রাজনৈতিক ভাবে বিপরীত মেরুতে চলে যাওয়ায় বাবা-ছেলের সম্পর্ক নষ্ট হয়েছে। হার্ভার্ড থেকে পড়াশোনা করে আসা জয়ন্ত গণপিটুনি দিয়ে মুসলিম খুনে অভিযুক্তদের গলায় মালা পরানোয় সমালোচনা করতেও ছাড়েননি তিনি। ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে ফের বিজেপির টিকিটে লড়তে নেমে অবশ্য জয়ন্ত বলেছিলেন, বাবার আশীর্বাদ তাঁর সঙ্গে রয়েছে।
তিন বছর পরে বাবা কি ছেলের ভোট পাবেন? না কি পিতাকে মৌখিক শুভেচ্ছা জানিয়ে তাঁরই বিরুদ্ধে ভোট দেবেন পুত্র?
বাবার নাম বিরোধী শিবিরের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা হয়ে যাওয়ার পরে জয়ন্ত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হাজারিবাগের ইউনিভার্সিটি ল’ কলেজে ‘ভারতীয় রাজনীতিতে সাংবিধানিক মূল্য’ বিষয়ে বক্তৃতা করেছেন। ম্যাককিনসে অ্যান্ড কোম্পানির প্রাক্তন কর্তার মাথায় কি তখন পারিবারিক মূল্য নিয়ে প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিল!
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy