Advertisement
০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
world bank

World Bank: যুক্তি নেই স্কুল বন্ধ রাখার, মত বিশ্ব ব্যাঙ্ক কর্তার

শিক্ষা ক্ষেত্রে কোভিডের প্রভাবের উপরে নজরদারির কাজ করছে সাভেদ্রার টিম।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০২২ ০৭:২৮
Share: Save:

রেস্তরাঁ খোলা, পানশালা খোলা, সিনেমা হল খোলা, মেলা-উৎসবেও ঘাটতি নেই। অথচ স্কুল বন্ধ। করোনা পরিস্থিতিতে ঠিক এমনই সিদ্ধান্ত নিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ-সহ বিভিন্ন রাজ্য। তা নিয়ে বিতর্ক যেমন বেধেছে, তেমনই ক্যাম্পাস খোলার দাবিতে পথেও নেমেছেন ছাত্রছাত্রীরা। এ বার বিশ্ব ব্যাঙ্কের শিক্ষা সংক্রান্ত গ্লোবাল ডিরেক্টর হামি সাভেদ্রা সাফ জানিয়ে দিলেন, অতিমারিতে স্কুল বন্ধ রাখার কোনও যৌক্তিকতা নেই। যদি সংক্রমণের নতুন ঢেউ আসেও, সে ক্ষেত্রে স্কুল বন্ধ করাটা হতে পারে সর্বশেষ পদক্ষেপ।

শিক্ষা ক্ষেত্রে কোভিডের প্রভাবের উপরে নজরদারির কাজ করছে সাভেদ্রার টিম। তাঁর বক্তব্য, বর্তমান পরিস্থিতিতে স্কুলে যাওয়া নিরাপদ নয় এবং স্কুল খোলার ফলে করোনা সংক্রমণ বেড়েছে, এমন বলার মতো কোনও প্রমাণ নেই। ছোটদের প্রত্যেকের টিকাকরণ সম্পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত স্কুল বন্ধ রাখারও কোনও বৈজ্ঞানিক যুক্তি নেই। ওয়াশিংটন থেকে সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সাভেদ্রা বলেন, ‘‘স্কুল খোলা এবং করোনাভাইরাস ছড়ানোর মধ্যে কোনও সম্পর্ক নেই। এমন কোনও প্রমাণ নেই, যাতে এই দু’টোকে জোড়া যায়। রেস্তরাঁ, বার, শপিং মল খুলে রেখে স্কুল বন্ধ রাখার কোনও মানে হয় না। এ ক্ষেত্রে কোনও অজুহাতই খাটে না।’’

বিশ্ব ব্যাঙ্কের বিভিন্ন সমীক্ষাভিত্তিক মডেল বলছে, স্কুল খোলা থাকলে ছোটদের ক্ষতির আশঙ্কা নিতান্তই কম। বরং স্কুল বন্ধ থাকায় পড়াশোনার যে ক্ষতি হচ্ছে, তা অপরিসীম। সাভেদ্রার কথায়, ‘‘২০২০ সালে আমরা জানতাম না, কী ভাবে এই অতিমারির সঙ্গে লড়তে হবে। অধিকাংশ দেশের প্রথম প্রতিক্রিয়াটা ছিল স্কুল বন্ধ করে দেওয়া। তার পর একের পর এক ঢেউ এসেছে-গিয়েছে, ২০২০-র শেষ ভাগ এবং ২০২১-এর পরিস্থিতি থেকে কিছু প্রমাণও হাতে এসেছে। কিছু দেশ স্কুল খুলে দিয়েছে। সংক্রমণের বিভিন্ন ঢেউ চলাকালীন তো অনেক দেশে তো স্কুল বন্ধই ছিল। কাজেই তথ্য বলছে, সংক্রমণ ছড়ানোর ক্ষেত্রে স্কুলের কোনও প্রভাব নেই।’’ বিশ্ব ব্যাঙ্ক কর্তার মতে, ওমিক্রনের দাপটে ছোটদের মধ্যে সংক্রমণ বেড়েছে ঠিকই। কিন্তু সংক্রমিত হলেও শিশুদের গুরুতর অসুস্থ হওয়া বা মারা যাওয়ার ঘটনা অত্যন্ত বিরল। এমন কোনও দেশ নেই, যারা ছোটদের টিকাকরণ সম্পূর্ণ হওয়ার শর্তসাপেক্ষে স্কুল খুলবে বলেছে। কারণ এটা কোনও বৈজ্ঞানিক বা বাস্তবসম্মত পথ নয়।

সাভেদ্রার মতে, ছোটদের ঝুঁকি কম হলেও স্কুল বন্ধ থাকার ফলে অনেক বেশি খেসারত তাদেরই দিতে হচ্ছে। বিশেষত ভারতে অতিমারির জেরে স্কুল বন্ধ থাকার প্রভাব যতটা হবে বলে আঁচ করা গিয়েছিল, বাস্তবে হয়েছে তার চেয়ে বেশি। শিক্ষার দারিদ্রও এমন ভাবে বেড়েছে, যা ভাবা যায়নি। প্রসঙ্গত, দশ বছর বয়স হওয়া সত্ত্বেও শিশুরা সহজ কোনও পাঠ্যাংশ পড়তে বা বুঝতে না পারলে তাকে বলা হয় শিক্ষার দারিদ্র। সাভেদ্রার মতে, ভারতে এই শিক্ষার দারিদ্রের হার ৫৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ৭০ শতাংশে পৌঁছনো আশঙ্কা রয়েছে। শিক্ষার ঘাটতির সঙ্গে স্কুলছুটের সংখ্যা বাড়তে থাকাই এর কারণ। একটি গোটা শিক্ষাবর্ষ নষ্ট হতে বসেছে। শিক্ষায় ঘাটতির ফলে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতে রোজগারের সম্ভাবনাও কমে আসছে। প্রসঙ্গত, ২০২০ সালে বিশ্ব ব্যাঙ্কেরই একটি সমীক্ষা-রিপোর্টে বলা হয়েছিল যে, অতিমারির জেরে দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকার ফলে ভারত ৪০ হাজার কোটি ডলারের ভবিষ্যৎ আয় হারাতে পারে।

কোভিড পরিস্থিতিতে অনলাইন ক্লাসের সুবিধা যে প্রত্যন্ত অঞ্চল বা প্রান্তিক পরিবারের ছাত্রছাত্রীদের কাছে পুরোপুরি পৌঁছচ্ছে না, তা নিয়ে এ দেশের বিশিষ্ট জনেরা বহু বারই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। শিক্ষায় অসাম্যের দিকটি আরও প্রকট করে দিয়েছে অতিমারি। সাভেদ্রার কথায়, ‘‘ভারতের মতো দেশ, যেখানে শিক্ষাক্ষেত্রে অসাম্য এবং দারিদ্রের মতো বিষয়গুলি অতিমারির আগে থেকেই ছিল, সেখানে অনেক কিছুই এখন ঝুঁকির মুখে দাঁড়িয়ে। লক্ষ লক্ষ পড়ুয়ার জন্য স্কুলের দরজা বন্ধ। অনেকে হয়তো আর স্কুলে ফিরবেই না। শিক্ষায় এই যে ক্ষতির মধ্য দিয়ে শিশুরা যাচ্ছে, তা নীতিগত ভাবে মেনে নেওয়া যায় না। শিক্ষায় দারিদ্র যে ভাবে বাড়বে, ভবিষ্যতে একটি প্রজন্ম ও তাদের পরিবারের কল্যাণ থেকে শুরু করে বিশ্বের অর্থনীতিতেও তার সাঙ্ঘাতিক প্রভাব পড়বে।

সাভেদ্রা মনে করেন, শিক্ষার ক্যালেন্ডারের পুনর্বিন্যাসের পাশাপাশি সুসংহত ভাবে পাঠ্যক্রম সাজানো এবং শিক্ষকদের তৈরি করে তোলাটাই এখন ভবিষ্যতের লক্ষ্য হওয়া উচিত। প্রতিটি শিশুর শেখার ক্ষমতা আলাদা। তাই তারা কতটা শিখছে, সেই বিষয়ে নজর রাখতে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় স্তরে মাথাপিছু আরও তথ্য প্রয়োজন। তার জন্য এখনই বিভিন্ন দেশের সরকারকে সক্রিয় হতে হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

world bank School Closed Coronavirus
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE