Advertisement
৩০ অক্টোবর ২০২৪
Women's Reservation Bill

বিল পাশ হলেও মহিলা সংরক্ষণ চালু হতে পারে কত বছর পরে? প্রশ্ন উঠল কেন্দ্রের পদক্ষেপে

২০১০ সালে বিলটি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের সরকার রাজ্যসভায় মহিলা সংরক্ষণ পাশ করলেও মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জানান, সেই বিলের মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে।

Women’s Reservation only by 2029? Union Law Minister Arjun Ram Meghwal introduces bill in Lok Sabha

গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৬:৩৫
Share: Save:

ইউপিএ সরকারের আমলে ২০১০ সালে রাজ্যসভায় পাশ হওয়া বিল নয়, লোকসভা এবং বিভিন্ন রাজ্যের বিধানসভাগুলিতে এক তৃতীয়াংশ আসন মহিলাদের জন্য সংরক্ষণের জন্য পুরোদস্তুর নতুন বিল আনল নরেন্দ্র মোদী সরকার। মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী অর্জুন রাম মেঘওয়াল বিলটি লোকসভায় পেশ করার সময় বৃহত্তম বিরোধী দল কংগ্রেসের নেতা অধীর চৌধুরী জানান, ১৩ বছর আগে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের আমলেই মহিলা বিল সংসদের উচ্চকক্ষে পাশ হয়ে গিয়েছিল। ‘জবাবে’ মোদী সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেন, ‘‘সেই সরকারের আর অস্তিত্ব নেই। বিলটির মেয়াদও শেষ হয়ে গিয়েছে।’’

সংসদ অধিবেশন শুরু হওয়ার আগের দিন রবিবার প্রথামাফিক ডাকা সর্বদল বৈঠকে মহিলা সংরক্ষণ বিল নিয়ে কোনও কথা জানায়নি কেন্দ্র। এমনকি, মঙ্গলবারের আলোচ্যসূচিতেও প্রথমে বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। অধিবেশন শুরুর পরে ‘স্‌প্লিমেন্টরি লিস্ট অফ বিজনেস’-এ ১২৮তম সংবিধান সংশোধনী বিল হিসাবে মহিলা সংরক্ষণের বিলটি পেশ করার কথা জানানো হয়। যদিও বিল পেশের সময় প্রথামাফিক খসড়া প্রতিলিপি সাংসদদের দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। বিল পেশের আগে প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, ‘‘অটলবিহারী বাজপেয়ীর আমলেই মহিলা সংরক্ষণ বিল পেশের চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু সংসদের প্রয়োজনীয় সংখ্যা না থাকায় তা সম্ভব হয়নি। ঈশ্বর সেই পবিত্র কর্তব্য পালনের জন্য আমাকে বেছে নিয়েছেন।’’

প্রকাশিত খবরে দাবি, ২০২৭ সালের আদমসুমারি প্রক্রিয়ার পরেই বিল কার্যকরের কথা বিলের প্রস্তাব রয়েছে । সে ক্ষেত্রে বিল ২০২৯ সালের আগে কার্যকরের সম্ভাবনা ক্ষীণ বলেই ধারণা সংবিধান বিশেষজ্ঞদের একাংশের। কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ মঙ্গলবার বলেন, ‘‘এই বিল মোদী সরকারের নির্বাচনী চমক ছাড়া আর কিছু নয়। কারণ, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে জনসুমারি বা আসন পুনর্বিন্যাস, কোনওটাই হবে না।’’

আইনমন্ত্রীর পেশ করা বিলে বলা হয়েছে, ২০৪৭ সালের মধ্যে অর্থাৎ স্বাধীনতার শতবর্ষের আগে ভারতকে একটি উন্নত দেশে পরিণত করার লক্ষ্য অর্জনের জন্য মহিলাদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে। সেই লক্ষ্যে ১৫ বছরের জন্য মহিলাদের জন্য লোকসভা, রাজ্যসভায় আসন সংরক্ষণের ‘সীমাবদ্ধ অনুশীলন’ চালু হচ্ছে। বিল অনুযায়ী, প্রতিটি নিবার্চনে লোকসভা এবং বিধানসভাগুলির এক তৃতীয়াংশ আসন ‘মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত’ করা হবে। তবে তফসিলি-জাতি-জনজাতির মধ্যে স্থায়ী ভাবে মহিলাদের জন্য কোনও লোকসভা-বিধানসভা আসন চিহ্নিত হবে না। বরং পুরসভা এবং পঞ্চায়েত ভোটের ধাঁচেই প্রতি নির্বাচনে পর্যায়ক্রমে এক তৃতীয়াংশ আসন মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত রাখা হবে। কংগ্রেস-সহ কয়েকটি বিরোধী দল ইতিমধ্যেই বিলের এই বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।

সংসদের ইতিহাস বলছে, প্রবল রাজনৈতিক বিরোধিতার কারণে গত আড়াই দশকেরও বেশি সময় ধরে আটকে রয়েছে মহিলা সংরক্ষণ বিল। ১৯৯৬ সালে সিপিআই সাংসদ গীতা মুখোপাধ্যায় ‘প্রাইভেট মেম্বারস বিল’ হিসাবে মহিলা সংরক্ষণ সংক্রান্ত প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন। পরবর্তী কালে প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর আমলে মহিলাদের জন্য আসন সংরক্ষণে উদ্যোগী হয় কেন্দ্র। কিন্তু সমাজবাদী পার্টি, আরজেডি, জেডিইউ-র মতো দল মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত এক তৃতীয়াংশ আসনের মধ্যেই আলাদা ভাবে তফসিলি জাতি-জনজাতি এবং ওবিসিদের জন্য সংরক্ষণ চালুর দাবি জানায়। সে সময় রাজনৈতিক ঐকমত্যের অভাবে বিল সংসদে পেশ করা যায়নি।

২০০৬ সালে ইউপিএ জমানায় নতুন করে বিল সংসদে পেশ করা হয়। কিন্তু সরকারের সমর্থক এবং বিরোধীদের একাংশের আপত্তির জেরে পাশ করা যায়নি। বস্তুত, ইউপিএ চেয়ারপার্সন সনিয়ার উদ্যোগে ২০১০ সালে বিলটি রাজ্যসভায় পাশের সময়েও সংসদের উচ্চকক্ষ রণক্ষেত্রের চেহারা নিয়েছিল। সূত্রের খবর, শাসক এবং বিরোধী শিবিরের অনেক দলের পাশাপাশি, বিজেপির মধ্যেও এই নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে। কারণ, ৩৩ শতাংশ আসন মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত হলে পরের ভোটে অনেক পুরুষকেই প্রার্থীপদ খোয়াতে হবে। যে কারণে বিজেপির ভূপেন্দ্র যাদবের মতো নেতা কয়েক বছর আগে প্রকাশ্যে বলেছিলেন, ‘‘এই বিল আনার কোনও চিন্তাভাবনা আমাদের দলে নেই।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Womens Reservation Bill Lok Sabha Narendra Modi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE