—প্রতীকী ছবি।
তবে কি বসন্তের কোনও বিকেলে সত্যি হতে চলেছে তাঁর স্বপ্ন?
যে নারী জঠরে ধারণ করেছিল তাঁকে, তিনি এসে দাঁড়াতে চলেছেন তাঁর সামনে?
এ প্রশ্নের জবাব পেতে আরও কয়েক দিন দাঁতে দাঁত চেপে অপেক্ষা করতে হবে প্রিয়াকে। মাঝ-জানুয়ারিতে যিনি আট হাজার কিলোমিটার উজিয়ে কলকাতায় এসে শহরের অলি-গলি তন্ন তন্ন করে খুঁজে জন্মদাত্রীকে না-পেয়ে, চাপা কষ্ট বুকে নিয়ে শহর ছেড়েছিলেন।
সেই জন্মদাত্রীকে খুঁজে পাওয়া গিয়েছে বলে খবর পৌঁছেছে তাঁর কাছে। শহরের আনাচ-কানাচ ঘুরে সেই অসাধ্য সাধন করেছেন প্রিয়ার প্রতিনিধি, আদতে মহারাষ্ট্রের সমাজকর্মী অঞ্জলি পওয়ার।
তিনিই জানিয়েছেন, সব নথিপত্র ও পারিপার্শ্বিক তথ্যপ্রমাণ গিয়ে যে নারীর দরজায় মিশেছে, তাঁর ডিএনএ সংগ্রহ করে পাঠানো হয়েছে সুদূর মার্কিন মুলুকে। সেই সংস্থায় জমা পড়েছে প্রিয়ার ডিএনএ-ও। দু’টি মিলিয়ে দেখা হচ্ছে। মিলে গেলে বার্সেলোনা থেকে প্রিয়া আবার উড়ে আসবেন শহরে। গিয়ে দাঁড়াবেন মায়ের সামনে।
অবশ্য সোনা মুথুলিঙ্গমকেও এ শহর ভোলেনি। সোনা নিজে আসেননি। কিন্তু, দত্তক কন্যা সোনার জন্মদাত্রী মা-কে খুঁজে বার করতে বছর দশেক আগে এ শহর, এ রাজ্য তোলপাড় করে ফেলেছিলেন অঞ্জলি ও তাঁর সঙ্গী অরুণ ডোল। শেষে নদিয়ার এক মহিলার ফেলে আসা ইতিহাসের সঙ্গে মিলে গিয়েছিল বহু তথ্য। সে বারেও তাঁর ডিএনএ পাঠানো হয়েছিল সোনার সঙ্গে মেলাতে। তবে, তা মেলেনি। আজও সোনা বসে আছেন মায়ের অপেক্ষায়।
২৬ বছর আগে এ শহর থেকে সদ্যোজাত প্রিয়াকে দত্তক নিয়ে স্পেনের বার্সেলোনায় চলে যান জেভিয়ার ও কারমেন। সেই কথা প্রিয়া ইরেন ক্যাবালেরো লোপেজ়-কে ছোটবেলাতেই জানিয়ে দেন দত্তক বাবা-মা। বছর দশেক আগে থেকে প্রিয়া শুরু করেন জন্মদাত্রী মায়ের খোঁজ। আগেও এক বার শহরে এসে বিফল হয়ে ফিরতি উড়ান ধরেছেন তিনি।
জানুরায়িতে প্রিয়ার সঙ্গে শহরের গলিপথ ঘোরার সময়ে অঞ্জলি বলেছিলেন, ‘‘অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, বিবাহের আগেই অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়া মায়েদের সন্তান হাতবদল হয়ে হোমে চলে যায়। সেখান থেকে দত্তক বাবা-মায়ের কোলে চেপে বিদেশে। জন্মদাত্রী সেই মা হয়তো আজ সমস্ত ইতিহাস মুছে ফেলে অন্য কোথাও, স্বামী-সন্তানদের নিয়ে সুখে সংসার করছেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তাঁরা আর পরিত্যক্ত সন্তানদের সামনে আসতে চান না।’’
কিন্তু, প্রিয়ার জন্মদাত্রী হিসেবে যে নারীর খোঁজ মিলেছে, তাঁর ইতিহাস কিছুটা হলেও ভিন্ন। শুধু ভিন্ন নয়, মর্মান্তিকও।
মাত্র ১৬ বছরে বাবা-মা বিয়ে দিয়ে দেন। সেই পুরুষ যখন তাঁকে পরিত্যক্ত করে চলে যান, তখন তিনি তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা। বোঝানো হয়েছিল তাঁকে জন্মের পরে সন্তান কাছে থাকলে দ্বিতীয় জীবন আর শুরু করা যাবে না। তাই, মেয়েকে জন্ম দিয়ে অনেকটা বাধ্য হয়েই তাকে হোমে তুলে দিয়েছিলেন তিনি। হোম থেকে সেই মেয়েকে (সম্ভবত তিনিই প্রিয়া) দত্তক নিয়ে চলে যান বিদেশি এক দম্পতি।
এর কিছুকাল পরে ছেড়ে চলে যাওয়া স্বামী আবার ফিরে আসেন এবং দু’জনে ঘর বাঁধেন। ততদিনে প্রথম সন্তান চলে গিয়েছে নাগালের বাইরে। এই সুখও ছিল ক্ষণস্থায়ী। এ বার দ্বিতীয় কন্যার বয়স যখন প্রায় ছ’মাস, তখন পাকাপাকি ভাবে তাঁকে ছেড়ে চলে যান সেই ব্যক্তি।
আর ফেরেননি।
কন্যাকে নিয়ে একা মায়ের লড়াই চলাকালীনই দুই পুত্র সন্তান নিয়ে দ্বিতীয় পুরুষ আসে তাঁদের জীবনে। শুরু হয় পাঁচ জনের সংসার। কিন্তু, সুখ বোধহয় ঘর বাঁধতে চায়নি সেই মায়ের জীবনে। নিজের দ্বিতীয় সন্তান, সেই কন্যা ১৬ বছর বয়সে আত্মহননের পথ বেছে নেন।
অঞ্জলির কথায়, ‘‘এমন এক জীবন যে নারীর, সে যদি এক বারও নিজের প্রথম সন্তানকে চোখের দেখা দেখতে পান, তা হলে তাঁদের ভাষার বিভেদটা গৌণ হয়ে যাবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy