প্রতীকী ছবি।
গেটের ভিতরে সাঁটা ডায়েরি থেকে ছেঁড়া পাতা। ইংরেজিতে বড় বড় অক্ষরে লেখা— ‘ঘরের ভিতরে প্রচুর বিষাক্ত গ্যাস। খুব দাহ্য। ভুলেও দেশলাই জ্বালাবেন না। দয়া করে প্রথমেই সমস্ত জানালা খুলে পাখা চালিয়ে দিন....’। পাশে বন্ধনীর মধ্যে গোটা গোটা অক্ষরে হিন্দিতে ব্যাখ্যা, দাহ্য ব্যাপারটা কী। রাজধানীর অভিজাত কলোনির ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে ঢুকেই স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিল পুলিশ। বিছানায় পাশাপাশি শুয়ে থাকা মা ও তাঁর দুই মেয়ে ততক্ষণে চিরঘুমে। প্রাথমিক তদন্তে মনে করা হচ্ছে, আত্মহত্যা।
শনিবার। রাত্রি ৯টা বাজতে পাঁচ মিনিট বাকি। পড়শিদের ফোনে পুলিশ ছুটেছিল দক্ষিণ দিল্লির বসন্ত বিহারের বসন্ত অ্যাপার্টমেন্টে। একতলার ২০৭ নম্বর ফ্ল্যাটের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ। গৃহসহায়িকা সকাল থেকে রেশন তোলার টাকা চাইতে এসে সাড়া পাচ্ছেন না। ফোনও ধরছে না কেউ। দরজা ভেঙে দেখা যায়, শোয়ার ঘরে পড়ে মঞ্জু শ্রীবাস্তব (৫৬) এবং তাঁর দুই মেয়ের অঙ্কিতা (৩০) ও অংশুতার (২৬) দেহ। পাশে ছোট তিনটি উনুনে জমে ছাই। রান্নাঘরে গ্যাসের সিলিন্ডারের চাবি খোলা। জানালা আর সব ফাঁকফোঁকরে আঠার টেপ দিয়ে সাঁটা প্লাস্টিকের চাদর।
আবাসনটির সভাপতি এম ডেভিড পরে বলছিলেন, ‘‘ঘরটাকে পুরো গ্যাস চেম্বার বানিয়ে ফেলা হয়েছিল!’’ স্থানীয় কাউন্সিলর মনীশ আগরওয়াল পরিবারটির পড়শি। তিনি জানান, গৃহকর্তা উমেশচন্দ্র শ্রীবাস্তব ছিলেন চার্টার্ড অ্যাকউন্ট্যান্ট। কোভিডে মৃত্যু হয় গত বছর এপ্রিলে। আবাসনের একতলায় তাঁদের দু’টি ফ্ল্যাট। একটিতে ভাড়াটে ছিল। খালি হয়েছে সম্প্রতি। অসুস্থ মঞ্জুও ইদানীং শয্যাশায়ী হয়ে পড়েছিলেন। মনে করা হচ্ছে, সব মিলিয়ে দীর্ঘ অবসাদের মধ্যে ছিলেন মা ও দুই মেয়ে।
দিল্লি পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (দক্ষিণ পশ্চিম) মনোজ সি বলেন, ‘‘মনে করা হচ্ছে, দমবন্ধ হয়েই তাঁদের মৃত্যু হয়েছে।’’ পুলিশ সূত্রে খবর, ফ্ল্যাট থেকে মিলেছে আরও ‘সুইসাইড নোট’। সমস্ত দিক থেকে ঘটনাটি খতিয়ে দেখছে পুলিশ। তদন্তে জানা গিয়েছে, আঠার টেপ ও অন্যান্য সরঞ্জাম কেনা হয়েছিল অনলাইনে।
ময়না-তদন্তের রিপোর্টের অপেক্ষায় থাকা পুলিশের সামনে এখন বেশ কিছু প্রশ্ন। উনুন জ্বালিয়ে পোড়া-হাওয়ায় কি ভরে নেওয়া হয়েছিল ঘর? আগুন নিভে গেলে খুলে দেওয়া হয়েছিল গ্যাসের চাবি? তার পরে সাঁটা হয়েছিল নববর্ষে বেসরকারি ব্যাঙ্কের দেওয়া ডায়েরির পাতাটা? যার তারিখ ২০২০ সালের ৫ মে। যাতে লেগে অতিমারির সামনে তটস্থ হয়ে দাঁড়ানো চার জনের পরিবারের অজানা স্মৃতি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy