ভারতে তৈরি প্রতিষেক কিনতে আগ্রহী বহু দেশ। —প্রতীকী চিত্র।
নোভেল করোনার প্রকোপে গোটা বিশ্ব যখন দিশাহারা, সেই সময় হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের জোগান দিয়ে আক্রান্ত দেশগুলির পাশে দাঁড়িয়েছিল ভারত। কোভিড প্রতিরোধী প্রতিষেধক জোগান দেওয়ার ক্ষেত্রেও এ বার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে চলেছে ভারত। প্রতিবেশী দেশগুলি তো বটেই, সুদূর দক্ষিণ আমেরিকা এবং অস্ট্রেলিয়া থেকেও ভারতের কাছে প্রতিষেধক পাঠানোর অনুরোধ আসছে। তাই কোভিডের বিরুদ্ধে বিশ্ব টিকাকরণে ভারত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে চলেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ।
ভারতে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি ‘কোভিশিল্ড’-এর উৎপাদন এবং বিতরণের দায়িত্বে রয়েছে সিরাম ইনস্টিটিউট। এ ছাড়াও ভারত বায়োটেকের তৈরি ‘কোভ্যাক্সিন’ প্রতিষেধকটিকেও জরুরি ভিত্তিতে ছাড়পত্র দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। দিল্লির সঙ্গে সরাসরি চুক্তি অথবা উৎপাদনকারী সংস্থাগুলিকে বরাত দেওয়ার মাধ্যমে ওই দুই প্রতিষেধক কিনতে ইতিমধ্যেই আগ্রহ প্রকাশ করেছে একাধিক দেশ।
এশিয়ার একাধিক মাঝারি অর্থনীতির দেশ আবার গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনস অ্যান্ড ইমিউনাইজেশন (গাভি)-কোভ্যাক্স জোটের আওতায় উৎপাদনকারী দেশ থেকে সরাসরি সদস্য দেশগুলিতে সরবরাহকে প্রাধান্য দেওয়ার পক্ষে। দরিদ্র দেশগুলিতে প্রতিষেধক সরবরাহ এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর লক্ষ্যে ২০০০ সালে ‘গাভি’ গঠিত হয়। কোভিড আবহে ৯২টি দেশ নিয়ে গঠিত হয় গাভি-কোভ্যাক্স।
আরও পড়ুন: দিল্লি-মহারাষ্ট্রেও ধরা পড়ল বার্ড ফ্লু, আক্রান্ত রাজ্যের সংখ্যা বেড়ে হল ৯
করোনার প্রতিষেধক সরবরাহে ভারত উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিতে চলেছে বলে সম্প্রতি ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। প্রবাসী ভারতীয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে সম্প্রতি তিনি বলেন, “এতদিন পিপিই কিট, মাস্ক, ভেন্টিলেটর এবং টেস্টিং কিট সরবরাহ করত ভারত। বর্তমানে আমরা আত্মনির্ভর। দু’টি দেশীয় প্রতিষেধক তৈরি করে এই মুহূর্তে মানবজাতিকে করোনার অভিশাপ থেকে রক্ষা করতে প্রস্তুত আমরা।’’
চিন ও পাকিস্তান বাদে প্রায় সব প্রতিবেশী দেশই ইতিমধ্যে ভারত থেকে প্রতিষেধক কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। সেই তালিকায় রয়েছে, নেপাল ভুটান, শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান বাংলাদেশ, মায়ানমার। এ ছাড়াও সৌদি আরব, মরক্কো, দক্ষিণ আফ্রিকা, ব্রাজিল, অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশও ভারতে তৈরি প্রতিষেধক কিনতে আগ্রহী। প্রতিষেধক সরবরাহের ক্ষেত্রে প্রতিবেশী দেশগুলিকে প্রাধান্য দেওয়া হবে বলে ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র অনুরাগ শ্রীবাস্তব।
এখনও পর্যন্ত পাওয়া হিসেব অনুযায়ী, প্রতিষেধকের ১ কোটি ২০ লক্ষ ডোজ পেতে ইতিমধ্যেই ভারতকে অনুরোধ জানিয়েছে নেপাল। আগামী ১৪ জানুয়ারি ভারতে আসছেন সে দেশের বিদেশমন্ত্রী। প্রতিষেধক চুক্তিতে সিলমোহর নিয়েই দেশে ফিরতে চান তিনি।
আরও পড়ুন: সুপ্রিম কোর্টে কৃষক মামলার শুনানি, আদালতের ভূমিকা নিয়েই প্রশ্ন কৃষকদের
সিরাম ইনস্টিটিউটের কাছে ‘কোভিশিল্ড’-এর ১০ লক্ষ ডোজ কিনতে চেয়ে অনুরোধ জানিয়েছে ভুটান। চিনের পাশাপাশি সিরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গেও প্রতিষেধক কেনার চুক্তি স্বাক্ষর করেছে মায়ানমার। গত বছর নভেম্বরে সিরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে একটি মউ স্বাক্ষর করে বাংলাদেশের বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস। তারা ‘কোভিশিল্ড’-এর ৩ কোটি ডোজের জন্য অনুরোধ জানিয়েছে।
মাঝারি অর্থনীতির দেশগুলির জন্য রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রতিষেধক অভিযানের আওতায় ডোজ কিনতে আগ্রহী শ্রীলঙ্কা। তাদের প্রতিষেধকের জোগান দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। আফগানিস্তান এবং মলদ্বীপের সঙ্গেও প্রতিষেধক সরবরাহ নিয়ে কথা চলছে ভারতের।
ব্রিকস অন্তর্ভুক্ত দেশগুলির মধ্যে ব্রাজিল এবং দক্ষিণ আফ্রিকা ভারতের কাছ থেকে প্রতিষেধক কেনার কথা ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছে। প্রধানমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জাইর বোলসোনারো জানিয়েছেন, তিনি ২০ লক্ষ প্রতিষেধক কিনতে আগ্রহী। বৃহস্পতিবার দক্ষিণ আফ্রিকার স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়, সিরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে ১৫ লক্ষ প্রতিষেধক কিনবে তারা।
এ ছাড়াও জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, ফিলিপিন্স, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম, তাইল্যান্ড এবং সিঙ্গাপুরও ভারতে তৈরি প্রতিষেধক কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy