Advertisement
২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪
Congress

রাহুল-যাত্রা: থাকবে কি তৃণমূল

পশ্চিমবঙ্গে রাহুল গান্ধীর যাত্রায় তৃণমূলের অংশ নেওয়া বা না নেওয়া, দুইয়েরই রাজনৈতিক তাৎপর্য থাকবে। তৃণমূল আগে আসন সমঝোতায় কংগ্রেস আসছে কি না দেখে নিতে চাইছে।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও রাহুল গান্ধী। —ফাইল চিত্র।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও রাহুল গান্ধী। —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৬:২১
Share: Save:


হিন্দি বলয়ের তিন রাজ্যে বিজেপির কাছে হার মানতে হয়েছে। বিরোধী মঞ্চ ‘ইন্ডিয়া’-র আসন সমঝোতা কতটা বাস্তবায়িত হবে, এখনও তা নিয়ে হাজারো প্রশ্ন ঝুলছে। রামমন্দির ঘিরে হিন্দু ভাবাবেগ উস্কে দিতে নরেন্দ্র মোদী আসরে নামছেন।

এই পরিস্থিতিতে লোকসভা নির্বাচনের লড়াইয়ে রাহুল গান্ধী আজ ‘হাতের শেষ তাস’ টেবিলে ফেললেন। আবার ভারত যাত্রা। দক্ষিণ থেকে উত্তরের পরে পূর্ব থেকে পশ্চিমে। কন্যাকুমারী থেকে কাশ্মীর ‘ভারত জোড়ো’ যাত্রার পরে এ বার রাহুল গান্ধী মণিপুর থেকে মুম্বই পর্যন্ত ‘ভারত ন্যায় যাত্রা’ শুরু করতে চলেছেন। রামমন্দির উদ্বোধনের ঠিক এক সপ্তাহ আগে, ১৪ জানুয়ারি যাত্রা শুরু হবে। তবে এই যাত্রা যখন পশ্চিমবঙ্গ দিয়ে যাবে, তখন তৃণমূল কংগ্রেসের মতো ‘ইন্ডিয়া’-র শরিক দল তাতে অংশ নেবে কি না, তা এখনও অস্পষ্ট। তৃণমূলের সঙ্গে কংগ্রেসের পশ্চিমবঙ্গে আসন সমঝোতা হবে কি না, তা এখনও ঠিক হয়নি। তৃণমূল নেতৃত্ব পশ্চিমবঙ্গে রাহুলের ভারত যাত্রায় অংশ নেবেন কি না, তা নিয়েও কংগ্রেস নেতারা আজ কোনও উত্তর দিতে চাননি। তাঁদের বক্তব্য, এখনও খুঁটিনাটি বিষয় ঠিক করা বাকি রয়েছে। আর তৃণমূল সূত্রের বক্তব্য, আগে আসন সমঝোতা হোক। তারপর যাত্রায় যোগ দেওয়া বা না দেওয়ার কথা ভাবা যাবে।

কংগ্রেস নেতা কে সি বেণুগোপাল ও জয়রাম রমেশ আজ দিল্লিতে ঘোষণা করেছেন, ১৪ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়ে রাহুলের ‘ভারত ন্যায় যাত্রা’ শেষ হবে ঠিক লোকসভা নির্বাচনের মুখে, ২০ মার্চ। মণিপুর, নাগাল্যান্ড, মেঘালয়, অসম, পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, ছত্তীসগঢ়, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, গুজরাত ও মহারাষ্ট্র—১৪টি রাজ্যের মোট ৮৫টি জেলার মধ্যে দিয়ে ‘ভারত ন্যায় যাত্রা’ যাবে। অসম থেকে উত্তরবঙ্গ দিয়ে ঢুকে ন্যায় যাত্রা যাবে বিহারে। গত বার কন্যাকুমারী থেকে কাশ্মীর পুরোটাই পায়ে হেঁটেছিলেন রাহুল গান্ধী। এ বার অবশ্য মূল বাসযাত্রা। তার সঙ্গে পদযাত্রাও থাকবে। গতবারের যাত্রার দৈর্ঘ্য ছিল ৪,৫০০ কিলোমিটার। এ বার যাত্রা চলবে ৬,২০০ কিলোমিটার।

পশ্চিমবঙ্গে রাহুল গান্ধীর যাত্রায় তৃণমূলের অংশ নেওয়া বা না নেওয়া, দুইয়েরই রাজনৈতিক তাৎপর্য থাকবে। তৃণমূল আগে আসন সমঝোতায় কংগ্রেস আসছে কি না দেখে নিতে চাইছে। কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের আসন সমঝোতা হোক বা না হোক, তৃণমূল রাহুল গান্ধীর যাত্রায় শামিল না হলে 'ইন্ডিয়া' র ঐক্যের জন্যও ভুল বার্তা যাবে। কংগ্রেস সূত্রের খবর, এ বিষয়ে তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে বার্তালাপ হবে। উত্তরপ্রদেশের ক্ষেত্রে সমাজবাদী পার্টির অংশগ্রহণ নিয়েও কথা বলা হবে। কংগ্রেসের সাংগঠনিক সম্পাদক কে সি বেণুগোপালের বক্তব্য, 'ইন্ডিয়া'-র শরিক দলগুলির অংশগ্রহণ নিয়ে আলোচনা চলছে। কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র জয়রাম রমেশ বলেন, গত বার 'ভারত জোড়ো যাত্রা'তেও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতানেত্রীরা অংশ নিয়েছিলেন।

কংগ্রেস নেতাদের বক্তব্য, মণিপুরের ইম্ফল থেকে যাত্রা শুরু করার সিদ্ধান্ত তাৎপর্যপূর্ণ। হিংসা জর্জরিত মণিপুরের মানুষের ক্ষতে প্রলেপ দেওয়ার কাজ করবেন রাহুল। আর প্রধানমন্ত্রী যে মণিপুরের হিংসার পরও এ যাবৎ, ৬ মাসের ও বেশি সময় সেখানে যাওয়ার সময় পাননি, তা তুলে ধরবে কংগ্রেস। গত বারের 'ভারত জোড়ো যাত্রা'উত্তরপ্রদেশের সামান্য অংশ ছুঁয়ে গিয়েছিল। এ বার যাত্রারঅনেক খানি অংশ উত্তরপ্রদেশের মধ্যে দিয়ে যাবে।

কেন এ বার 'ভারত জোড়ো যাত্রা'র নাম বদলে 'ভারত ন্যায় যাত্রা' রাখা হল? জয়রাম রমেশের ব্যাখ্যা, কন্যাকুমারী থেকে কাশ্মীর পর্যন্ত 'ভারত জোড়ো যাত্রা'য় রাহুল গান্ধী তিনটি বিষয় তুলে ধরেছিলেন। অর্থনৈতিক অসাম্য, সামাজিক মেরুকরণ এবং রাজনৈতিক স্বৈরাচার। এ সব নিয়ে রাহুল আমজনতার সমস্যার কথা শুনেছিলেন। এ বার 'ভারত ন্যায় যাত্রা’ ভারতের অর্থনৈতিক ন্যায়, সামাজিক ন্যায় ও রাজনৈতিক ন্যায়ের জন্য। এর উদ্দেশ্য গণতন্ত্রকে রক্ষা করা, সংবিধানের সুরক্ষা ও মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব নিয়ে সমস্যায় জর্জরিত কোটি কোটি মানুষকে ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ভারসা জোগানো। কংগ্রেসের তরফে রাহুল গান্ধী মানুষকে আশ্বাস দেবেন যে আর্থিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক ন্যায় পাইয়ে দিতে কংগ্রেস দায়বদ্ধ।

কংগ্রেসের এই ঘোষণার পরে বিজেপি নেতারা কটাক্ষ করেছেন, রাহুল গান্ধী যে কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচি নিতেই পারেন। কিন্তু তাঁর ভাবনাকে মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে। বিজেপির মুখপাত্রনলিন কোহলির বক্তব্য, নরেন্দ্র মোদী সরকার দেশের ৮০ কোটি মানুষকে বিনামূল্যে রেশন পাইয়ে দিচ্ছে। সেটাই আসল ন্যায়। কংগ্রেস ন্যায়ের মতো নতুন নতুন শব্দ ব্যবহার করে মানুষকে বোকা বানাতে পারবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Congress Rahul Gandhi TMC Mamata Banerjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE