বিপর্যস্ত ওয়েনাড়। — ফাইল চিত্র।
এমনিতে বুনো দাঁতালেরা মানুষ জনকে এড়িয়ে চলে। কখনও মানুষকে দেখলে আগ্রাসীও হয়ে ওঠে। কেরলের ওয়েনাড়ে সেই ভয়ঙ্কর রাতে এক বুনো দাঁতালেরই অন্য রূপ দেখেছিলেন সুজাতা এবং তাঁর পরিবার। বিপর্যয়ের মধ্যে রাতভর তাঁদের আগলে রেখেছিল বুনো দাঁতাল।
ওয়েনাড়ের চূড়ালমালায় ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে উদ্ধারকাজ চতুর্থ দিনে পড়েছে। এখন পর্যন্ত অন্তত ৩০০ জনের দেহ উদ্ধার হয়েছে। ২১৫ জনের খোঁজ মেলেনি। গত মঙ্গল বার রাতের কথা মনে এলে এখনও আতঙ্কিত হয়ে উঠছেন সুজাতা। ধসের কারণে ঘরবাড়ি হারিয়েছেন তিনি। এখন পরিবারের সঙ্গে মেপ্পাড়ি সরকারি উচ্চমাধ্যমিক স্কুলের ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন। এখনও চোখ বন্ধ করলেই সব ভেসে উঠছে। সুজাতার কথায়, ‘‘সমুদ্রের মতো জলস্রোত। গাছগুলি ভেসে চলেছিল। ঘরের বাইরে তাকিয়ে দেখি, প্রতিবেশীদের দোতলা বাড়িটা ভেঙে পড়ছে, আমাদের বাড়ির উপর। নিমেষে আমাদের বাড়িটাই ধসে গেল। আমি কোনও মতে ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে বেরিয়ে গেলাম। শুনি নাতনি মৃদুলা কাঁদছে। ওকে টেনেহিঁচড়ে ধ্বংসস্তূপে বার করে আনি। তার কাপড়ে জড়িয়ে সাঁতার কাটতে শুরু করি।’’
সুজাতা জানান, কাছের একটি বাড়িতে ছিলেন তাঁর পুত্র জিগীশ, পুত্রবধূ সুজিতা এবং নাতি সুরজ। সকলে মিলে জল পেরিয়ে একটি কফি বাগিচায় গিয়ে ওঠেন। চারদিকে তখন অন্ধকার। ওই বাগিচায় এসে দাঁড়ায় একটি দাঁতাল। তার থেকে কিছু দূরে দাঁড়িয়ে ছিল আরও দু’টি দাঁতাল। দেখে ভেঙে পড়েন সুজাতা। সেই রাতে মনে হয়, প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে যদি বা বেঁচেছেন, এ বার আর রেহাই মিলবে না। দাঁতালের সামনে গিয়ে হাতজোড় করেন তিনি। কিন্তু তাকে দেখে অবাকই হন সুজাতা। দেখেন, দু’চোখ বেয়ে জল ঝরছে হাতিটির। এশিয়ানেট নিউজকে সুজাতা বলেন, ‘‘ভোর পর্যন্ত ওই দাঁতাল স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। আমরা ওর পায়ের কাছে বসে রইলাম।’’ সুজাতার কথায়, ‘‘ওই রাতে ওই দাঁতালই ছিল আমার ঈশ্বর।’’ পরের দিন সকালে সুজাতাদের উদ্ধার করে শিবিরে নিয়ে যাওয়া হয়। সুজাতা এবং তাঁর নাতনি মৃদুলা এখন শিবিরে রয়েছেন। পুত্র, পুত্রবধূ, নাতি হাসপাতালে ভর্তি বলে জানিয়েছে একটি সংবাদমাধ্যম।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy