প্রায় দু’হাজার কিলোমিটার দূরে বাড়িতে বসে স্বামীর ফেরার অপেক্ষা আর করতে পারছেন না। আজ, রবিবার স্বামীর কর্মস্থল পঞ্জাবের পঠানকোটে যাবেন বলে জানিয়েছেন রজনী সাউ। রজনী পাকিস্তান রেঞ্জার্সের হাতে বন্দি বিএসএফ জওয়ান পূর্ণমকুমার সাউয়ের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী।
রিষড়ার বাড়িতে ছেলেকে পাশে বসিয়ে শনিবার রজনী বলেন, ‘‘স্বামীর খবর নেই। আর অপেক্ষা করতে পারছি না। কালই পঠানকোট রওনা হব। সেখানে কাজ না হলে, দিল্লি যাব। ছেলে, বৃদ্ধ শ্বশুর-শাশুড়িকে কী জবাব দেব! কারও কাছে সাহায্য পাচ্ছি না। মনে হচ্ছে, স্বামীর জন্য নিজেকেই লড়তে হবে।’’ রজনী মনে করছেন, পূর্ণমের ছাড়া না পাওয়ার পিছনে পহেলগামে জঙ্গি হামলার জেরে উদ্ভূত পরিস্থিতির প্রভাব রয়েছে। রবিবার সন্ধ্যায় হাওড়া থেকে অমৃতসরগামী ট্রেনের টিকিটও কেটেছেন রজনীরা।
যদিও আসন রাত পর্যন্ত নিশ্চিত হয়নি।
এ দিনও অবশ্য বিএসএফের তরফে সাউ পরিবারকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, পূর্ণমকে মুক্ত করার সব চেষ্টাই চলছে। রজনী জানান, শনিবার সকালে বিএসএফের দফতরে ফোন করে আধিকারিকের সঙ্গে কথা বলতে চান তিনি। কিছু ক্ষণ পরেএক আধিকারিক তাঁকে জানান, তাঁদের তরফে পূর্ণমকে মুক্ত করার প্রক্রিয়া চলছে। তাঁরা চাইলে, পঠানকোটে যেতে পারেন।
পঠানকোটের ফিরোজপুরে সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর ২৪ নম্বর ব্যাটালিয়নের কনস্টেবল পদে কর্মরত পূর্ণম। এ দিন বিএসএফের ডিজি দলজিৎ চৌধরির সঙ্গে ফোনে কথা বলেন শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানান, ওই বিএসএফ কর্তা তাঁকে জানিয়েছেন, পূর্ণম নিরাপদে এবং সুস্থ আছেন। তাঁকে ফেরানোর চেষ্টা চলছে। সন্ধ্যায় পূর্ণমের বাড়িতে গিয়ে তাঁর বাবা ভোলানাথ সাউয়ের সঙ্গে বিএসএফের ডিজির কথা বলান সাংসদ। তিনি বলেন, ‘‘পরিবারটি পঞ্জাব যেতে চায়। টিকিটের সমস্যা রয়েছে। সে ব্যবস্থা করছি।’’ এ দিন ওই বাড়িতে যান আইএসএফ বিধায়ক নওসাদ সিদ্দিকী।
বুধবার দুপুরে ভুল করে পাকিস্তানের পঞ্জাব প্রদেশে ঢুকে একটি গাছের তলায় বিশ্রাম নেওয়ার সময় সে দেশের রেঞ্জার্সপূর্ণমকে বন্দি করে। তাঁকে দ্রুত ফেরানোর দাবিতে রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মুখ্যসচিব মনোজ পন্থের কাছে চিঠি লিখে আর্জি জানিয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার।
হুগলির রিষড়ার সুশীলাচন্দ্র আওয়ান রোডে পূর্ণমদের বাড়িতে এ দিনও খোঁজ নেন পড়শিরা। পূর্ণমের মা দেবন্তী কাঁদতে কাঁদতেই ছেলেকে ফেরাতে আর্জি জানান। পূর্ণমের ছেলে তৃতীয় শ্রেণির পড়ুয়া। সে স্কুলে যাচ্ছে না। পূর্ণমের বাবা বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ—সকলের কাছে অনুরোধ, ছেলেকে ফেরানোর ব্যবস্থা করুন।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)