Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Kozhikode

নামার সময় কেন বেশি ছিল বিমানের গতিবেগ

গতি কেন এতটা বেড়ে গেল? বিশেষজ্ঞরা এখানে দু’টি সম্ভাব্য কারণের কথা বলছেন।

মুম্বইয়ে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শেষকৃত্য ক্যাপ্টেন শাঠের। হাজির তাঁর স্ত্রী ও ছেলে। ছবি: পিটিআই।

মুম্বইয়ে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শেষকৃত্য ক্যাপ্টেন শাঠের। হাজির তাঁর স্ত্রী ও ছেলে। ছবি: পিটিআই।

সুনন্দ ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০২০ ০৫:১৫
Share: Save:

রানওয়েতে নামার সময়ে বিমানের গতিবেগ থাকার কথা ছিল ঘণ্টায় ২৫০ থেকে ২৬০ কিলোমিটার।অথচ তা ছিল ৩০০ কিলোমিটারের বেশি।

কেরলের কোঝিকোড়ে এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের বিমান দুর্ঘটনার তদন্তে নেমে কিছু তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে এমনই মনে করছেন তদন্তকারীরা। যদিও তদন্তের দায়িত্বে থাকা এয়ারক্র্যাফ্ট অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিশন ব্যুরো (এএআইবি) এখনও ডিজিটাল ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার ডি-কোড করতে পারেনি। নামার মুখে বিমানের গতিবেগ সংক্রান্ত নির্দিষ্ট তথ্য সেখান থেকেই পাওয়ার কথা। তবুও প্রাথমিক তদন্তে গত শুক্রবার কোঝিকোড় বিমানবন্দরে নামার মুখে বিমানের আনুমানিক গতিবেগ সম্পর্কে কিছু তথ্য জানা গিয়েছে।

অভিজ্ঞ পাইলটদের কথায়, নিয়ম অনুযায়ী রানওয়েতে নামার সময়ে বিমানের গতি থাকার কথা ঘণ্টায় ১৪০ নটিক্যাল মাইল বা প্রায় ২৫৯ কিলোমিটার। অনেক সময়ে পরিস্থিতির চাপে সেই গতি আরও ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার বেড়ে যায়। কিন্তু, এ ক্ষেত্রে প্রায় ৩১৫ কিলোমিটার গতিতে বিমান নেমে এসেছিল বলে মনে করা হচ্ছে।

গতি কেন এতটা বেড়ে গেল? বিশেষজ্ঞরা এখানে দু’টি সম্ভাব্য কারণের কথা বলছেন। এক, বিমানের মুখ্য পাইলট ক্যাপ্টেন দীপক বসন্ত শাঠে রানওয়ের পূর্ব প্রান্ত থেকে নামতে না পেরে নিজে যখন সিদ্ধান্ত নিয়ে পশ্চিম প্রান্ত থেকে নামতে যান, তখন ধরে নিতে হবে তিনি সে দিকে বিপরীতমুখী হাওয়া পাবেন বলে ভেবেছিলেন। কিন্তু, কার্যত শেষ মুহূর্তে হাওয়ার গতি বদলে যায় এবং অনুকুল হাওয়া বিমানকে পিছন থেকে ধাক্কা মারতে শুরু করে। এতে বিমানের গতি যতটা কমানোর প্রয়োজন ছিল, ততটা কমাতে পারেননি পাইলট।

দুই, সমুদ্র তীরবর্তী পাহাড়ি এলাকায়, বৃষ্টির মধ্যে হাওয়ার খামখেয়ালিপনা সর্বজনবিদিত। অনেক সময় হাওয়া নীচ থেকে উপরের দিকেও ঠেলে ওঠে। একে বিমান পরিবহণের ভাষায় ‘আপড্রাফ্ট’ বলে। ক্যাপ্টেন শাঠে যখন পশ্চিম প্রান্ত থেকে নামা শুরু করেন, তখন এক সময়ে এই হাওয়ার উর্ধ্বমুখী ধাক্কা বিমানের উচ্চতা বাড়িয়ে দেয়। ওই উচ্চতা থেকে বেঁধে দেওয়া গতিতে রানওয়ের কাঙ্ক্ষিত জায়গায় নামা সম্ভব ছিল না পাইলটের। তাই, মনে করা হচ্ছে তিনি রানওয়ের টাচডাউন জোন-এর ভিতরে নামার জন্য বাধ্য হয়ে গতিবেগ বাড়িয়েছিলেন। পরে তা কমানো সম্ভব হয়নি।

এক বিশেষজ্ঞের কথায়, ‘‘বার বার বলা হচ্ছে রানওয়েতে নাকি রবার জমে ছিল যা বিমানের চাকা থেকে খসে গিয়ে জমে। কিছু সময় অন্তর অন্তর তা পরিষ্কার করা হয়। যাতে নামার পরে বিমানের ব্রেক ভাল ভাবে ধরে। জুলাই মাসেই কোঝিকোড়ের রানওয়েতে সেই রবার জমার অভিযোগ উঠেছিল। যদি ধরে নেওয়া হয় কোঝিকোড় বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ সেই রবার পরিষ্কার করেছিল, তা হলেও সেই সংক্রান্ত নোটাম (নোটিস টু এয়ারমেন) কোথায়? আর নোটাম না থাকলে দুবাই থেকে ওড়ার আগে পাইলট যখন জানতেন কোঝিকোড়ের আবহাওয়া ভাল নয়, তা হলে তিনি কেন ১৮৪ জন যাত্রী নিয়ে এলেন?’’ তিনি জানিয়েছেন, বিমানে একজন যাত্রীর গড় ওজন ধরা হয় ৭৫ কিলোগ্রাম। সঙ্গে ১৫ কিলোগ্রাম মালপত্র এবং ৭ কিলোগ্রামের হাত ব্যাগ। সব মিলিয়ে ৯৭ কিলোগ্রাম। ১৮৪ জন যাত্রীর মোট ওজন সেখানে প্রায় ১৭৮৪৮ কিলোগ্রাম বা ১৭ টনের মতো। বোয়িং ৭৩৭-৮০০ বিমানের ওজন ৪২ টন। সঙ্গে আরও ২ টন জ্বালানি। সব মিলিয়ে ৬১ টন ওজন। এ ক্ষেত্রে জ্বালানি ও বিমানের ওজন কমানো সম্ভব নয়। প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে যাত্রী কমিয়ে এল না কেন বিমান?

উত্তর খুঁজছেন তদন্তকারীরা। আর কোঝিকোড়ে চলতি বর্ষার মরসুমে চওড়া বিমানের চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে ডিজিসিএ।

অন্য বিষয়গুলি:

Kozhikode Air India
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy