মোগল সম্রাট ঔরঙ্গজ়েব নন। বরং ‘আইকন’ বা নায়ক হিসেবে তাঁর বড় ভাই দারা শিকোকে দেখা উচিত বলে আজ মন্তব্য করলেন আরএসএসের সহকার্যবাহ দত্তাত্রেয় হোসবোলে। তাঁর কথায়, “ঔরঙ্গজ়েবের নীতি কোনও ভাবেই ভারতীয় সংস্কৃতির সঙ্গে খাপ খায় না। এ দেশের প্রেক্ষিতে বরং দারা শিকোর গ্রহণযোগ্যতা অনেক বেশি।” দু’দিন আগে বর্তমান সময়ে ঔরঙ্গজ়েব বিতর্ক অর্থহীন বলে মন্তব্য করেছিলেন আরএসএস নেতৃত্ব। আজ ঔরঙ্গজ়েব প্রশ্নে বিরোধ ঠিক কোথায়, তা স্পষ্ট করলেন আরএসএসের ওই শীর্ষ নেতা।
আজ ছিল বেঙ্গালুরুতে আরএসএসের অখিল ভারতীয় প্রতিনিধি সভার তিন দিনের বৈঠকের শেষ দিন। বৈঠকের শেষে সাংবাদিক সম্মেলনে সম্প্রতি নাগপুরে ঔরঙ্গজ়েবের সমাধিকে ঘিরে হওয়া বিতর্ক নিয়ে প্রশ্ন করা হলে হোসবোলে ভারতীয় সংস্কৃতির বিরোধী ঐতিহাসিক চরিত্রকে আইকন বানানো নিয়ে পাল্টা প্রশ্ন তোলেন। তাঁর কথায়, “যারা গঙ্গা-যমুনি সংস্কৃতির দোহাই দেন, তাঁদের কাছে প্রশ্ন— কেন দারা শিকোর মতো চরিত্রকে তুলে ধরার পক্ষে সওয়াল করা হয়নি? যাঁরা ভারতীয় সংস্কৃতির পক্ষে সওয়াল করতেন আর যাঁরা সেই সংস্কৃতির বিরুদ্ধাচরণ করতেন— আমাদের কাদের তুলে ধরা উচিত, তা নিয়ে ভাবা দরকার? আমার মতে, যাঁরা এ দেশের সংস্কৃতি, মাটি ও পরম্পরাকে শ্রদ্ধা করেন, তাঁদের নায়ক বানানো উচিত। ঔরঙ্গজ়েব কোনও ভাবেই ওই তালিকায় আসেন না। কিন্তু দারা শিকো অবশ্যই পড়েন। ধর্ম ও জাত এখানে বিষয়ই নয়। ভগিনী নিবেদিতা খ্রিস্টান হলেও এ দেশের সংস্কৃতিকে আপন করেছিলেন। তাই তিনি শ্রদ্ধেয়।”
নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় আসার পরে ২০১৫ সালে দিল্লির ঔরঙ্গজ়েব রোডের নাম পরিবর্তন করে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এ পি জে আব্দুল কালাম রোড রাখা হয়।। হোসবোলের কথায়, “কিছু কারণ তো অবশ্যই ছিল, যে কারণে ওই নামকরণ করা হয়েছিল।” ব্রিটিশদের মতো যারা মোগলদের মতো বিদেশি বহিরাগতদের বিরুদ্ধেও অস্ত্র ধরেছিলেন, তাঁরা সকলেই স্বাধীনতা সংগ্রামী বলে ব্যাখ্যা করেছেন হোসবোলে। তাঁর কথায়, “রানা প্রতাপ সেই কারণে স্বাধীনতা সংগ্রামী।” আরএসএসের মতে, আজকের দিনে দাঁড়িয়ে যারা মোগল তথা বিদেশি আগ্রাসনকারীদের নায়ক বানিয়ে তাদের পক্ষে সওয়াল করেন, তাঁরা সকলেই দেশবিরোধী মানসিকতার। সেই সব মানসিকতার লোকের বিরুদ্ধে প্রয়োজন লড়াই চালিয়ে যাওয়া।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)