২০২১ সালে তিনটি ঘূর্ণিঝড় এসেছিল। সেগুলি হল ‘তকতাই’, ‘ইয়াস’ এবং ‘গুলাব’। প্রতীকী ছবি।
বিশ্বের বিপর্যয়বহুল যে দেশগুলি রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম ভারত। খরা, বন্যা, ভূমিকম্প, ভূমিধসের মতো একাধিক প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের বার বার সাক্ষী থেকে ভারত। ঘূর্ণিঝড়ের হাত থেকেই রেহাই পায়নি এই দেশ। ঘূর্ণিঝড় সবচেয়ে বেশি সৃষ্টি হয় বঙ্গোপসাগরে। তুলনায় আরবসাগরে অনেকটাই কম। যদি অনুপাতের হিসাবে দেখা হয়, তা হলে বঙ্গোপসাগর এবং আরবসাগরে ঘূর্ণিঝড়ের অনুপাত হবে ৪:১।
কেন পূর্ব উপকূলেই বেশি ঘূর্ণিঝড় হয়?
আবহবিদরা জানিয়েছেন, বঙ্গোপসাগর জলোচ্ছ্বাস অন্যান্য সাগরের তুলনায় বেশি। এই সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস সবচেয়ে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে বঙ্গোপসাগরের অবতল আকৃতির কারণে। এটি তুলনায় অগভীর এবং অবতল আকারের উপসাগর। ফলে ঝড়-ঝঞ্ঝা এই সাগরে বেশি। এ ছাড়াও আরও কিছু কারণ আছে। যেমন, সমুদ্রের উপরিতল বা সারফেসের তাপমাত্রা। বঙ্গোপসাগর খুবই উষ্ণ এক সাগর। তাই এটি পরিস্থিতিকে আরও বিপজ্জনক করে তোলে।
দেশের মধ্যে যে ১২টি জেলা ঘূর্ণিঝড়প্রবণ সেগুলি হল— অন্ধ্রপ্রদেশের নেল্লোর, পূর্ব গোদাবরী এবং কৃষ্ণা। পুদুচেরির ইয়ানাম। ওড়িশার বালেশ্বর, ভদ্রক, কেন্দ্রাপাড়া এবং জগজিৎসিংহপুর। পশ্চিমবঙ্গের উত্তর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা, কলকাতা এবং মেদিনীপুর।
একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ভারতের পূর্ব এবং পশ্চিম উপকূলে ১৮৯১ সাল থেকে ১৯৯০ সালের মধ্যে মোট ২৯৫টি ঘূর্ণিঝড় হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে প্রায় ২৬২টি ঘূর্ণিঝড় হয়েছে দেশের পূর্ব উপকূলে এবং পশ্চিম উপকূল সাক্ষী থেকেছে ৩৩টি ঘূর্ণিঝড়ের। দেশে যতগুলি ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়েছে, তার মধ্যে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ছিল ৯টি। আবার ১৯৭০ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে মোট ১৯টি ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়েছিল ভারতের পূর্ব এবং পশ্চিম উপকূলে। ২০২৩ সালে নতুন ঘূর্ণিঝড় মোকার সৃষ্টি হয়েছে। যদিও সেটি বাংলাদেশের কক্সবাজার এবং মায়ানমারের মধ্যে আছড়ে পড়তে পারে বলে জানিয়েছে মৌসম ভবন।
ঘূর্ণিঝড় সাধারণত মে-জুন এবং অক্টোবর-নভেম্বরে সৃষ্টি হয়। আবহবিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, দেশের পশ্চিম উপকূলের তুলনায় পূর্ব উপকূল অনেক বেশি ঘূর্ণিঝড় প্রবণ। ভারতীয় উপমহাদেশের সঙ্গে উপকূলরেখা রয়েছে ৭,৫১৬ কিলোমিটার। ফলে বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঘূর্ণিঝড় প্রবণ এই অঞ্চল। দেশের ১৩টি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল রয়েছে যেগুলির ৮৪টি জেলা সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হয় ঘূর্ণিঝড়ে। পূর্ব উপকূলের চারটি রাজ্য— অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ু, ওড়িশা পশ্চিমবঙ্গ এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল পুদুচেরি দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঘূর্ণিঝড় প্রবণ। ১৮৯১-২০০০ সালের মধ্যে পূর্ব উপকূলে মোট ৩০৮টি ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়েছে। তার মধ্যে ১০৩ ছিল প্রবল ঘূর্ণিঝড়। এই সময়ের মধ্যে পশ্চিম উপকূলে আছড়ে পড়েছিল ৪৮টি ঘূর্ণিঝড়। তার মধ্যে ২৪টি ছিল প্রবল ঘূর্ণিঝড়।
১৯৯০ সালের ৯ মে অন্ধ্রপ্রদেশে আছড়ে পড়েছিল ক্যাটেগরি ৩ পর্যায়ের ঘূর্ণিঝড়। সেই ঝড়ে মৃত্যু হয়েছিল ৯৬৭ জনের। ১৯৯৯ সালের ২৯ অক্টোবর ওড়িশায় আছড়ে পড়েছিল অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড়। কয়েক হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘বিওবি ০৩’ আছড়ে পড়েছিল পশ্চিমবঙ্গে। এই ঝড়ে মৃত্যু হয়েছিল ১৭৩ জনের। ২০০৮ সালে ‘নিশা’ আছড়ে পড়েছিল তামিলনাড়ুর কাড্ডালুরে। মৃত্যু হয়েছিল ২০০ জনের।
২০০৯ সালে ঘূর্ণিঝড় ‘ফায়ান’-এর প্রভাব পড়েছিল তামিলনাড়ু, মহারাষ্ট্র এবং গুজরাতে। এই ঝড়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। ২০১২ সালে তামিলনাড়ুর মমল্লপুরমে আছড়ে পড়েছিল ‘নীলম’। মৃত্যু হয়েছিল ৭৫ জনের। ২০১৩ সালে ঘূর্ণিঝড় ‘ফাইলিন’-এর কারণে মৃত্যু হয় ৪৫ জনের। ২০১৪-তে অন্ধ্রপ্রদেশ এবং ওড়িশায় তাণ্ডব চালায় ‘হুদহুদ’। ১২৪ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
২০১৬ সালে ঘূর্ণিঝড় ‘বর্ধা’ক প্রভাবে মৃত্যু হয় ৩৮ জনের। ২০১৭ সালে ‘ওখি’ তাণ্ডব চালায় কেরল, তামিলনাড়ু এবং গুজরাতে। মৃত্যু হয় ২৪৫ জনের। ২০১৮-তে অন্ধ্রপ্রদেশের পালাসায় আছড়ে পড়ে ‘তিতলি’। প্রভাব পড়েছিল ওড়িশাতেও। ৭৭ জনের মৃত্যু হয়েছিল। ২০১৯ সালে অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ আছড়ে পড়ে ওড়িশায়। মৃত্যু হয় ৪০ জনের। ওই বছরেই আরও একটি ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ আছড়ে পড়েছিল পশ্চিমবঙ্গের সাগর দ্বীপে। ২০২০ সালে সুপার সাইক্লোন ‘আমপান’ পশ্চিমবঙ্গের বকখালিতে আছড়ে পড়ে। ওড়িশা এবং বাংলাদেশেও ব্যাপক ক্ষতি হয় এই ঝড়ে।
২০২১ সালে তিনটি ঘূর্ণিঝড় এসেছিল। সেগুলি হল ‘তকতাই’, ‘ইয়াস’ এবং ‘গুলাব’।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy