ফাইল চিত্র
বিপদের সময়ে ভারতে তৈরি কোভিশিল্ড প্রতিষেধক দিয়ে ঘর সামলেছিল ব্রিটেন। এখন সেই অক্সফোর্ড ও পুণের সিরাম সংস্থার যৌথ উদ্যোগে তৈরি কোভিশিল্ডকে স্বীকৃত প্রতিষেধকের মান্যতা দিতে নারাজ বরিস জনসনের সরকার। ব্রিটেনে প্রবেশের নতুন নিয়মে শর্ত রাখা হয়েছে— ভারতে যাঁরা কোভিশিল্ড পেয়েছেন, তাঁদের ওই দেশে পৌঁছনোর পর দশ দিন বাধ্যতামূলক ভাবে বিচ্ছিন্নবাসে যেতে হবে। এ ক্ষেত্রে ওই ব্যক্তিদের টিকাকরণ হয়নি বলেই ধরে নেবে ব্রিটেন। এ নিয়ে অস্বস্তিতে পড়ে ব্রিটেন সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে ক্ষোভ জানিয়েছে কেন্দ্র। ব্রিটেন বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছে।
বিদেশ থেকে আসা ব্যক্তিদের ব্রিটেনে প্রবেশের প্রশ্নে সম্প্রতি নিয়মে পরিবর্তন করা হয়েছে। ৪ অক্টোবর থেকে চালু হবে ওই নিয়ম। বলা হয়েছে, আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলি ছাড়াও ভারত, তুরস্ক, জর্ডন, তাইল্যান্ড, রাশিয়ায় প্রতিষেধক নিয়েছেন যাঁরা, তাদের টিকাকরণ হয়নি বলেই ধরে নেওয়া হবে। ব্রিটেনে এলেই ওই দেশগুলির নাগরিকদের দশ দিনের জন্য বিচ্ছিন্নবাসে থাকতে হবে। তবে যে বিদেশি নাগরিকেরা অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজ়েনেকা, ফাইজ়ার-বায়োএন্টেক, মডার্নার দুটি ডোজ় বা জনসনের একটি টিকা নিয়েছেন, তাঁদের ব্রিটেনে প্রবেশের ক্ষেত্রে সমস্যা নেই। এ ছাড়া, যাঁরা আমেরিকা, ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোনও দেশে টিকা নিয়েছেন বা অস্ট্রেলিয়া, বার্বাডোজ়, কানাডা, ইজ়রায়েল, জাপান, কুয়েত, কাতার, সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশে প্রতিষেধকের ডোজ় সম্পূর্ণ করেছেন বাধা নেই তাদেরও। কিন্তু কোভিশিল্ড— ৮০ কোটির ভারতবাসীর মধ্যে অন্তত ৭৫ শতাংশকে যে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে, সেই প্রতিষেধককে মান্যতা দিতে নারাজ ব্রিটেন।
ব্রিটেনে ছাড়পত্র পাওয়া অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজ়েনেকা সংস্থার তৈরি প্রতিষেধকের শুধুমাত্র উৎপাদনের দায়িত্বে রয়েছে পুণের সিরাম সংস্থা। ফলে যে প্রতিষেধক একবার ব্রিটেনে ছাড়পত্র পেয়েছে অন্য দেশে সেই প্রতিষেধক সম্পর্কে ব্রিটেনের অবস্থান ভারতের বিভিন্ন স্তরে ক্ষোভ বাড়িয়েছে। কংগ্রেস সাংসদ জয়রাম রমেশ মনে করছেন, এ সব বর্ণবৈষম্যমূলক মনোভাবের পরিচয়। ক্ষুব্ধ সিরাম সংস্থার কর্ণধার আদার পুনাওয়ালা। তাঁর কথায়, ‘‘সকলেই জানে দুই প্রতিষেধক অভিন্ন (অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজ়েনেকা ও কোভিশিল্ড)। যা প্রমাণিতও। কোভিশিল্ডকে জরুরি ভিত্তিতে ছাড়পত্র দেওয়ার জন্য গবেষণা সংক্রান্ত সব তথ্য ব্রিটেনের মেডিসিন অ্যান্ড হেলথ কেয়ার প্রোডাক্টস রেগুলেটরি অথরিটির কাছে জমা দেওয়া রয়েছে। সংস্থা তা খতিয়ে দেখছে।’’ পুনাওয়ালার মতে, ছাড়পত্রের প্রশ্নে দেশগুলির উচিত একটি রেগুলেটরি অথরিটি, পরীক্ষামূলক প্রয়োগের ক্ষেত্রে একই নিয়ম ও প্রতিষেধকে ছাড়পত্র দেওয়ার প্রশ্নে একই ধরনের শর্ত রাখা। তাহলে ওই সমস্যা হত না বলেই মত স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের।
সমালোচনা শুরু হয়েছে জনসন সরকারের মনোভাব নিয়ে। গত মার্চ মাসে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে ব্রিটেন যখন বেসমাল অবস্থায়, সে দেশে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজ়েনেকার প্রতিষেধকের ঘাটতি দেখা দিয়েছে, তখন কুড়ি লক্ষ কোভিশিল্ড দিয়ে তাদের সাহায্য করেছিল সিরাম। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, সে সময়ে ব্রিটেনের যে টিকার প্রয়োজন ছিল, আজ তা ব্রাত্য হয় কী ভাবে? প্রশ্নের মুখে পড়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকারের টিকা নীতিও। দেশের অধিকাংশ মানুষ যে টিকা নিয়েছেন, তা এখনও বিদেশে ছাড়পত্র পায়নি। সেই দায় কার— তা নিয়ে সরব হয়েছে কংগ্রেস।
অ্যাস্ট্রাজ়েনেকা ভ্যাকসিনটি ‘ভ্যাক্সজ়েভরিয়া’ নামে ইউরেপীয় ইউনিয়নের মেডিসিন রেগুলেটর সংস্থার স্বীকৃতি পেয়েছে। একই ফর্মুলা হলেও আলাদা দেশে তৈরি বলে অ্যাস্ট্রাজ়েনেকাকে স্বীকৃতির জন্য আলাদা নামে আবেদন করতে হবে। যা এখনও পর্যন্ত করা হয়নি। ভারতীয় হাই কমিশন সূত্রে জানানো হয়েছে, কী ভাবে ছাড়পত্র পাওয়া যায়, তা দেখছে তারা। ব্রিটিশ সরকারও বলছে, কোভিশিল্ডকে ব্রিটেনের মেডিসিন অ্যান্ড হেলথ কেয়ার প্রোডাক্টস রেগুলেটরি অথরিটির স্বীকৃতি বা ইউরোপীয়ান মেডিসিনস এজেন্সির ছাড়পত্র পেতে হবে। এর কোনওটিই নেই কোভিশিল্ডের। তাই কোভিশিল্ডকে স্বীকৃত প্রতিষেধকের মর্যাদা দেয়নি ব্রিটেন। সূত্রের মতে, ব্রিটেনের সিদ্ধান্ত জানার পরেই জনসন সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে তদ্বির করতে সক্রিয় হয়েছেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। সাউথ ব্লকের আশা, ৪ অক্টোবরের আগেই কোনও ইতিবাচক পদক্ষেপ করবে ব্রিটেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy