ভোট দিতে লাইন। ইন্দোরের এক বুথে। শুক্রবার। ছবি: রয়টার্স।
বিধানসভা: হোসেঙ্গাবাদ।
স্থান: নর্মদাপুরমের শেঠানিঘাটের শর্মা পরিবারের হাভেলি।
আজ ভোট। সকাল-সকাল প্রাতরাশ করেই বাড়ির সেজ ও ছোট বউ বেরিয়ে পড়েছেন ভোট দিতে। একজনের সমর্থন বিজেপির দিকে, অন্য জনের পছন্দ কংগ্রেস। হবে না-ই বা কেন! বাড়ির ছোট ছেলে সীতাশরণ যেখানে হোসেঙ্গাবাদ কেন্দ্রের বিজেপির প্রার্থী, তখন সেজ ছেলে গিরিজাশঙ্কর ওই কেন্দ্রেই দাঁড়িয়েছেন কংগ্রেসের হয়ে। ফলে শর্মা পরিবারের হাঁড়ি অভিন্ন হলেও বিভক্ত হয়ে পড়েছে রাজনৈতিক সমর্থন।
হোসেঙ্গাবাদ বিধানসভার পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে নর্মদা নদী। যে কারণে ভোটের আগে হিন্দু ভোটের আবেগকে মাথায় রেখে মধ্যপ্রদেশের বিজেপি সরকার হোসেঙ্গাবাদের নতুন নামকরণ করেছে নর্মদাপুরম। প্রচলিত যে, নর্মদার হর কঙ্করে যেমন শঙ্করের উপস্থিতি, তেমনি হোসেঙ্গাবাদের রাজনীতিতে শর্মা পরিবার। তা সে বিজেপি হোক বা কংগ্রেস। গত দু’দশকের বেশি সময় ধরে শেঠানিঘাটের শর্মা পরিবারের কোনও না কোনও ভাই বিধায়ক হয়ে ওই কেন্দ্রে জিতে এসেছেন। ভোট এলেই এক দল ছেড়ে অন্য দলে গিয়েছেন ভাইয়েরা। দল পাল্টালেও ক্ষমতার রাশ তাই রয়ে গিয়েছে শর্মা পরিবারের চৌহদ্দির ভিতরেই। এ যাত্রাতেও যাতে তার ব্যতিক্রম না হয়, তার জন্য সতর্ক শর্মা পরিবার। ছোট ভাই সীতাশরণের বিজেপির টিকিট পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বুঝেই গত সেপ্টেম্বরে দলবল নিয়ে বিজেপি ছেড়ে কংগ্রেসে যোগ দিয়েছিলেন সেজ ভাই গিরিজাশঙ্কর। যিনি ২০০৩ ও ২০০৮ সালে বিজেপির টিকিটে ওই কেন্দ্রে প্রার্থী হয়ে জিতেছিলেন। এ বারে তাঁর দাবি ছিল, ভাইকে যদি বিজেপি প্রার্থী করে, সে ক্ষেত্রে তিনি কংগ্রেসের প্রার্থী হবেন না। কিন্তু ঘটনাচক্রে ওই কেন্দ্র থেকে বিজেপির আগেই তাঁকে প্রার্থী হিসাবে ঘোষণা করে দেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। পরে ছোট ভাই সীতাশরণকে প্রার্থী হিসাবে ঘোষণা করে বিজেপি। ফলে ২০০৮ সালের পরে ফের একবার মুখোমুখি টক্করে দু’ভাই। অন্য কেন্দ্রগুলিতে যখন যুযুধান প্রার্থীরা নিজেদের মধ্যে ঘৃণাভাষণের অভিযোগ তুলে নির্বাচন কমিশনে যাচ্ছেন, তখন সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম হোসেঙ্গাবাদ।
ভোটের আগে দল পাল্টে পাল্টে শর্মা পরিবারের এই ক্ষমতা ধরে রাখার প্রবণতা নিয়ে তীব্র অসন্তোষ রয়েছে স্থানীয়দের মধ্যে। শিক্ষিত শর্মা পরিবার জনপ্রতিনিধি হওয়ায় এলাকায় খুন-জখম বা রাজাহানি প্রায় হয় না ঠিকই, কিন্তু সরকারি-বেসরকারি ঠেকার সব কাজ ভাগ হয়ে যায় পরিবারের কাছের লোকেদের মধ্যে। ক্ষমতার হস্তান্তর না হওয়ায় হতাশা দু’দলের কর্মীরাও। নর্মদাপুরম পলিটেকনিক স্কুলের সামনেই শীতপোশাক বিক্রিতে ব্যস্ত ছিলেন বিনোদ সোনকিয়া। বললেন, ‘‘প্রায় দু’দশকের বেশি সময় ধরে এক মুখ। ছোট থেকে বড় হয়ে উঠলাম, কিন্তু শর্মা পরিবার এখনও এলাকায় শেষ কথা। সব জায়গায় পরিবর্তন হয়। এখানেও পরিবর্তন প্রয়োজন।’’
পরিবর্তন যে প্রয়োজন, তা ঘরোয়া ভাবে মানছেন স্থানীয় কংগ্রেস কর্মীরা। ভোটের মাস দু’য়েক আগে যোগ দিয়ে যে ভাবে গিরিজাশঙ্কর টিকিট পেয়েছেন, তাতে ক্ষুব্ধ তাঁরা। অন্য দিকে বিজেপির টিকিট পাওয়ার জন্য প্রবল ভাবে সক্রিয় ছিলেন দলের কর্মী ভগবতী চৌরে। কিন্তু জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া-ঘনিষ্ঠ চৌরেকে টিকিট না দিয়ে সীতাশরণের মতো বর্ষীয়ান নেতার উপরেই ভরসা করেছে বিজেপি। ফলে নির্দল প্রার্থী হয়ে দাঁড়িয়েছেন চৌরে। স্থানীয়দের মতে, যার পিছনে তলে তলে মদত রয়েছে সিন্ধিয়া পরিবারের মুখিয়ার। স্থানীয় বিজেপি ও সঙ্ঘ পরিবারের একাংশের পাশাপাশি চৌরে সমর্থন পাচ্ছেন বিক্ষুব্ধ কংগ্রেস কর্মীদেরও। অটোচালক কৃষ্ণ চেতক বা গৃহবধু নির্মলা বাগ্গার মতে, ‘‘চৌরে যে ভাবে স্থানীয় সমর্থন পাচ্ছেন, তাতে অঘটন ঘটা অসম্ভব নয়।’’
চৌরে সমর্থকেরা যখন অঘটনের আশায় বুক বাঁধছেন, তখন শর্মা পরিবার দিনভর ব্যস্ত রইলেন হাভেলির ক্ষমতা ধরে রাখতে। আজ সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত মধ্যপ্রদেশে ভোট পড়েছে ৭১.৬৪%। পাঁচ বছর আগে ভোট পড়েছিল ৭৫.০৫%। কমিশন সূত্রে জানানো হয়েছে, সব কেন্দ্র থেকে চূড়ান্ত ফল এলে ভোটদানের হার আরও কিছুটা বাড়বে। আজ সকাল-সকাল নিজের কেন্দ্র বুধনি এলাকার একটি গ্রামীণ মন্দিরে প্রণাম করে স্ত্রী সাধনা ও দুই ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে ভোট দেন মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহান। কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রী মুখ কমল নাথও ছেলে এবং পুত্রবধূকে সঙ্গে নিয়ে সকালেই ভোট দিয়ে বাকি রাজ্যে নির্বাচন কেমন হচ্ছে, সেই পর্যবেক্ষণে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। দিনের শেষে মধ্যপ্রদেশের ২৩০টি বিধানসভায় ২৫৩৩ প্রার্থীর ভাগ্য আপাতত ইভিএম-বন্দি। সকাল থেকেই বিভিন্ন বুথে মহিলা ভোটারদের উপস্থিতি ছিল দেখার মতো। মধ্যপ্রদেশ বিজেপির রাজ্য সভাপতি বিডি শর্মার দাবি, ‘‘লাডলি-বেহেন যোজনা খেলা ঘুরিয়ে দিয়েছে। মহিলাদের হাতে অর্থ যাওয়ায় বিজেপির পক্ষে ইতিবাচক ভোট পড়েছে।’’ পাল্টা কংগ্রেসের কটাক্ষ, ‘‘পাঁচ বছরে রাজ্যের নারীরা যে নির্যাতন-বঞ্চনা ও অত্যাচারের শিকার হয়েছেন, তার হিসাব আজ সুদেমূলে তুলে নিয়েছেন মহিলারা।’’
কে ঠিক কে ভুল, কমল চিহ্ন না কমল নাথ— কাকে বাছল মধ্যপ্রদেশ, তা জানা যাবে ৩ ডিসেম্বর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy