এই ক্ষমতার পট পরিবর্তনে কোথায় গেলেন ‘মহাকৌশলী’ প্রশান্ত কিশোর (পিকে)?
বিহারে এনডিএ থেকে মহাজোট (মহাগঠবন্ধন) ক্ষমতায় এল। রাতারাতি ক্ষমতার পালাবদল। বিজেপির হাত ছেড়ে কংগ্রেস এবং আরজেডির হাত ধরলেন নীতীশ কুমার। বুধবার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে আবার শপথও নেবেন তিনি। কিন্তু এই ক্ষমতার পট পরিবর্তনে কোথায় গেলেন ‘মহাকৌশলী’ প্রশান্ত কিশোর (পিকে)? যিনি ঘোষণা করেছিলেন সারা বিহার জুড়ে ‘জনসূরয যাত্রা’ করবেন এবং বিহারের রাজনীতিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেবেন, এই রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সময় তাঁকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না কেন?
অসমর্থিত সূত্রের খবর, পিকে রয়েছেন পটনাতেই। কিন্তু সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তন এবং তজ্জনিত কোলাহল থেকে অনেক দূরে। বস্তুত, পিকের বিরোধী শিবিরের লোকজন বলতে শুরু করেছেন, রাজনৈতিক কৌশল খাটিয়ে ‘মহাকৌশলী’-কে পুরো প্রক্রিয়া থেকেই দূরে রেখে দিয়েছেন নীতীশ, তেজস্বী যাদবেরা। কিন্তু পটনায় পট পরিবর্তনের ফলে পিকের নিজের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক পরিকল্পনায় খানিকটা বদল আনার বিষয়ে ভাবনাচিন্তা হচ্ছে বলেও একটি সূত্রের দাবি। পিকের ঘনিষ্ঠ সূত্রের খবর, আগামী ১৫ অগস্ট পর্যন্ত তাঁর রাজনৈতিক কর্মসূচি বাতিল করা হয়েছে। আপাতত পরিস্থিতির উপর নজর রাখতে চাইছে পিকে শিবির। যদিও আনুষ্ঠানিক ভাবে তা জানানো বা স্বীকার করা হচ্ছে না। তবে ২ অক্টোবর, গাঁধীজয়ন্তীর দিন থেকে তাঁর ‘জনসূরয যাত্রা’ শুরুর পরিকল্পনা এখনও বহালই রয়েছে।
বিহারের ঘটনাপ্রবাহ এবং সে বিষয়ে তাঁর ভূমিকা সম্পর্কে পিকের বক্তব্য জানার জন্য তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছিল আনন্দবাজার অনলাইন। কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি।
প্রসঙ্গত, জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়ায় ব্যক্তিগত সফর সেরে দেশে ফেরেন পিকে। তার পরেই তিনি যান পটনায়। সেখান থেকে তাঁর যাওয়ার কথা ছিল সিওয়ানে। প্রস্তাবিত যাত্রার প্রস্তুতি নেওয়ার কর্মসূচিতে। পিকের ঘনিষ্ঠ সূত্রের খবর, সোমবার তিনি সিওয়ানে পৌঁছেছিলেন। কিন্তু ঘটনাচক্রে, সেদিনই পটনায় রাজনীতির জল গড়াতে শুরু করেছে। ফলে পিকে দ্রুত আবার পটনায় ফিরে আসেন। মঙ্গলবার যখন পটনা পট পরিবর্তন নিয়ে উত্তপ্ত এবং উদ্বেল, তখন পিকে বিহারের রাজধানী শহরেই ছিলেন। কিন্তু ঘটনাস্থল থেকে অনেক দূরে।
অনেকেই ভেবেছিলেন, পিকে এ ক্ষেত্রেও নীতীশের পরামর্শদাতার ভূমিকায় কাজ করেছেন। কিন্তু ঘটনাপ্রবাহ বলছে, তা নয়। কারণ, এখন জনতা দল ইউনাইটেডে নীতীশের অত্যন্ত ‘আস্থাভাজন’ হলেন লোকসভা সাংসদ লল্লন সিংহ। ৬৭ বছরের এই প্রৌঢ়ের সঙ্গে পিকের ‘সমীকরণ’ খারাপ বললেও নাকি কম বলা হয়। তাই আপাতত নীতীশও পিকে-কে ডাকতে পারছেন না। অন্যদিকে, গোয়া বিধানসভা ভোটের পর কংগ্রেসের সঙ্গেও পিকের দূরত্ব বেড়েছে। রাহুল গাঁধী পিকের খুব বড় সমর্থক, এমন নয়। আবার সনিয়া গাঁধী এবং প্রিয়াঙ্কা গাঁধী বডরার সঙ্গেও দীর্ঘদিন পিকের কোনও যোগাযোগ নেই।
ফলে ঘটনাচক্রে, দেখা গিয়েছে ‘মহাকৌশলী’ পিকে-কে ছাড়াই সমস্ত বিরোধীদল (নীতীশ, লালু প্রসাদের আরজেডি এবং কংগ্রেস) এককাট্টা হয়ে বিহারে বিজেপিকে প্যাঁচে ফেলেছে এবং রাজনৈতিক পালাবদল করে ফেলেছে। পিকের বিরোধী শিবিরের দাবি, তিনি চেয়েছিলেন ‘জনসূরয যাত্রা’ করে বিহারে নিজস্ব প্রভাব বিস্তার করতে এবং ২০২৫ সালে বিহারের বিধানসভা ভোটে মুখ্যমন্ত্রী হতে। কারণ, তাঁর ‘বিশ্বাসভাজন’-দের কথায়, নীতীশ বা তেজস্বী— ক্ষমতালিপ্সা বা দুর্নীতির মতো প্রশ্নে কেউই বিহারের মুখ্যমন্ত্রিত্বের পক্ষে উপযুক্ত নন।
কিন্তু গত দু’তিন দিনের ঘটনাপ্রবাহ বলছে, সাম্প্রতিক এই পালাবদলে পিকের সে ভাবে কোনও ভূমিকা রইল না। এই পরিস্থিতিতে তাঁর ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক পরিকল্পনায় কোনও বদল আসে কি না, তা নিয়েও কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে গত বিধানসভা ভোটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সফল ভাবে বিজেপিকে রুখে দেওয়ার পিছনে পিকের সক্রিয় পরামর্শ ছিল। সেই সাফল্যের উপর ভিত্তি করেই পশ্চিম ভারতের গোয়ায় বিধানসভা ভোটে লড়তে গিয়েছিল তৃণমূল। সেখানে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট গড়েনি তারা।
গোয়ার ভোটে বিজেপির সাফল্য এবং তৃণমূলের বিপর্যয়ের পর পিকে-কে খুব একটা জাতীয় স্তরে ‘সক্রিয়’ দেখা যায়নি। এক বারই তিনি কংগ্রেসের শীর্ষনেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। কিন্তু সেই বৈঠকও ফলপ্রসূ হয়নি। পিকের বিরোধী শিবিরের দাবি, তার পর থেকেই তিনি আরও একবার ‘সক্রিয়’ রাজনীতিতে পদক্ষেপ করার পরিকল্পনা করেছিলেন। ‘জনসূরয যাত্রা’ তারই অঙ্গ। কিন্তু যে ভাবে তাঁকে গোটা প্রক্রিয়ার বাইরে রেখেই বিহারে বিজেপিকে ক্ষমতাচ্যুত করে বিরোধীরা সরকার পাল্টে নিল, তাতে ‘মহাকৌশলী’র প্রাসঙ্গিকতা খানিকটা হলেও ক্ষুণ্ণ হতে পারে বলে মনে করছে পিকের বিরোধী শিবির।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy