Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Congress

তূণের সব তির ছুড়েও হল না লক্ষ্যভেদ! দিল্লি দখলের যুদ্ধে ‘হাতে’ নতুন কোন অস্ত্র তুলে নেবে কংগ্রেস?

জাতগণনার দাবি তুলে ওবিসি ভোট জয়ের কৌশল কাজ করল না। কংগ্রেসের ‘গ্যারান্টি’ ফল দিল না। পুরনো পেনশন প্রকল্প ফেরানোর নীতি কাজে এল না।

কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে (বাঁ দিকে) এবং রাহুল গান্ধী। —ফাইল ছবি।

কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে (বাঁ দিকে) এবং রাহুল গান্ধী। —ফাইল ছবি।

প্রেমাংশু চৌধুরী
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৬:৫২
Share: Save:

তূণের সব তিরই ছোড়া হয়েছিল। তবু লক্ষ্যভেদ হল না।

জাতগণনার দাবি তুলে ওবিসি ভোট জয়ের কৌশল কাজ করল না। কংগ্রেসের ‘গ্যারান্টি’ ফল দিল না। পুরনো পেনশন প্রকল্প ফেরানোর নীতি কাজে এল না। মোদী-আদানি সম্পর্ক নিয়ে অভিযোগ তুলেও নরেন্দ্র মোদীর ভাবমূর্তিতে ধাক্কা দেওয়া গেল না। বেকারত্ব, মূল্যবৃদ্ধি, ধনী-গরিবের বৈষম্য বিজেপির ভোটে ফাটল ধরাতে পারল না।

তা হলে ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের প্রধান অস্ত্র কী হবে? হিন্দি বলয়ের তিন রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনে হারের পরে কংগ্রেস প্রশ্নের মুখে পড়ে গেল। পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা ভোটের মধ্যে রবিবার চার রাজ্যের ভোটের ফল প্রকাশ হয়েছে। তার মধ্যে কংগ্রেসের একমাত্র স্বস্তির জায়গা তেলঙ্গানা। কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের বিআরএস-কে হারিয়ে কংগ্রেস দক্ষিণের এই রাজ্যে ক্ষমতায় এসেছে। কিন্তু মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ়, রাজস্থানে বিজেপির সঙ্গে মুখোমুখি লড়াইয়ে কংগ্রেস হেরে গিয়েছে।

গত এক বছরে কর্নাটক, হিমাচল প্রদেশে বিজেপিকে হারিয়ে কংগ্রেস কিছুটা স্বস্তি পেয়েছিল। কিন্তু হিন্দি বলয়ের তিন রাজ্যে আবার বিজেপির সঙ্গে মুখোমুখি লড়াইয়ে কংগ্রেস ব্যর্থ হল। অথচ এর মধ্যে রাজস্থান বাদ দিলে মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ়ে জয় নিয়ে কার্যত নিশ্চিত ছিলেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। কিন্তু সেখানেও বিজেপির কাছে কংগ্রেসকে ধরাশায়ী হতে হয়েছে। এই ভোটের পরে বিজেপি গোটা দেশে ১২টি রাজ্যে ক্ষমতায় চলে এল। কংগ্রেস টিকে রইল মাত্র তিনটি রাজ্যে।

কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে তিন রাজ্যে হারকে ‘হতাশাজনক’ বলে মানলেও একে ‘সাময়িক ধাক্কা’ বলে দাবি করেছেন। রাহুল গান্ধী বলেছেন, ‘মতাদর্শের লড়াই’ চলবে। কিন্তু কংগ্রেস শিবিরে প্রশ্ন উঠেছে, তিন রাজ্যে দলের সব অস্ত্র ভোঁতা হয়ে গিয়েছে। এ বার তা হলে লোকসভা ভোটে কংগ্রেসের হাতিয়ার কী হবে?

রাহুল গান্ধী জাতগণনার দাবি তুলে নরেন্দ্র মোদী তথা বিজেপির ওবিসি ভোটব্যাঙ্ককে ধাক্কা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। তাঁর কৌশল ছিল, নীতীশ কুমার, লালুপ্রসাদ, অখিলেশ যাদবদের পাশে নিয়ে ওবিসি-দের ‘আবাদি’ অনুযায়ী ‘হক’-এর দাবি তুললে মোদীর ওবিসি ভোটব্যাঙ্কে ভাঙন ধরানো যাবে। তাতে কাজ হয়নি। বিজেপি নরেন্দ্র মোদীর ওবিসি পরিচিতিতে কাজে লাগিয়ে, সরকারে ও সংসদে ওবিসি-দের বেশি সংখ্যায় মন্ত্রী, সাংসদ হিসেবে তুলে এনে এবং ওবিসি-দের জন্য বিশ্বকর্মা যোজনা ঘোষণা করে ভোটব্যাঙ্ক অক্ষত রেখেছে।

মোদী সরকারের আর্থিক নীতির ফলে মানুষের দুর্দশার অভিযোগ তুলে কংগ্রেস সব রাজ্যে সরকারে এলে নানা সুরাহার নিশ্চয়তা দিয়েছিল। কিন্তু বিজেপি আরও বেশি সুরাহা, খয়রাতি করে ‘মোদী গ্যারান্টি’-র জয়ধ্বনি দিয়েছে। লোকসভা ভোটের আগে সরকারি কর্মচারীদের পুরনো পেনশন প্রকল্প ফেরানো, স্বাস্থ্যের অধিকার আইন, শহরে রোজগার নিশ্চয়তা আইনের প্রতিশ্রুতি দিতে চাইছেন রাহুল গান্ধী। রাজস্থান, ছত্তীসগঢ়ে কংগ্রেসের সরকার ছিল এ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার রসায়নাগার। কিন্তু ভোটের ফল বলছে, তাতে চিঁড়ে ভিজছে না।

২০১৯-এর ভোটে আদিবাসী ভোটব্যাঙ্ক বিজেপির চিন্তার কারণ ছিল। সেখানে কংগ্রেস ভাল ফল করেছিল। তিন হিন্দি বলয়ের রাজ্যের ফল বলছে, বিজেপি দ্রৌপদী মুর্মুকে রাষ্ট্রপতি করে, বীরসা মুন্ডার জন্মদিবসকে জনজাতীয় গৌরব দিবস ঘোষণা করে এবং আদিবাসীদের জন্য সরকারি প্রকল্প ঘোষণা করে আদিবাসী ভোট পেয়েছে। মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, ছত্তীসগঢ়, তেলঙ্গানার ১১৩টি তফসিলি জনজাতি সংরক্ষিত আসনের মধ্যে বিজেপি ৫৮টি জিতে এসেছে। কংগ্রেস পেয়েছে ৪৭টি। রাহুল গান্ধী সব রাজ্যেই প্রচারে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে আদানি গোষ্ঠীকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ তুলেছিলেন। তাতেও মোদীর নিষ্কলুষ ভাবমূর্তিতে ধাক্কা দেওয়া যায়নি।

রাহুল গান্ধীর ঘনিষ্ঠ এক নেতার মতে, ‘‘কর্নাটকে কংগ্রেসের জয়ের পরে হিন্দি বলয়ের তিন রাজ্যের দলের নেতারা ধরে নিয়েছিলেন, এ বারেও তাঁরা বিজেপিকে হারিয়ে জিতে যাবেন। কর্নাটকের সমীকরণ মেনে ভোটে জিতলে নানা নিশ্চয়তার প্রতিশ্রুতি দিলে ভোট মিলবে। উল্টো দিকে, কর্নাটকের হার থেকে শিক্ষা নিয়ে মোদী-শাহ সর্বশক্তি দিয়ে এই তিন রাজ্যে প্রচারে নেমেছিলেন।’’ যদিও কংগ্রেসের নেতাদের একাংশের যুক্তি, তেলঙ্গানায় ১৭টি লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে কংগ্রেস গত বার তিনটি আসন জিতেছিল। ক্ষমতায় আসার পরে আগামী লোকসভা ভোটে কংগ্রেস আরও আসন জিততে পারে। বাকি তিন রাজ্যে হারলেও কংগ্রেসের ভোটব্যাঙ্কে বিশেষ ধাক্কা লাগেনি।

২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের ঠিক আগে ২০১৮-তে কংগ্রেস হিন্দি বলয়ের এই তিনটি রাজ্য—মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, ছত্তীসগঢ়ে জিতে ক্ষমতায় এসেছিল। কিন্তু লোকসভা ভোটে দেখা গিয়েছিল, তিন রাজ্যে মোট ৬৫টি লোকসভা আসনের মধ্যে বিজেপি ৬২-টিই জিতে এসেছিল। আজ মধ্যপ্রদেশ বিধানসভার ২৩০টি, ছত্তীসগঢ়ের ৯০টি এবং রাজস্থানের ২০০টির মধ্যে ৫১৯টি আসনের ফলপ্রকাশ হয়েছে। এই ৫১৯টি আসনের মধ্যে ৩৩৩টি-ই বিজেপির দখলে। দলের নেতারা মনে করছেন, তিন-চার মাসের মধ্যে লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসকে গো-বলয়ের তিন রাজ্যে ভাল ফল করতে হলে বিস্তর পরিশ্রম করতে হবে। এমনিতেই গো-বলয়ের বৃহত্তম রাজ্য উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেসের অস্তিত্বই নেই। তার মধ্যে আবার রামমন্দির ঘিরে আবেগ তৈরি হবে।

কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র জয়রাম রমেশ যুক্তি দিচ্ছেন, ‘‘ঠিক কুড়ি বছর আগে (২০০৩-এ) কংগ্রেস রাজস্থান, ছত্তীসগঢ়, মধ্যপ্রদেশে হেরে গিয়েছিল। কিন্তু কয়েক মাসের মধ্যেই ঘুরে দাঁড়িয়ে কংগ্রেস লোকসভা ভোটে সবথেকে বড় দল হিসেবে উঠে এসে কেন্দ্রে সরকার তৈরি করেছিল।’’ কংগ্রেসের অন্য অনেকে মনে করিয়ে দিচ্ছেন, সে সময়ে উল্টো দিকে নরেন্দ্র মোদী নামক এক ব্যক্তি ছিলেন না!

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy